বিয়ে মানেই কেবল অনুষ্ঠান নয়। এই বন্ধন যে আগামী গোটা জীবনের সূচনা, তা ভুলে যান অনেক দম্পতিই। আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। গাঁটছড়া বাঁধার আনন্দে সংসারের আলো-অন্ধকার নিয়ে চিন্তা করেন না তাঁরা। আলোচনায় উঠে আসে না নিজেদের মতামতের কথা, পছন্দ-অপছন্দের কথা। বিবাহ-পূর্ববর্তী প্রেমের ইতিহাস থাকলেও এক ছাদের তলায় বসবাস যে একেবারে ভিন্ন, তা মনে আসে না। সেখানেই শুরু হয় বিবাদ। নেমে আসে অন্ধকার। অবসাদে তলিয়ে যান কেউ কেউ। আর তাকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘বিবাহ-পরবর্তী অবসাদ’। ইংরেজি ভাষায় এই রোগের নাম, ‘পোস্ট-ম্যারেজ ডিপ্রেশন’।
সিনেমায়-গানে-গল্পে যে ধরনের বিয়ের চিত্র ফুটে ওঠে, অথবা সমাজমাধ্যমে যে ভাবে দম্পতিরা নিজেদের প্রেমালাপের কথা বলেন, তা সব সময়ে বাস্তব নয়। কিন্তু সেটিকেই বাস্তব মেনে অনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েন। তার পর উৎসব মিটতেই হঠাৎ বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়। ছোটখাটো বিষয়ে বিবাদ, মনের অমিল, ব্যক্তিগত পরিসরের অভাব, ব্যক্তিগত সময়ের অভাব, শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে মন কষাকষি (মূলত নারীদের ক্ষেত্রে, কারণ বাড়ি-বদল তাঁদেরই হয়), স্বাধীনতার অভাব ইত্যাদি নবদম্পতির মাঝে প্রাচীর তৈরি করে।
এই রোগের কারণ নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আলোচনা করলেন কলকাতা শহরের মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য।

সিনেমায়-গানে-গল্পে বিয়ের যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা সব সময়ে বাস্তব নয়। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর মতে, ‘‘বিয়ে ও তার পরবর্তী জীবনযাপন নিয়ে তৈরি হওয়া প্রত্যাশা থেকে অনেক সময়ে মোহভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুরুর দিকে প্রেমের টান, তার পর একে অপরের কাছে আসা, সমস্ত কৌতূহল কমে যাওয়ার পরেই কল্পনা আর বাস্তবের দ্বন্দ্ব। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত পরিসরের সীমারেখার বিষয়ে সচেতন থাকেন না অনেকেই। এমনকি, ছোট ছোট বিষয়, যেমন টাকাপয়সার হিসেব, বিদ্যুতের বিল, বাজারহাট, রোজ রান্না কী হবে নিয়েও সমস্যা হতে থাকে। রোজের দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে বিষণ্ণতা তৈরি করে অনেকের মনে। না-পাওয়াগুলি প্রভাব ফেলতে শুরু করে তাঁদের জীবনে। আর এই মনখারাপ গভীর হতে হতে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের আকার নিতে সময় লাগে না।’’
মুক্তির উপায় কী
মনোবিদ বলছেন, ‘‘সবার প্রথমে নবদম্পতিকে নিজেদের প্রত্যাশার ঘড়া খালি করতে হবে। সব কিছু আমার মনের মতো হবে না, এটা দু’জনেরই জানা প্রয়োজন। তার থেকেও বেশি জরুরি, খারাপ লাগা আর ভাল লাগার মধ্যেও ভাল লাগার পরিমাণ বেশি কি না, সেটা নিজের বোঝা প্রয়োজন। খোলাখুলি কথা বলে সবটা বুঝে নেওয়া, আর তার পাশাপাশি, নিজের পছন্দ ও সঙ্গীর পছন্দের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, বিয়ের পরের মনখারাপ, অবসাদ থেকে বেরোনোর এই দুই মূলমন্ত্র।’’
আরও পড়ুন:
খোলাখুলি কথা বলার সময়েই একে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হতে হবে। কার কী পছন্দ, কোনটি অপছন্দ, কোন ধরনের আচরণ একেবারেই মেনে নিতে পারেন না ইত্যাদি থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি বিয়ের আগেই এই সমস্ত কথা বলে নেওয়া যেতে পারে।