মাত্র ১৩ বছর বয়সে টাইপ ১ ডায়াবিটিস ধরা পড়েছিল আমেরিকার পপ তারকা নিক জোনাসের। তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে, তিনি ‘দেশি গার্ল’ প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার স্বামী। নিক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কিশোর বয়সেই টাইপ ১ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে মনে হয়েছিল, তাঁর জীবনের অনেক ভাললাগা এক নিমেষে শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেক সংযত জীবন কাটাতে হবে তাঁকে, নিয়মের বাইরে যেতেই পারবেন না। কিন্তু সেই সময়ে পাশে ছিলেন তাঁর বাবা-মা। কী ভাবে তাঁরা পরিস্থিতি সামলালেন, সে কথাও ভাগ করে নিয়েছেন নিক।
শিশুদের মধ্যে ডায়াবিটিস খুব বাড়ছে। তার একটি কারণ হল স্থূলত্ব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ হচ্ছে ছোটদের, যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে টাইপ ১ ডায়াবিটিসের কারণ হয়ে উঠছে। সন্তানের ডায়াবিটিস মানেই অভিভাবকদের কাছে আতঙ্ক। নিকও বলেছেন, ডায়াবিটিস ধরা পড়ার পরেই তাঁর ভয় বেড়ে যায়। মনে হয়েছিল, সব স্বপ্ন বুঝি নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, তাঁর বিশেষ যত্ন নিয়েছিলেন তাঁর অভিভাবকেরাই। এই বিষয়ে চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের বক্তব্য, শিশুর ডায়াবিটিস হলে বাবা-মাকে সব দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। কী কী নিয়ম মানা জরুরি তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে।
শিশুর ডায়াবিটিস হলে কী কী নিয়ম মানবেন?
ওজন কমানো
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। সে জন্য বাইরের খাবার একেবারে বন্ধ করতে হবে। ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড একেবারেই খাওয়া চলবে না। বাড়িতে রান্না করা হালকা খাবারই খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গেই নিয়ম করে শরীরচর্চা করাতে হবে।
আরও পড়ুন:
খাওয়াদাওয়ায় বদল
ডায়াবিটিস মানে খাওয়াদাওয়ায় অনেক বিধিনিষেধ আসে। তবে সব সময় এটা খাবে না, সেটা খাবে না বললে শিশুর বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক আরও বাড়বে। তাই বাড়ির খাবারই সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে, ঘরে পাতা দইয়ে ড্রাই ফ্রুট্স মিশিয়ে দিতে পারেন। প্যাকেটের জুস বা নরম পানীয়ের বদলে ঘরেই টাটকা ফলের রস সুন্দর গ্লাসে ঢেলে উপরে ফলের টুকরো ছড়িয়ে দিন। বাইরের রোলের বদলে ওট্স বা রাগির তৈরি রুটির উপরে সেদ্ধ মাংস, সব্জি দিয়ে সাজিয়ে দিন।
করলা, উচ্ছে, মেথিশাক, পাটশাক, নিমপাতা, পালংশাক, ছাতু, ওট্স, আপেল, গাজর, বিনস— এই ধরনের খাবার ডায়েটে থাকলে ভাল। ভাজা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, নরম পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম
সারা দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে। হাঁটাহাঁটি, স্পট জগিং, দৌড়নো, সাঁতার বা যে কোনও রকম যোগাসন অভ্যাস করালে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে যে কোনও ব্যায়াম অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়েই করাবেন।
রক্ত ও চোখের পরীক্ষা
ডায়াবিটিসে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। যদি দেখেন শিশু বোর্ডের লেখা পড়তে পারছে না, বা দূরের দৃশ্য ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডায়াবিটিসে নিয়ম করে রক্তপরীক্ষার পাশাপাশি চোখের পরীক্ষাও করাতে হবে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি স্ক্রিনিং, রেটিনাল ফোটোগ্রাফি পরীক্ষা করালেই বোঝা যাবে, চোখে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না।
স্ক্রিন-টাইম বেঁধে দিন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখা, রাতভর মোবাইলে স্ক্রল করা বন্ধ করতে হবে। তা হলেই শিশুদের শরীর তো বটেই, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা পরবর্তী সময়ে স্থূলত্ব ও ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে অনেকটাই।