আত্মহত্যর প্রবণতা কমিয়ে দিতে পারে পোষ্যের সান্নিধ্য!। বাড়িতে কুকুর বা বিড়াল যে পোষ্যই থাকুক না কেন, ওদের সঙ্গ মৃত্যুচিন্তা আসতেই দেবে না। পাশাপাশি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশের মতো জটিল মানসিক রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেবে প্রায় ৪০ শতাংশ। এমনটাই দাবি করেছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা। ‘টোকিয়ো মেট্রিপলিটন ইনস্টিটিউট অফ জেরিয়াট্রিক্স অ্যান্ড জেরোন্টোলজি’-এর গবেষকেরা গত চার বছর ধরে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এই দাবি করেছেন।
স্মৃতিনাশের মতো ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যাধি একা আসে না, আরও নানা অসুখকে সঙ্গী করে আসে। তাই ডিমেনশিয়া তলে তলে বাসা বাঁধছে কি না, তার লক্ষণ শুধু ভুলে যাওয়া থেকে নয়, আরও বিভিন্ন রকম উপসর্গ থেকেও জানা যেতে পারে। এমনও দেখা গিয়েছে, স্মৃতিনাশ থেকে অ্যালঝাইমার্সের মতো জটিল মনোরোগও বাসা বেঁধেছে। কেবলমাত্র ওষুধে এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা বাড়িতে পোষ্য রাখারও পরামর্শ দেন। পোষ্যের দেখাশোনা, তাদের খেয়াল রাখার মধ্যে দিয়েই মন ভাল থাকে। দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগও কম হয়।
আরও পড়ুন:
৬৫ বছর বা তার বেশি বয়স এমন ১২ হাজার জনকে নিয়ে চার বছর ধরে সমীক্ষাটি চালানো হয়। গবেষক ইউ তানিগুচি জানিয়েছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যাঁদের বাড়িতে পোষা কুকুর আছে, তাঁদের মন অনেক ফুরফুরে থাকে। অনেক বেশি সক্রিয় থাকেন তাঁরা, সেই সব মানুষের ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের ঝুঁকিও থাকে না। আর যাঁদের বাড়িতে পোষ্য নেই, তাঁরা বয়সকালে অনেক বেশি মানসিক উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় ভোগেন। একাকিত্বের ভাবনা থেকেও অবসাদ গ্রাস করে অনেককে। আর অবসাদ যদি খুবই গভীরে পৌঁছে যায়, তা হলে তা থেকে ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
আসলে মস্তিষ্কের বিশ্রাম নেই মানুষের। এর একটি কারণ হিসাবে অনেকেই সাম্প্রতিক পৃথিবীতে ‘ইনফরমেশন ওভারলোড’-এর সমস্যাকে দায়ী করেন। তাঁদের মতে, এখন এত কিছু মনে রাখতে হয় যে, অনেক সময়ই মানুষ খেই হারিয়ে ফেলে। তার উপর আছে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, মানুষ একই সময়ে একাধিক কাজ করার চেষ্টা করছে। একে বলে ‘মাল্টিটাস্কিং’, যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে। দুশ্চিন্তাও বাড়াচ্ছে। পোষ্য থাকলে তার সাহচর্যে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের ক্ষরণ কমে, ‘হ্যাপি হরমোন’-এর ক্ষরণ বাড়ে। ফলে মস্তিষ্কে সেই সব প্রোটিনও জমাট বাঁধে না, যেগুলি ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী।
পোষ্যের সান্নিধ্যে লাভ হয় আরও অনেক। জাপানি বিজ্ঞানীদের মতে, পোষ্যকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ওদের সঙ্গে খেলাধূলার মাধ্যমে শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি হয়। পাশাপাশি দিনের কিছুটা সময়ে খোলা হাওয়ায় প্রকৃতির মাঝে থাকার সুযোগও হয়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায়।
পোষ্য থাকলে একাকিত্বের ভাবনা কমই আসে। এমনও দেখা গিয়েছে, আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষজনও পোষ্যের সাহচর্যে থেকে মৃত্যুচিন্তা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁদের মনের অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তাও কমেছে।