Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Anuttama Banerjee

Anuttama Bandyapadhyay: শোক প্রদর্শনের নয়, বরং তা অত্যন্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি! মনে করালেন মনোবিদ অনুত্তমা

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল দ্বাদশ পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘আমার শোক আমার যাপন’।

 ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল দ্বাদশ পর্ব।

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল দ্বাদশ পর্ব। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২২ ২১:১২
Share: Save:

আনন্দ, ভাললাগার মতো শোকও অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটি অনুভূতি। পরিস্থিতি ভেদে শোক কখনও স্তব্ধ করে দেয়। কিংবা বাঁধ-ভাঙা কান্না হয়ে ঝরে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ শোক যেন আবার সয়েও যায়। প্রিয় মানুষের শোক কাটিয়ে দৈনন্দিনতায় ফেরার চেষ্টাও থাকে। দ্রুত শোক সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চাওয়া নিয়েও কিন্তু অনেক সময়ে অভিযোগ উঠে আসে। এবং তা আসে একেবারে কাছের মানুষ-জনের কাছ থেকে। পরিচিত বৃত্ত থেকে।

শোক সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো। তা গলতে কখনও খানিক বেশি সময় নেয়। কিংবা তা যে সব সময় প্রকাশ পাবেই, এমনও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। শোক তো প্রদর্শনের সামগ্রী নয়। বরং একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি। অথচ শোকের প্রকাশ নিয়েও শুনতে হয় নানা রকম কথা। ব্যক্তিগত শোক যাপনেও পারিপার্শ্বিক থেকে উঠে আসা অভিযোগ নিয়েই রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল দ্বাদশ পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘আমার শোক আমার যাপন’।

আরও পড়ুন:

ব্যক্তিগত পর্যায়ে শোক যাপনেও পরিচিত বৃত্ত থেকে উঠে এসেছে নানা অভিযোগ। তেমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা উঠে এল রবিবারের আলোচনায়। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যাবে প্রশ্ন। এ পর্বেও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।

নীথি জানালেন, দিদা মারা যাওয়ার পর এক চরম বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু সে শোক কান্না হয়ে বাইরে আসেনি। ভিতরেই জমাট বেঁধেছিল। অথচ সেই ক্রন্দনহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ‘কী রে তোর দুঃখ হয়নি?’কিংবা ‘অনুশোচনা হচ্ছে না?’শোক প্রকাশও যেন একপাক্ষিক অভিব্যক্তি। তার থেকে বিচ্যুতি ঘটলে দুঃখই মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

শোক না প্রকাশ করা এবং সমাজের না নানা উক্তি নিয়ে বিদিশা জানিয়েছেন, পথ দুর্ঘটনায় আকস্মিক মাকে হারান তিনি। অথচ সেই সময়ে বাবা এবং ভাইকে সামলাতে তিনি নিজে শক্ত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। অথচ আত্মীয়স্বজন এর উল্টো অর্থ করে বসলেন। তাঁদের অনুমান, মায়ের প্রতি বিদিশার কোনও ভালবাসা নেই। অনেক সময়ে আসলে গোটা আবেগের চলনের ক্ষেত্রে প্রদর্শনের উপর ভিত্তি করে খুব দ্রুত কিছু উপসংহার টানা হয়। বিশেষ করে শোকের ক্ষেত্রে। কাউকে জোর কাঁদানো যেমন সঠিক কাজ নয়, তেমনই কেউ যখন কাঁদছেন, সেই মূহূর্তে তাঁকে থামানোর মধ্যে কোনও বীরত্ব নেই। কাছের মানুষরা যখন এই আচরণগুলি করেন তখন খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু কাছের মানুষরা তো দূরের মানুষেরই অংশ। সমাজের অংশ। ধারণা, পূর্ব অনুমানগুলিরও তো কাছের। তাই এই উক্তিগুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল। বোঝালেন মনোবিদ অনুত্তমা।

গভীর শোক পাওয়ার অনেক দিন পর এ বার তো শক্ত হতে হবে বলে পারিপার্শ্বিক থেকে যে রব ওঠে, সেই অভিজ্ঞতার কথাও উঠে এসেছে কয়েকটি চিঠিতে।

দেবরূপা জানালেন,মা চলে যাওয়ার পর ভিতরে ভিতরে তিনি এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। মা গত হওয়ার একেবারে প্রথম দিকে লৌকিকতার খাতিরে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়েছে। অনেকে বলেছেন, মেয়ে হওয়ার সুবাদে বিয়ে হবে। শাশুড়ি মা নিশ্চয় মায়ের মতোই হবে। কিন্তু মায়ের মতো আর মা যে এক জিনিস নয় সে কথা বুঝতে তাঁরা ব্যর্থ। তা ছাড়া, কেউ কারও বিকল্প হতে পারে না। জীবনে সব সম্পর্কের আলাদা আলাদা সংজ্ঞা আছে। গুরুত্ব আছে। অনুত্তমা এ বিষয়ে বললেন, ‘‘মনোস্তত্ত্বের ভাষাতেও এই পর্যালোচনা চলেছে। কত দিন আমরা বলব শোক আর কখন বুঝব যে শোক এবার অবসাদে ঘনীভূত হয়েছে তারও কিন্তু কিছু সীমারেখা নির্ণয়ের কথা হয় অনেক সময়ে। শোকের ওই ভাবে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ণয় করা যায় না। এটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। শোককে সময়ের খাতিরে স্বাভাবিক অস্বাভাবিকতার তত্ত্বে বাঁধার কোনও প্রয়োজন নেই। প্রাত্যাহিকতায় ফেরার পরেও যদি মাঝেমাঝে শোকের উদ্রেক হয়। বিশেষ কোনও দিনে বেশি করে মনে পড়ে। তাতে ক্ষতি তো কিছু নেই। কিন্তু জোর করে শোক যাপন না করানোই ভাল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Anuttama Banerjee loke ki bolbe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE