লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ
কথায় কথায় ‘গরম তেলে বেগুন পড়া’-র মতোই চড়বড়িয়ে রেগে উঠলে মন তো বটেই, শরীরও খারাপ হয়ে যায়। শিকেয় ওঠে কাজকর্ম। রাগ আমাদের জীবনের এক মহাশত্রু। রাগকে বশে না রাখতে পারলে অন্যান্য সম্পর্কের মতোই প্রেমের সম্পর্কেও তিক্ততা আসে। অল্পবিস্তর মনোমালিন্য সব সম্পর্কেই থাকে। কিন্তু রাগের মাথায় মেজাজ হারিয়ে কিছু ভুলভাল শব্দ প্রয়োগ প্রেমের সম্পর্ককে ‘টক্সিক রিলেশনসিপ’ পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাই রাগ নামক ভয়ানক রিপুকে বশে না রাখলেই বিপদ!
রেগে গিয়ে দু’চার কথা শুনিয়ে হালকা হওয়া যায় বটে, কিন্তু সেই রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেই মুশকিল। মেজাজ হারিয়ে আমারা হয়েতো নিজেদের অজান্তেই সঙ্গীকে অনেক কটু কথা বলি। তৃতীয় কোনও ব্যক্তির উপর রাগ পুষে রেখে সঙ্গীর উপরেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই। সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়ে। অনেক কটু, অপ্রীতিকর কথা, বেঁফাস মন্তব্য থেকে সম্পর্কে জন্ম নেয় একাধিক সমস্যা। রাগ কখন প্রেমের সম্পর্কে তিক্ততা নিয়ে আসে নিয়েই রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনে ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোক কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল দশম পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘ওর রাগকে ভয় পাই!’
ই-মেল মারফত পাঠানো চিঠিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানালেন, তাঁর স্বামী সব বিষয়ে বড় বেশি খুঁতখুতে। কোনও কাজ এ দিক থেকে ও দিক হলেই তিনি ভীষণ রেগে যান। এমনকি, বাইরের কোনও সমস্যা হলেও তিনি গোটা রাগ তাঁর উপরেই দেখান। ফলে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। ওঁর এই স্বভাবের কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপরে প্রভাব পড়ছে।
অনুত্তমার পরামর্শ, ‘‘তোমার আমার তর্কে কে জিতলাম, কে কাকে কটা গোল দিলাম সেই প্রশ্নে আমাদের সম্পর্কের মূল ভীতটা আমরা গুলিয়ে ফেলি। একটি সম্পর্কে একা আমার ভাল থাকা কিংবা একা তোমার ভাল থাকা বড় বিষয় নয়। সম্পর্কে দুই জনেরই ভাল থাকাটা ভীষণ জরুরি। রাগের মাথায় একে অপরকে ক্রমাগত দোষারোপ করার মধ্য দিয়েই নিজেদের অজান্তে আমরা আমাদের ঝগড়া দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিচ্ছি। আপনার কাছে যা ‘পারফেক্ট’, আপনার সঙ্গীর কাছে তা ‘পারফেক্ট’ নাও হতে পারে। সেই নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে আমদের যা আছে সেই প্রাপ্তিসুখটুকুও হারাতে শুরু করি। দু’জনের মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকে। জোড় করে চাপ দিয়ে সঙ্গীকে দিয়ে মনের মতো কাজ করাতে চাইলে আপনার সঙ্গী যদি আর সেই সম্পর্কের বোঝা বহন করতে না চান— সেটা কি কাঙ্খিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক জন মহিলা জানিয়েছেন, অনেক সময়ে তাঁর উপর রেগে গিয়ে সঙ্গী কথা বলা বন্ধ করে দেন। বহু চেষ্টার পর তিনি কথা বলেন। রাগ তাঁরও হয়। তবে ভয় কিছু বলতে পারেন না। যদি সঙ্গী ছেড়ে চলে যান!
সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে কিন্তু মুশকিল। কথা বন্ধ করে দেওয়ার মধ্যে রাগেরই আর একটি দিক প্রকাশ পায়। আমরা মনে করি রাগ হলে কথা বন্ধ করে দিলেই বুঝি সঙ্গী আপনার মনের মতো কাজটা করতে বাধ্য হবেন। তবে এই পন্থা ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ এমনও এক দিন আসতে পারে, যখন আপনার সঙ্গী আপনার রাগ মেটাতে আর আসবেন না। বরং খুব বেশি রাগ হলে সঙ্গীকে বলতে পারেন যে আপনি এখন এই বিষয়ে কথা বাড়াতে চান না। এমনই পরামর্শ দিলেন অনুত্তমা। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণের জন্য মনের স্বাদবদল করুন। আপনি কথা বলা বন্ধ করে দিলে সঙ্গীর মনে হতেই পারে আপনি যেন ওঁর জীবনে আর থাকবেন না। সঙ্গীকে এমন মানসিক বিড়ম্বনায় না ফেলাই ভাল।’’
অন্তরঙ্গ সম্পর্কে অনেকেই শারীরিক হিংসারও শিকার হন। অনুত্তমার মতে, সম্পর্কে শারীরিক আঘাত কিন্তু কখনওই সহ্য করা উচিত নয়। প্রচুর রাগারাগি, হাতাহতির পর হয়তো উদ্দাম যৌনসুখের মাধ্যমে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু কোথাও যেন সম্পর্কের ভীতটা তলিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গী গায়ে হাত তুললে মুখ বুজে সহ্য না করে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা জরুরি, সে কথা মনে করান মনোবিদ। অনুত্তমা বলেন, ‘‘আপনি চুপ থাকার অর্থ কিন্তু আপনি সঙ্গীর রাগের বহিঃপ্রকাশকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সব সম্পর্কে এমনটা একটু আধটু হয়, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। সম্পর্কের এই খারাপ দিকগুলো চুপচাপ মেনে না নিয়ে সঙ্গীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন। তবে সঙ্গী যখন রেগে থাকবেন তখন নয়। তাঁর রাগ শান্ত হলে খোলাখুলি সে বিষয় কথা বলুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy