দীপাবলির রাতে দক্ষিণ কলকাতার বহুতল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট কোনও দোকানের কিংবা আত্মীয়ের নাম অনেক চেষ্টাতেও মনে পড়ে না। কথা বলতে গিয়েও বারবার থেমে যেতে হয়। আবার প্রতিদিনের সংসার খরচের হিসেব করতে গিয়েও মাঝেমধ্যে থমকে যান অনেকে। সহজ হিসেবও করতে পারেন না তাঁরা।
বাতাসে লাগামছাড়া ধুলো, ধোঁয়া বুকের সংক্রমণ ও হাঁপানির মতো সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রৌঢ়দের স্মৃতিশক্তিরও বিপদ ডেকে আনছে। মার্কিন বিজ্ঞান পত্রিকা ‘প্রসেডিং অব ন্যাশনাল অকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত রিপোর্টে গবেষকেরা এমনই তথ্য তুলে ধরেছেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ুদূষণের জেরে সব বয়সের মহিলা ও পুরুষের জীবনযাপনের মান কমে যাচ্ছে। তবে প্রৌঢ়দের মধ্যে এর প্রভাব পড়ছে সব চেয়ে বেশি। বায়ুদূষণে বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে। নাম, শব্দ মনে রাখার শক্তি কমছে। শব্দবন্ধ তৈরি করে বাক্যগঠন বা সহজ হিসেব করার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানান, বায়ুদূষণের জেরে ফুসফুসে সংক্রমণ কিংবা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। নতুন এই রিপোর্টে মস্তিষ্কে বায়ুদূষণের প্রভাবের বিষয়টি আরও বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতের মতো দেশে প্রতি বছর দীপাবলির মতো উৎসবের পরে বায়ুদূষণের সমস্যা প্রবল আকার নেয়। তার সর্বাধিক প্রভাব পড়ে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। বুকের নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগতে হয় তাঁদের। তার উপরে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার মতো বিপদ ঘটলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-মেঘের যুগলবন্দিতে শ্বাসরোধ
বায়ুদূষণের বিপদ কলকাতাতেও বাড়ছে বলে চিকিৎসকদের অভিমত। অধিকাংশ সময় দূষণ মাপার সূচক জানান দিচ্ছে, দিল্লি-মুম্বইয়ের থেকেও বায়ুদূষণে এগিয়ে আছে কলকাতা। তাই অন্যান্য শহরের তুলনায় এই মহানগরীর শিশুরা অনেক বেশি ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগে। তবে স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমস্যা তৈরি হলে পরবর্তী প্রজন্মের ঝুঁকি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, দূষণ গোটা শরীরেরই বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। ‘‘কলকাতার বাসিন্দাদের একাধিক শারীরিক সমস্যার কারণ দূষণ। কিছু ক্ষেত্রে দূষণ ক্ষতি করছে তৎক্ষণাৎ। কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে দূষণের,’’ বলেন অরুণাংশুবাবু।
বিপদ রয়েছে বলে মনে করছেন স্নায়ুরোগ চিকিৎসক জেকে প্রুস্তিও। তাঁর কথায়, ‘‘স্নায়ুর উপরে দূষণের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী।
বায়ুদূষণের জেরে স্নায়ুর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কলকাতার মতো ঘনবসতির শহরে যে-হারে দূষণ বাড়ছে, সেটা জীবনযাত্রার মান নামিয়ে দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy