তেল-ঝাল-মশলা দেওয়া খাবারের পাশাপাশি ডায়েট চার্টে নিয়ন্ত্রিত পদের তালিকায় ঠাঁই হয় মাখনের। কারণ এর উপকারিতার পাশাপাশি অন্য দিকটি নিয়ে ভয়ও আছে। তবে শরীরে কম-বেশি সব উপাদানেরই প্রয়োজন থাকে। তাই মাখনেরও চাহিদা রয়েছে। ওজন বেশি হোক বা যথাযথ... মাখনের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। মাখনের স্বাস্থ্যকর পরিপূরক হিসেবে অনেকেই বেছে নেন মার্জারিন। তবে ফ্যাট ও ক্যালরির নিরিখে মাখন, মার্জারিনের তফাত উনিশ-বিশ। ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘মাখনের বদলে বেশি পরিমাণে মার্জারিন খেলে আখেরে লাভ কিছু হবে না।’’ তা হলে মাখন ও মার্জারিনের নির্বাচন কী ভাবে করবেন? কোন উপাদান শরীরের জন্য কতটা জরুরি?
গোড়ার কথা
মাখন দুগ্ধজাত খাবার। মার্জারিন তৈরি হয় ভেজিটেবল অয়েল থেকে। মাখনে থাকে ৮০ শতাংশ ফ্যাট, ১৬-১৮ শতাংশ জল এবং ২ শতাংশ নুন। ফ্যাটের পরিমাণ মার্জারিনেও কমবেশি একই থাকে। তবে মাখনের তুলনায় মার্জারিনে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকটাই কম। মাখনের তুলনায় স্যাচুরেটেড ফ্যাটও কম থাকে মার্জারিনে।
মাখনের উপকারিতা
মাখন থেকে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং উৎকৃষ্ট মানের ম্যাঙ্গানিজ়, জ়িঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়োডিন পাওয়া যায়। ভিটামিন ও খনিজের জন্যই এর পুষ্টিগুণ বাড়ে।
•ভিটামিন এ: দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখার জন্য এই ভিটামিনের গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত, শিশুদের ডায়েটে এই ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার থাকতেই হবে।
•ভিটামিন ডি: হাড়ের গঠন ও জোর বাড়াতে এর চাহিদা রয়েছে।
•ভিটামিন ই: ত্বক ও চুলের পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মাখনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
•ভিটামিন কে: রক্ততঞ্চনে সহায়ক।
মাখনের স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ে ভয় থাকে। তবে এর উপকারিতা বিবিধ। কোষের মেমব্রেন মজবুত করতে, লিভারের কার্যকারিতা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে, হাড়ের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এর গুরুত্ব রয়েছে।
ক্ষতিকর দিক ও সচেতনতা
এইচডিএল (গুড) ও এলডিএল (ব্যাড) দু’ধরনের কোলেস্টেরলের পরিমাণই শরীরে বাড়িয়ে দেয় মাখন। তাই হার্টের অসুখ, ডায়াবিটিস, হাই কোলেস্টেরল, ওবেসিটিতে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিরা মাখন খাবেন চিকিৎসকের পরামর্শমতো।
মার্জারিনে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকলেও এতে থাকে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। তবে ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমাতে সহায়ক মার্জারিন।
মাখন-মার্জারিনের বৈচিত্র
বাজারে এখন অনেক ধরনের মাখন এবং মার্জারিন পাওয়া যায়। ডায়াটিশিয়ানরাও প্রয়োজনমতো সেগুলি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
•পিনাট বাটার: রোস্টেড পিনাট থেকে এই মাখন তৈরি হয়। হাই-প্রসেসড ফুড বলে এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ সাধারণ মাখনের চেয়ে অনেক কম। ভিটামিন ই, ডি, বি ও ম্যাঙ্গানিজের ভাল উৎস। এলডিএলের পরিমাণও কমাতে সাহায্য করে।
•শিয়া বাটার: আফ্রিকার এক ধরনের গাছ শিয়া। সেখান থেকেই তৈরি হয় শিয়া বাটার। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ থাকার জন্য বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচায় এটি।
•কোকো বাটার: কেক তৈরি করতে এর ব্যবহার বেশি। সাধারণত অন্য ভাবে খাওয়া হয় না।
•আনসল্টেড বাটার: এটি উচ্চমানের প্রসেসড নয় বলে খুব একটা বেশি ব্যবহার করা হয় না। তবে যে রোগের ক্ষেত্রে সোডিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে এই বাটার খাওয়া যেতে পারে।
•হোয়াইট বাটার: দুধ এবং ক্রিম থেকে তৈরি এটিও আনসল্টেড বাটার। মেটাবলিজ়ম বাড়াতে সাহায্য করে।
উপরিউক্ত বিভিন্ন উপাদান দিয়ে মার্জারিনও তৈরি হয়। তবে ফ্যাটের পরিমাণ একই। এই ধরনের বাটার বা মার্জারিনের ব্যবহারও হবে পরিমিত।
মাখনের পরিমাণ
শিশুদের দিনে তিন-চার চা-চামচ মাখন দেওয়া যেতে পারে। অপুষ্টিতে ভুগছে ও কম ওজনের শিশুদের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ দেওয়া হবে, যে সব বাচ্চাদের ওজন বেশি, তাদের কিন্তু সেই পরিমাণ দেওয়া হবে না। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর মতে, ‘‘প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দুই চা চামচের অতিরিক্ত কখনও নয়।’’
খুব রোগা এবং কম ওজনের ব্যক্তিদের অনেক সময়ে মাখন-ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়াটিশিয়ানদের মতে, এই ক্ষেত্রে ব্যক্তির একটু বেশি ফ্যাট শরীরে প্রয়োজন। তাই মাখন খেতে বলা হয়।
মাখন বা মার্জারিনের পরিবর্তে ভেজিটেবল অয়েল বা স্প্রেড (অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল) ব্যবহার করার জন্য ইদানীং বেশি উৎসাহ দিচ্ছেন ডায়াটিশিয়ানরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy