হঠাৎ করেই প্রচণ্ড গরম পড়ে গিয়েছে। রাস্তায় বেরোলেই রোদের তেজ ঝলসে দিচ্ছে। এমন গরমে বাড়ির বয়স্কদের সদস্যদের কষ্ট আরও বাড়ে। কারও পেটের সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে জলের পরিমাণ কমতে থাকে, আবার রোদে বেরোলে হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। বয়সকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। সে কারণে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। ফলে তাঁরা সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হন। গরমের সময়টা তাই বয়স্কদের সাবধানে রাখতেই হবে। শরীরে যাতে জলশূন্যতা তৈরি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ নজর দিতে হবে খাওয়াদাওয়াতেও।
তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি হলেই তা শরীরের পক্ষে সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করে যায়। তখন মূলত যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হল সানস্ট্রোক। ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল। তিনি জানান, এই বয়সে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রায় শর্করা, কোলেস্টেরেল বা যকৃতের সমস্যা থাকে। এ ছাড়াও অনেকেরই প্রস্রাব কম হওয়ার সমস্যা থাকে। এমন হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই বাইরে বেরোলে সঙ্গে ছাতা, জলের বোতল রাখতেই হবে। রোদে বেশি ক্ষণ থাকবেন না। শরীরে অস্বস্তি হলেই ছায়া আছে এমন জায়গায় গিয়ে বসতে হবে। মুখে-ঘাড়ে জল দিলে কষ্ট কমবে। মাথায় ঠান্ডা জলে ভেজানো কাপড়ের টুকরো দিয়ে জলপট্টি দিতে পারলেও কাজ হবে। ঘাড়ে ঠান্ডা জলে ভিজানো টাওয়েল বা গামছা পেঁচিয়ে রাখতে হবে। তা হলে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
গরমে বমি শুরু হলে চিনি দেওয়া জল আগে খাওয়াতে হবে। ডাবের জলও এ ক্ষেত্রে কার্যকর। একটু পরে ঠান্ডা জলে স্নান করতে হবে। যদি পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে, তা হলে স্যালাইনের মাধ্যমে প্যারাসিটামল ইঞ্জেকশন দিতে হবে। পালস ও রক্তচাপ মেপে নিতে হবে।
বয়স্ক ব্যক্তিদের একবারে বেশি খাবার না দিয়ে অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে। বাইরের খাবারের বদলে বাড়িতে তৈরি কম তেলমশলাযুক্ত খাবার দেওয়া উচিত। যদি দাঁতের সমস্যা থাকে বা চিবিয়ে খেতে না পারেন, তা হলে গলা ভাত, সেদ্ধ সব্জি বা তরল জাতীয় খাবারই বেশি খেতে হবে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। পর্যাপ্ত জল খেতে হবে, জলের ভাগ বেশি, এমন ফল খাওয়াতে হবে— যেমন শসা, তরমুজ। নরম পানীয় না খেয়ে বাড়িতে ডিটক্স পানীয় তৈরি করে দিন। এক বোতল জলে শশার টুকরো, লেবু, আদাকুচি, পুদিনাপাতা ফেলে ঘণ্টা কয়েক রেখে দিন। এই জলই সারা দিন ধরে অল্প অল্প করে দিন। এতে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কমবে। বয়স্কদের দিনে যে কোনও দু’রকম প্রাণিজ প্রোটিন দিন। ডিম খেয়ে হজম না হলে, ডিমের কেবল সাদা অংশটি দিন। হজমের জন্য এবং পুষ্টিগুণের কারণেও মাংসের থেকে মাছ খাওয়া ভাল। ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আপেল, কলা, স্ট্রবেরি, বিট, গাজর, ব্রকোলি পড়বে। দিনে এক বার যে কোনও মরসুমি ফল বা টাটকা ফলের রস খাওয়া দরকার। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলেও সমস্যা হতে পারে। তাই আয়রন- সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। দিনে একটি-দু’টি খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যাবে।