সপ্তাহে দু’বার মাছ খেলে শিশুদের মধ্যে আচরণগত বদল হতে পারে, এমনই দাবি নতুন গবেষণায়। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, যে সব শিশু সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার মাছ খায়, তারা অনেক বেশি উদার মনের পরিচয় দিয়েছে। আর যারা মাছ খায় না, তাদের স্বভাবে স্বার্থপরতার প্রবণতা রয়েছে। স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাকারীরা এখন বাবা-মায়েদের পরামর্শ দিচ্ছেন, তাঁরা যেন সন্তানদের আচরণ উন্নত করার জন্য তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনেন।
নতুন গবেষণার প্রধান লেখক ক্যারোলাইন টেলর বলেছেন, ‘‘শিশুদের আচরণের সঙ্গে মাছ খাওয়ার সমানুপাতিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আচরণগত বিকাশ ঘটছে মাছ খেলে।’’ যদিও এই গবেষণা মূলত সামুদ্রিক মাছ নিয়েই করা হয়েছে। যেগুলিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম এবং আয়োডিনের উপস্থিতি বেশি। এই সমস্তই সামুদ্রিক খাবারে পাওয়া যায়, এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি দেয় শরীরকে।

যে সব শিশু সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার মাছ খায়, তারা অনেক বেশি উদার মনের পরিচয় দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
গবেষণা করা হয়েছে মূলত ৭-৯ বছর বয়সি ৬ হাজার শিশুকে নিয়ে। তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষকরা দেখেছেন, কী ভাবে সামুদ্রিক খাবার তাদের আচরণ এবং বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করে। তাদের মধ্যে মোট ২৮.৯ শতাংশ শিশু সপ্তাহে দু’বারের (পোর্শন) বেশি মাছ খেয়েছে এবং ৬৩.৯ শতাংশ শিশু সপ্তাহে ১৯০ গ্রাম মাছ খেয়েছে। ৭.২ শতাংশ শিশু সপ্তাহে এক বারও মাছ খায়নি।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সপ্তাহে কমপক্ষে ১৯০ গ্রাম মাছ খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে যে ৭ বছরের শিশুদের, তাদের তুলনায় সপ্তাহে যে ৭ বছরের শিশুরা একটিও মাছ খায়নি, তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ বেশি। ৯ বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটিই হয়ে যাচ্ছে ৪৩ শতাংশ।

শিশুদের আচরণের সঙ্গে মাছ খাওয়ার সমানুপাতিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
মাছ খাওয়ার সঙ্গে শিশুদের আচরণ এবং মানসিক উন্নতির সম্পর্ক নিয়ে আরও কিছু গবেষণা হয়েছে, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রভাব নিয়ে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণার কথা বলা যায়:
১. হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ডিএইচএ (ডোকোসাহেক্সাইনোনোইক অ্যাসিড) এবং ইপিএ (ইকোসেপেন্টানোইক অ্যাসিড) মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, মনোনিবেশ করার ক্ষমতায় উন্নতি ঘটাতে পারে।
২. 'দ্য আমেরিকান জর্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন' জার্নালে ২০১০-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে যে, মাছ এবং তাতে থাকা উপাদান (যেমন ওমেগা-৩) শিশুদের মধ্যে মনোনিবেশ করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এবং শৈল্পিক সত্তায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা সামাজিক আচরণের উন্নতির জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ডিএইচএ শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে, আচরণ এবং অনুভূতির মধ্যে ভারসাম্য আনে।
৩. 'জার্নাল অফ চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকায়াট্রি'-তে ২০০৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে, মাছের মধ্যে থাকা ডিএইচএ শিশুদের মধ্যে মনোযোগের ঘাটতি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার) এবং আচরণগত সমস্যার সমাধান করতে পারে।
আরও পড়ুন:
এ ছাড়াও, বেশ কিছু ছোট গবেষণায় ওমেগা-৩-এর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষামূলক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে, যা শিশুর আচরণ এবং সামাজিক উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে, এগুলি নিয়ে আরও বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও অনেকের দাবি।
তবে এই গবেষণাগুলি থেকে এ কথা স্পষ্ট, শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদার মনোভাব বা সহানুভূতির মতো আচরণগত বিকাশেও সাহায্য করছে এই ধরনের খাবার।