এড্স রোগীদের জন্য কি আশার আলো দেখা গেল? বিজ্ঞানীরা এমন এক ইঞ্জেকশন তৈরির দাবি করেছেন, যা বছরে এক বার নিলেই ভাইরাস আর ছড়াতে পারবে না। ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রতি দিন ওষুধ খাওয়ার ঝক্কিও থাকবে না। এড্স আক্রান্ত হলে অন্য যে সব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে, সেগুলিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই দাবি করা হয়েছে। ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
আমেরিকার বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গিলিয়েড সায়েন্সেস লেনাক্যাপাভির নামে একটি ওষুধ নিয়ে বহু মানুষের উপর পরীক্ষা করছে। এই ওষুধটি নতুন নয়। এইচআইভি-র চিকিৎসায় আগেও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ওষুধটির উপাদানে কিছু বদল এনে তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছিল এত দিন। প্রতিটি পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশ করে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বছরে এক বার যদি এই ওষুধটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেওয়া যায়, তা হলে বছরভর এড্স রোগীরা সুরক্ষিত থাকবেন। প্রতি দিন যে সব ওষুধ খেয়ে যেতে হয় রোগীদের, সেগুলিও আর খেতে হবে না।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে এখন ক্যানসারের চিকিৎসাতেও আশার আলো দেখা গিয়েছে। ক্যানসার সারিয়ে সুস্থ হচ্ছেন বহু মানুষ। এড্সের চিকিৎসা এখনও সেই পর্যায়ে না গেলেও ধীরে ধীরে এইচআইভিকে রোখার উপায়ও হাতে আসছে গবেষকদের। হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি এক বার মানবশরীরে প্রবেশ করলে তা আক্রমণ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে। এই ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমন ভাবে তছনছ করে দেয় যে, সামান্য অসুখও তখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এখনও পর্যন্ত এই রোগ সম্পূর্ণ ভাবে নিরাময় করার মতো কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায়নি। কেবলমাত্র রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা পদ্ধতি সামনে আসছে।
এইচআইভি মানুষের শরীরে ঢুকলে সবচেয়ে আগে শরীরের রোগ প্রতিরোধী টি-কোষকে নিশানা করে। খুব দ্রুত জিনগত ভাবে বদলে যেতে পারে এই ভাইরাস। মানুষের শরীরে ঢুকলে তাড়াতাড়ি বিভাজিত হয়ে সংখ্যাতেও বাড়তে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকে নষ্ট করতে শুরু করে। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে শুরু করে। সাধারণ কোনও সংক্রমণ হলেও তা বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকেরা দাবি করেছেন, লেনাক্যাপাভির ওষুধটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই সক্রিয় করে তুলবে। টি-কোষকে এমন ভাবে শক্তি জোগাবে, যাতে তা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। আগে যে সব ওষুধ তৈরি হয়েছিল সেগুলির কার্যকারিতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এই ওষুধটি কত দিন সুরক্ষা দিতে পারে সেটাই এখন দেখার।