কর্টিসল হরমোনের তারতম্য হচ্ছে কি না, তা কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন বাবা-মায়েরা? ছবি: ফ্রিপিক।
কর্টিসল হরমোন কেবল যে মন ভাল রাখে, তা-ই নয়, এর কাজ আরও অনেক। চিকিৎসকেরা বলেন, কর্টিসল হল জীবনদায়ী হরমোন। মানুষের শরীরের রক্তচাপ, বিপাক হার, ফ্যাট বা শর্করার মাত্রা ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা স্থির করে দেয় কর্টিসলের ক্ষরণ। শরীরের প্রদাহ নাশ করতেও এর ভূমিকা আছে। কাজেই এই হরমোনের তারতম্য হলে সার্বিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশেও প্রভাব পড়তে পারে।
ছোট বয়স থেকেই যদি কর্টিসলের তারতম্য হতে থাকে, তা হলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে শরীরে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে সমীক্ষায়। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ এই বিষটি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সমীক্ষা চালাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’-এর তথ্য অনুযায়ী, ছোটদের সার্বিক বৃদ্ধি, হাড়ের বৃদ্ধি যাতে ঠিক রাখার জন্য কর্টিসলের মাত্রা যথাযথ হওয়া জরুরি। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ঠিক থাকার জন্যও কর্টিসলের ভূমিকা রয়েছে। এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে অর্থাৎ ‘হাইপারকর্টিসলিজ়ম’ হলে ‘কুশিং’স সিনড্রোম’ হতে পারে শিশুদের, যা একই সঙ্গে বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আবার এর উল্টো হলে অর্থাৎ হরমোনের ক্ষরণ কমে গেলে তখন অ্যাড্রিনালিজ়ম হতে পারে। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে সমস্যা হলে কর্টিসলের ক্ষরণ কমে যায়, সে ক্ষেত্রেও শিশুর বৃদ্ধি, হাড়ের গঠনে জটিলতা আসতে পারে।
কী কী সমস্যা দেখা দেবে?
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ ২৯৫ জন শিশুকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এর মধ্যে ১৬০ জন শিশুর বয়স ৩ বছর ও বাকি ১৩৫ জনের বয়স ৬ বছর ও তার বেশি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, যে সব শিশুর শরীরে কর্টিসলের মাত্রার তারতম্য রয়েছে তাদের উচ্চতা বাড়েনি, হাড়ের গঠনেও জটিলতা রয়েছে। ওই সব শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যও দুর্বল।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ছোট থেকেই যদি নানা কারণে শিশু মানসিক চাপের শিকার হয়, তা হলে তার শরীরে কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এমন হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা যদি খুব বেশি নেশা করেন অথবা ওজন কমানো বা বাড়ানোর জন্য স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খান, তা হলেও গর্ভস্থ শিশুর শরীরে কর্টিসলের মাত্রার তারতম্য হতে পারে।
কর্টিসল হরমোনের তারতম্য হলে শিশুর ওজন খুব কমে যাবে বা হঠাৎ বেড়ে যাবে। পেটের অংশ স্ফীত হতে থাকবে। শিশুর উচ্চতা বাড়বে না, হাড় দুর্বল হবে, রক্তচাপ বেড়ে যাবে। পেশির গঠন ঠিকমতো হবে না, ফলে পেশি দুর্বল হবে। শিশু সব সময়ে ক্লান্তি অনুভব করবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হবে। ছোট থেকেই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে। তা ছাড়া এর প্রভাব পড়বে মানসিক স্বাস্থ্যেও। শিশুর নিজস্ব চিন্তাভাবনা গড়েই উঠবে না, ঘন ঘন মেজাজ বদলে যেতে থাকবে। কম বয়স থেকেই উদ্বেগ, অবসাদ গ্রাস করতে থাকবে।
গোড়া থেকেই চিকিৎসা হলে হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে সিটি স্ক্যান, পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে এমআরআই করে বোঝা সম্ভব সমস্যা কোথায়। চিকিৎসাও হবে সেই অনুযায়ীই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy