লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা ছবি: নিজস্ব চিত্র
সম্পর্কের ভিত্তি বহুমাত্রিক, তবে তার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শারীরিক স্পর্শের অনুভূতি। জীবনের আর পাঁচটি অপ্রাপ্তির মতো যদি সেখানেও পূর্ণতার অভাব থাকে, তবে তা নিয়েও নানা রকমের টানাপড়েন চলে মনে। কিন্তু সমাজে আজও সে কথা বলা, আলোচনা করা নিয়ে ছুৎমার্গের অন্ত নেই। তাই অন্তর হয় না বাহির, গহীন হয় না বিশদ। অজানা অস্থিরতা, সন্তাপ কিংবা অপরাধবোধ জমা হতে থাকে মনে। তেমনই কিছু অনুভূতির কথা রবিবার উঠে এল আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব এবং ফেসবুকের অনুষ্ঠান ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’-র একাদশতম পর্বে। এ সপ্তাহের প্রসঙ্গ ‘আমরা আর আদর করি না’।
প্রেমের প্রাথমিক মুহূর্তে ভালবাসার সঙ্গে কিছুটা কৌতূহলও মিশে থাকে। রহস্য উন্মোচনের প্রয়াসে থাকে উত্তেজনা। কিন্তু অনেক সময়ে দেখা যায়, সময় এগোলে বদলে যায় বেশ কিছু রসায়ন। যে ভাবে জল শান্ত হলে থিতিয়ে যায় পলি, তেমনই শরীরের ঢেউও যেন খানিকটা স্তিমিত হয়ে আসে কিছু দিন পর। কিন্তু সম্পর্কে থাকা দু’জনের মধ্যে যদি সমন্বয় না থাকে, তবে এই মন্দন অস্বাভাবিক ঠেকে সঙ্গীর কাছে। যৌনতা নিয়ে কথা বলার অভ্যাস সমাজ আমাদের তৈরি করে দেয়নি। তাই কথপোকথনের পথও রুদ্ধ হয়ে আসে। শরীরের কষ্ট বাড়িয়ে তোলে মনের কষ্টও। সম্পর্কের অনেক জটিল ধাঁধার সূত্রপাত হয় অন্তরঙ্গতার অমিল থেকে। অন্তত তেমনটাই ধরা পড়ল অমৃতার চিঠিতে। তিনি জানান, তাঁর স্বামী আর তিনি এখন আর একঘরে থাকেন না। তাঁর আরও বক্তব্য স্বামী পর্নোগ্রাফি দেখলেও তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলছেন। একই কথা বলছেন রিয়াও। তাঁর আবার আশঙ্কা, সঙ্গী কি কিছু বলতে চেয়েও পারছেন না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তাঁর প্রতি কর্তব্যে কোনও রকম বিচ্যুতি নেই স্বামীর। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের ভাষায় যেন থেকে যাচ্ছে অমিল। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তবে কি তাঁরা নিজেরাই আকর্ষণীয়তা হারিয়েছেন বা সঙ্গী কি অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট?
মনোবিদ অনুত্তমা জানান, প্রথমেই এই অনুমানগুলি থেকে সরে আসতে হবে অবিলম্বে। শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রের যে কোনও রকমের অমিলকে প্রথমেই অক্ষমতা হিসাবে দেখা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন মনোবিদ। এই সংশয়বোধ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সত্যি বলেই মত তাঁর। পর্নোগ্রাফির প্রসঙ্গে তাঁর মত, ‘‘পর্নোগ্রাফি দেখার জন্য সক্রিয় যৌনতার প্রয়োজন পড়ে না, সেখানে খানিকটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থেকেও কিছুটা আনন্দ বা কিছুটা উপভোগ সম্ভব।’’ অনুত্তমার পরামর্শ,‘'আমি কি কম আকর্ষণীয় হয়ে গেলাম না ভেবে বরং সঙ্গী কোনও কারণে ক্লান্তি বোধ করছেন কি না, তা নিয়ে কথা বলে দেখা অনেক বেশি জরুরি।'' পাশাপাশি, যৌন মিলনের স্বতঃস্ফূর্ততাকে ভালবাসার মাপকাঠি হিসাবে দেখা থেকেও বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি। অনুত্তমা বলেন, ‘‘এটি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশের একটি নির্দিষ্ট সংলাপ, যে সংলাপে কখনও আপনার সঙ্গীর সঙ্গে ঠিক একই সময়ে আপনার হয়তো নিযুক্ত হতে ইচ্ছে করছে না।’’ তাঁর পরামর্শ, পারস্পরিক অমিল স্বীকার করেই পরস্পরকে ভাল রাখার জন্য সম্মিলিত আস্থার ভাষা হিসাবে এই সংলাপের পুনর্গঠনের প্রয়াসেই খুঁজে দিতে পারে ভাল থাকার পথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy