Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঠোঁট রাঙাবে, স্বাস্থ্যবন্ধুও হবে লিপস্টিক গাছ

ফুলিয়া কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে এমন গাছ দেখে তাক লেগে গিয়েছিল কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। ওই কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা তাঁকে জানান, নিতান্ত ভ্রম অবশ্য নয়। এই গাছটিকে চলতি ভাষায় ‘লিপস্টিক গাছ’-ই বলা হয়।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৪৯
Share: Save:

ছোট ছোট ঝোপ। তাতে কি থরে থরে লিপস্টিক সাজানো! লালচে লালচে ফলগুলো দেখলে ভ্রম হতে বাধ্য।

ফুলিয়া কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে এমন গাছ দেখে তাক লেগে গিয়েছিল কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। ওই কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা তাঁকে জানান, নিতান্ত ভ্রম অবশ্য নয়। এই গাছটিকে চলতি ভাষায় ‘লিপস্টিক গাছ’-ই বলা হয়। এর নির্যাস দিয়ে ওষ্ঠাধর রাঙিয়ে নিতে পারেন বঙ্গললনারা। সর্বোপরি বঙ্গবাসীর স্বাস্থ্যরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এই গাছ।

কী ভাবে? কৃষি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই গাছটির আসল নাম অ্যাকিওটে (বিক্সা ওরেলানা)। আদতে মধ্য ও লাতিন আমেরিকার বাসিন্দা এই গুল্ম গোত্রের উদ্ভিদ লাল রঙের থোকা থোকা ফলের সুবাদেই লিপস্টিক গাছ হিসেবে বেশি পরিচিত। এর ফলের নির্যাস থেকে ভেষজ লাল রং তৈরি করা সম্ভব। সেই রং অনায়াসে বিভিন্ন রান্না এবং মিষ্টিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। একই ভাবে লাল লিপস্টিকে রাসায়নিক রঙের বদলে ব্যবহার করা যেতে পারে এই ভেষজ রং। খাবারে ও লিপস্টিকে এখন যে-ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তাতে যথেষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এই প্রাকৃতিক রঙে সেই বিপদ নেই।

কৃষিমন্ত্রী আশিসবাবু জানান, এই গাছটির ব্যবহারিক উপযোগিতা বিজ্ঞানীরা তাঁর কাছে ব্যাখ্যা করেছেন। ‘‘উত্তম প্রস্তাব। কী ভাবে ওই গাছ থেকে রং তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে কথা বলব। বিভিন্ন কৃষি খামারে এর বীজ দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে চাষিদেরও এই গাছ চাষে উৎসাহী করা হবে,’’ বলেন মন্ত্রী।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক প্রশান্তকুমার বিশ্বাস জানাচ্ছেন, খাবারে কঙ্গো রেড বা অন্য যে-সব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তা বেশি মাত্রায় শরীরে ঢুকলে ক্ষতি হতে পারে, আশঙ্কা থাকে ক্যানসারেরও। তা ছাড়া অনেক সময়েই ওই সব রং থেকে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। ইদানীং অ্যালঝাইমার্সের মতো যে-সব রোগ বাড়ছে, তার জন্য বিভিন্ন খাবারে এই সব ক্ষতিকর রঙের ব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে। তার বদলে এই ধরনের ভেষজ রং অত্যন্ত উপকারী।

লিপস্টিক গাছের ফলের নির্যাস কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, আমেরিকার আদিবাসীরা সেই বিষয়ে অনেক আগে থেকেই ওয়াকিবহাল বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। দেহ-মুখ রাঙাতে এই রং ব্যবহার করেন ওই আদিবাসীরা। লাতিন আমেরিকান এবং জামাইকান রান্নার বিভিন্ন পদে এর ব্যবহার রয়েছে। ব্রাজিলে মশলা হিসেবেও এর ব্যবহার সুবিদিত। এর নির্যাসে চুল রাঙানো হয় ইকুয়েডরে।

রঙের উৎসবে রাসায়নিক এড়িয়ে উদ্ভিজ্জ আবিরের কদর বাড়ছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, লিপস্টিক গাছ, বিশেষত তার রাঙা ফল আরও একটু এগিয়ে ঠোঁট রাঙানোর সঙ্গে সঙ্গে রসনা-রঞ্জন হয়ে উঠতে পারে। সব থেকে বড় কথা, তা হতে পারে মানবস্বাস্থ্যের বন্ধু এবং প্রহরী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE