সন্তানের বড় হয়ে ওঠার প্রতিটি পর্বে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশও দিতে হবে। ছবি: সংগৃহীত।
বাবা-মায়ের মধ্যে সবসময়ে ঝগড়, মতান্তর ছোটদের বিষণ্ণ করে তোলে। বাকিদের চেয়ে সে নিজেকে আলাদা ভাবতে থাকে। সংসারে যদি শান্তি না থাকে, তার প্রভাব পড়ে খুদের উপরেও। মা-বাবাকে যদি সবসময়ে ঝগড়া করতে দেখে শিশু, তা হলে সে অন্যকেও শ্রদ্ধা করতে শিখবে না। তার ব্যক্তিত্বেও সেই ছাপ পড়বে অবধারিত ভাবেই। তাই সন্তানকে আদর-যত্ন যেমন দেবেন, তেমনই তার বড় হয়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে তাকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশও দিতে হবে।
বাবা-মায়ের মধ্যে যদি মতের মিল না হয়, তা হলেও তা সন্তানের সামনে প্রকাশ করবেন না। শিশু যদি দেখে, তার অভিভাবকেরাই একে অপরকে বিশ্বাস বা ভরসা করছে না, তা হলে সে-ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। পাশাপাশি তার ব্যবহারেও বদল আসবে। জেদি, একগুঁয়ে মনোভাবের হয়ে যাবে। অন্যের প্রতি ব্যবহারেও তার প্রতিফলন দেখা দেবে।
শিশুর বহির্জগতের সঙ্গে পরিচয় তৈরি হয় স্কুল থেকেই। এই সময়ে সে বন্ধুদের সংস্পর্শে আসে। তাদেরও আলাদা জগৎ, ভাবনার পরিসর তৈরি হয়। এই সময়ে যদি বাড়ির পরিবেশ অশান্ত হয়, তা হলে তাদের বাকি সম্পর্কও শান্তিপূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। দেখবেন, বাড়ি থেকে শিখে শিশু স্কুলে গিয়ে মারপিট করছে বা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মান্য করছে না। তাই চেষ্টা করতে হবে সন্তানের সামনে কোনও রকম ঝগড়া, অশান্তি না করতে। কোনও বিষয়ে মতান্তর হলে, সেই আলোচনা সন্তানের আড়ালে করুন। শিশুর সামনে সবসময়েই দেখাতে হবে আপনারা কী ভাবে পরস্পরের পাশে রয়েছেন।
পারিবারিক অশান্তি অতিরিক্ত মাত্রায় চলতে থাকলে তা শিশুর মনের চাপ বাড়িয়ে তোলে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, বাড়ির খুদে সদস্যটি কিছুই বোঝে না। তা কিন্তু নয়। এই বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সরকার জানাচ্ছেন, ছোট বয়স থেকেই শিশুদের ভাবনা-চিন্তা খুব স্বচ্ছ হয়। তারাও স্পর্শকাতর হয়। আপনারা যদি একে অপরের উপর চেঁচিয়েও কথা বলেন, তা হলেও দেখবেন সে বিরক্ত হচ্ছে অথবা তার আচরণ অন্য রকম হয়ে উঠছে। তাই শিশুর সামনে যখন একে অপরের সঙ্গে বা বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলবেন, তখন যেন পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাটুকু থাকে। কথাবার্তায় শালীনতাও বজায় থাকে।
শর্মিলা বলছেন, সন্তানের সামনে একে অপরকে দোষারোপ করবেন না। নেতিবাচক কথাবার্তা ওদের আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিক্ত সম্পর্ক, বিচ্ছেদ দেখে বড় হওয়া বা ভাঙা পরিবারে বড় হওয়া শিশুদের মধ্যে অপরাধের ঘটনাও বেশি। এইসব শিশুর আচরণগত সমস্যা তৈরি হয় পরবর্তী সময়ে গিয়ে। অকারণে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করে, বাবা-মা যা খুশি করতে পারলে আমিও তা পারব— এ ধরনের আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। এমনকি মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই বাবা-মা যদি বোঝেন সন্তানের সামনে তাঁরা সঠিক আচরণ করতে পারছেন তা হলে ভাল, না হলে নিজেদেরও কাউন্সেলিং করিয়ে নেওয়া খুব জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy