ঘাড় আর মাথা যন্ত্রণার সমস্যা বার বার ফিরে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছবি:শাটারস্টক।
মাথা থাকলেই মাথা ব্যথা হয়, এ আর নতুন কথা কী। কিন্তু এখন প্রায় সব মানুষই যে কোনও শারীরিক সমস্যার সঙ্গে কোভিড যোগ খুঁজে বেড়ান! নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য শুধুই মাথা ব্যথা হয়,সেরকম ঘটনার কথা এখনও জানা যায়নি। তবে এক ধরনের ভয়ানক মাথার যন্ত্রণায় অনেকেই কষ্ট পান, যা মাইগ্রেনের মাথা ব্যথার থেকেও বেশি কষ্টকর। ব্যথার চোটে কাজকর্ম শিকেয় ওঠে। নার্ভের এক বিশেষ সমস্যার জন্যে অসহ্য মাথা ব্যথার কষ্ট সহ্য করতে হয়। রোগের নাম অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া। নামটা অচেনা হলেও অসুখটা কিন্তু নয়, বললেন সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট অংশু সেন।
মাথা ও ঘাড়ের অসহ্য যন্ত্রণা এই রোগের প্রধান উপসর্গ। যাঁদের নাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ করতে হয়, তাঁদের মধ্যে ঘাড় আর মাথার যন্ত্রণার ঝুঁকি বেশি। তবে মাথার তীব্র যন্ত্রণার অন্যতম কারণ অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া নামে নার্ভের সমস্যা, জানালেন অংশুবাবু। ঘাড়ের পিছনের দিকে সি-২ ও সি-৩ নামক দুটি ভার্টিব্রেট বা কশেরুকা থেকে বেরোয় গ্রেটার অক্সিপিটাল নার্ভ ও লেসার অক্সিপিটাল নার্ভ। বিভিন্ন কারণে এই নার্ভগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর তখনই শুরু হয় ভয়ানক ব্যথা আর যন্ত্রণা।
অংশু সেনের মত, ভুল ভঙ্গিমায় একভাবে মাথা কাত করে বা ঘাড় বেঁকিয়ে মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে নার্ভে চাপ পড়ে। ফলে যাঁদের অক্সিপিটাল নার্ভে অল্প স্বল্প সমস্যা আছে, তাঁদের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। এছাড়া রিকশ, অটো বা বাসের ঝাঁকুনি লেগেও নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে সেলুনে বা পার্লারে গিয়ে মাথা ঘাড়ে ম্যাসাজ করান। এক্ষেত্রেও অনভিজ্ঞ হাতে জোরে ম্যাসাজ করার জন্যে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়়ুন: নাগাড়ে কাশি, স্বরে বদল ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে
অস্টিওকন্ড্রোমা নামক বিনাইন (ক্যানসার নয়) টিউমারের জন্যেও নার্ভের সমস্য হয়। অনেকে আছেন, যাঁরা কথা বলার সময় অকারণে জোরে জোরে ঘাড় নাড়েন। এর ফলেও ঘাড়ের নার্ভে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। আবার স্পন্ডোইলোসিস ও স্লিপ ডিস্কের জন্যেও অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া হয়ে ঘাড়ে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণার ঝুঁকি থাকে।
এগুলি ছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া ডেকে আনতে পারে। যেমন—
• সারভাইকাল স্পাইন অর্থাৎ মেরুদণ্ডের উপরের দিকের অংশের অস্টিও-আর্থ্রাইটিস।
• অক্সিপিটাল নার্ভে যদি বাইরে থেকে কোনও ভাবে চোট লাগে।
• ঘাড়ের কাছের মেরুদণ্ডের কশেরুকায় যদি ক্ষয়জনিত বদল হয়।
• গাউট।
• ডায়াবিটিস।
• সারভাইকাল স্পাইনের ডিস্কের সমস্যা।
কোনও সংক্রমণ হলে এবং ঘাড়ের আশেপাশের রক্তনালি যদি ফুলে ওঠে তাহলে অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় বলে জানালেন অংশু সেন।
আরও পড়়ুন: কোন ভেষজ চায়ের কী গুণ? কখন খাবেন, কীভাবে বানাবেন?
অন্যান্য মাথার যন্ত্রণা, ঘাড় ব্যথার সঙ্গে অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার কিছু কিছু তফাত আছে, বললেন ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ ও ভারতবর্ষের একমাত্র পেইন হাসপাতালের অধিকর্তা গৌতম দাস।
অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া হয়ে ঘাড়ে ব্যথা বাড়তে থাকে। ফাইল ছবি।
এই অসুখের বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট সম্পর্কে গৌতমবাবু জানালেন যে, ব্যথার আক্রমণ শুরু হওয়ার সময় মনে হয় ধারালো কিছু দিয়ে ঘাড় ও মাথায় আঘাত করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ইলেকট্রিক শক লাগার মতো অনুভূতি হয়।
অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার আর এক বৈশিষ্ট হল—ঘাড়ে ব্যথার উৎপত্তি হয়ে মাথা জুড়ে ছড়িয়ে পড়া। চোখের পিছন দিকে ব্যথা করে, ফটোফোবিয়া অর্থাৎ আলো লাগলে কষ্ট বাড়ে। ঘাড় ঘোরানো মুশকিল হয়, মাথা ঘাড় স্টিফ হয়ে যায়।
আম বাঙালি সব অসুখের সঙ্গেই অ্যাসিডিটি বা গ্যাস বা হজম সংক্রান্ত অসুবিধার সংযোগ খোঁজেন। এই প্রসঙ্গে গৌতম দাস জানালেন, স্ট্রেস ও অ্যাসিডিটির জন্যে অসুখ বাড়তে পারে। তবে অসুখটা থাকলে বাড়ে। অ্যাসিডিটি বা গ্যাস হলে এই রোগ হয় না। নাগাড়ে ঘাড় কাত করে বই পড়া বা কম্পিউটারে কাজ করলেও সমস্যা হয়। শরীরচর্চার অভাব এই অসুখ ডেকে আনে।
এক টানা কম্পিউটারে কাজ করলেও এই সমস্যা হতে পারে। ছবি: শাটারস্টক
সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া নির্ণয় করা হয়। এই ধরনের ব্যথায় আলো ও শব্দ সহ্য হয় না। খাওয়া-দাওয়ার ইচ্ছে চলে যায়, কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে নিউরোলজিস্ট বা পেন ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অ্যাকিউট অর্থাৎ ভয়ানক ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সবার আগে অসুখটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। এর জন্য নিউরোলজিকাল এগজামিনেশন করতে হয়। চিকিৎসক মনে করলে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার পরামর্শ দেন। রোগ সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হলে অক্সিপিটাল নার্ভ ব্লক করে রোগমুক্তি সম্ভব।
আরও পড়়ুন: কখন প্রয়োজন ভেন্টিলেটর? কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার এটির?
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির সাহায্যে চিকিৎসা করে, কখনও আবার বিশেষ ধরনের পেসমেকারের সাহায্যে চিকিৎসা করে এই ব্যথা সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা যায়। তবে এই অসুখের চিকিৎসার পরেও ফলো আপ করা দরকার। কোভিডের কারণে কোনও অসুখ চেপে না রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এক ভাবে বসে থাকবেন না। যে কোনও ব্যথা-বেদনার হাত থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy