বকাবকি না করে শিশুর রাগ, জেদ সামলাবেন কী ভাবে. প্রতীকী ছবি।
খুদের জেদ যেন বেড়েই চলেছে। কথায় কথায় রাগ। বায়নাও থামেই না। বকাবকি করলেই মুখ ভার। জেদ তখন আরও চেপে বসে। যত ক্ষণ না পছন্দের জিনিস হাতে পাচ্ছে, তত ক্ষণই চিৎকার চলে। পরিস্থিতি সামলাতে শেষে তার দাবি মেনে নিয়েই হাঁফ ছাড়েন বাবা-মা।
রাগ, জেদ, একগুঁয়ে মনোভাব বেড়েই চলেছে এখনকার শিশুদের। ছোট পরিবারে এখন একটি বা দু'টি সন্তান বাবা-মায়েদের। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাবা ও মা দুজনেই কর্মরত। দিনভর হয়তো শিশুকে সামলানোর দায়িত্ব বাড়ির বয়স্কদের উপরে অথবা আয়ামাসিই ভরসা। সন্তানকে শান্ত রাখতে তাই সব ইচ্ছাই নিমেষে পূরণ করছেন অভিভাবকেরা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অন্দিদিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, “আগে যৌথ পরিবারে শিশু যখন যা চাইত, তা পেত না। সব কিছু দেওয়ার সাধ্যও থাকত না অভিভাবকদের। ভাগাভাগি করে খাওয়া, একে অপরের সঙ্গে সব কিছু ভাগ নেওয়ার অভ্যাস তৈরি হত। কিন্তু এখন তা হয় না। বাচ্চারা যা চাইছে, তাই পাচ্ছে। তাই চাহিদা পূরণ না হলেই জেদ চেপে বসছে।”
খুদেদের জেদ, বায়না সামলাবেন কী করে বাবা-মায়েরা?
১) শিশু যখনই কান্নাকাটি শুরু করবে, কোনও কিছুর জন্য জেদ ধরবে, তখন তাকে বকাবকি না করে অন্য পরিবেশে নিয়ে যান। গল্পের বই পড়তে দিন বা ছবি আঁকতে দিন। আপনিও গল্প বলুন। গল্পের মধ্যে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
২) মা-বাবার দেখাদেখি বাচ্চারা অনেক কিছু শিখে থাকে। তারা যদি মা-বাবাকে কারও সঙ্গে কঠোর ভাবে কথা বলতে দেখে অথবা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে দেখে, তা হলে চট করে সেটাই রপ্ত করে নেবে। তার পর অজান্তেই তাদের আচরণে এমন ব্যবহারের প্রতিফলন দেখা দেবে। মা-বাবার মুখে মুখেও তর্ক করবে। তাই সন্তানের সামনে নিজেদের আচার-ব্যবহার নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
৩) শিশুর সঙ্গে ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। অনিন্দিতার মতে, অনেক পরিবারেই বাচ্চাদের মধ্যে তুলনা টেনে কথা বলা হয়, যা তাদের নরম মনে আঘাত করে। বড়রা অনেক সময়েই বোঝেন না যে, কথায় কথায় তুলনা টানলে বা অযথা প্রতিযোগিতার মধ্যে বাচ্চাদের ঠেলে দিলে তা তাদের আত্মবিশ্বাসকে চুরমার করে দেবে। তখন হয় শিশু নিজেকে গুটিয়ে নেবে, না হলে নিজের খামতিগুলোকে ঢাকতে প্রচণ্ড জেদি ও একগুঁয়ে হয়ে উঠবে।
৪) বকবেন ঠিকই, কিন্তু কী ভাবে বকছেন, সেটা আসল। এ ক্ষেত্রে শাসনের পদ্ধতিটা গুরুত্বপূর্ণ। শিশু্র প্রতি কটুকথা বা খারাপ ভাষার প্রয়োগ একেবারেই করবেন না। বকলেও বোঝাতে হবে, তার এই আচরণ সঠিক নয়। বাচ্চার মন বুঝে তাকে বন্ধুর মতো বোঝাতে হবে। কোনটা ঠিক ও কোনটা বেঠিক, সেটা উদাহরণ দিয়ে বলে বুঝিয়ে দিতে হবে।
৫) শিশুর মধ্যে ছোট থেকেই আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। তার খামতিগুলো নিয়ে কথা না বলে তার জোরালো দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। হয়তো শিশু পড়তে বসতে চাইছে না। তাকে বকলে জেদ আরও বেড়ে যাবে। হয়তো সে খুব ভাল ছবি আঁকে। তখন সে দিকে তার প্রশংসা করে বলতে হবে, ভবিষ্যতে এই দিক নিয়ে এগোতে চায় কি না। নিজের পছন্দের দিকটিতে উন্নতি করতে হলে পড়াশোনাও যে কতখানি জরুরি, তা ভাল ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।
৬) খুদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারে তারও যে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে, সেটা বোঝাতে হবে বাবা-মাকে। অবহেলা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্যে জেদ বাড়ে। নিজের পছন্দ না চাপিয়ে বাচ্চাকে নিজের জামা নিজেই পছন্দ করতে দিন। তা হলে ছোট থেকেই সে বুঝবে, তারও স্বাধীন মতামত আছে। কোনও কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এতে অন্যের প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা, দুটোই বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy