গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কিছু কিছু চড় বেশি রা কাটে! এ চড়ও তেমন।
দিন কয়েক আগে অভিনেতা-বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর চড়কাণ্ড তেমনই। প্রথমে চড়, তার পর নিন্দার ঝড়। এর পরে অনুতাপ। ক্ষমা চাওয়া। কাউকে পাশে পাওয়া। কাউকে কাউকে তবু সঙ্গে না পাওয়া। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। তবে ঘটনার পিঠে তো শুধু ঘটনা থাকে না, জন্ম নেয় প্রশ্নও। সোহমের চড়কাণ্ডও প্রশ্নের বাইরে নয়।
এক দিন হঠাৎ কারও উপরে রাগ করে মারধর করার পর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে কি সব দোষ মাফ হয়ে যায়? না কি যাকে চড় মেরেছেন, তাঁর কাছে গিয়ে শুধু ক্ষমা চাইলে হয় সমস্যার সমাধান? এর বাইরেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। তা হল, আদৌ কি ক্ষমা চাওয়া বা না চাওয়ায় কারও কিছু এসে যায়? যে সময়ে একটি ঘটনা ঘটছে, তার পরে জল তো কত দূর গড়িয়ে যায়। সে খেয়াল কি থাকে?
প্রশ্নটি শুধু সোহমের ঘটনায় আবদ্ধ থাকার মতোও নয়। সম্প্রতি উল্টো একটি ঘটনা ঘটেছে অভিনেত্রী ও বিজেপি নেত্রী কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য পুলিশের এক কনস্টেবল চড় মারেন তাঁকে। তার পর দেশ জুড়ে শুরু হয় ধুন্ধুমার। হৃতিক রোশন থেকে আলিয়া ভট্ট, বহু জনেই তাঁর পাশে দাঁড়ান। আবার অস্কারের মঞ্চে যে বার উইল স্মিথ চড় কষান সঞ্চালকের গালে, তখন তাঁকে নিয়ে হইহই হয়। এক দিনে কত বন্ধু যে হারান হলিউড মাতানো উইল! একটি চড় এমনই অনেক কিছু করে। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ তবুও আলাদা।
সোহমের ক্ষেত্রে যেমন প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিষয় হল, সে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে প্রকাশ্যে। সকলের সামনে। কিন্তু যাঁকে সেই চড় মারা হল, তাঁর কাছে কি পৌঁছল সেই বার্তা? সকলের সামনে ক্ষমা চেয়ে নিলেই কি আসলে মুক্তি পাওয়া যায় একটি আকস্মিক ভুলের বাঁধন থেকে? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন যে প্রকারেই হোক ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে। ক্ষমা চাইতে পারার ক্ষমতাকে তিনি সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে হিংসা পাঁচ জনের সামনে ঘটেছিল, তার ক্ষমাও জনসমক্ষে হওয়াকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চাইব। মানুষের সংশোধনেরও একটা পরিসর সব সময়ে থাকা দরকার। ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চাইলে শুধু যে ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে, তাঁকেই জানান দেওয়া হয়। জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে একটা জনদায়বদ্ধতারও পরিসর থেকে যায়। সেখানে সামনাসামনি ক্ষমা চাওয়া না হয়ে থাকলেও জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার এই উচ্চারণের গুরুত্বকে খণ্ডন করছি না।’’
তবে কে কখন কার সামনে ক্ষমা চাইছেন, তা নিয়েও নানা জনের প্রশ্ন আছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই আগে দেবের কথা মনে পড়ে সমাজতত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায়ের। তিনি মনে করেন, ‘‘অনেককে যেমন পাশে পেয়েছেন সোহম, তেমন আবার দেব তাঁকে ঘুরিয়ে নিন্দাই করেছেন। ক্ষমা চাওয়াও আসলে তেমনই। কে কী ভাবে একটা কথা বলছেন, তার উপর অনেকটা নির্ভর করে।’’ প্রশান্তবাবুর মতে, অনেক সময়ে যাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া হল, তিনি হয়তো ক্ষমা করেও দেন, কিন্তু যিনি চাইছেন, তিনি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না। অথবা আশপাশের মানুষজনও পারেন না তাঁকে ক্ষমা করতে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। সে ক্ষেত্রে ক্ষমা কী ভাবে চাওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছাই।
ক্ষমা চাওয়া না চাওয়ার উপরে যে হেতু আগামীর অনেক কিছু নির্ভর করে, ফলে সেই বিষয়টিতেই যে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তার ভঙ্গিতে নয়, সে কথা আবারও ঘুরেফিরে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন তবু থেকে যাচ্ছে, ক্ষমা করা বা না করা নিয়ে। যাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া হল, তাঁর কণ্ঠস্বর কবে শোনা যাবে? নানা ভাবে সে প্রশ্ন ঘুরেই চলেছে বাতাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy