Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Cakes

Kolkata Bakers: বড়দিনের কেক মানেই নিউ মার্কেট? না কি সেরার শিরোপা কেড়ে নিচ্ছেন শহরের তরুণ তুর্কিরা

বড়দিনের আগে ধর্মতলা-পার্কস্ট্রিটে ভিড় উপচে পড়ে ঠিকই। কিন্তু কেক তৈরির কৌলিন্য কি এখনও রয়েছে এ পাড়ায়?

বাড়িতে বিশেষ অতিথি এলে এখন আর নিউ মার্কেট না গিয়ে ইনস্টাগ্রাম থেকে কেক-প্যাস্ট্রি অর্ডার করেন সকলে।

বাড়িতে বিশেষ অতিথি এলে এখন আর নিউ মার্কেট না গিয়ে ইনস্টাগ্রাম থেকে কেক-প্যাস্ট্রি অর্ডার করেন সকলে। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:৪৩
Share: Save:

নিউ ইয়র্কে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সমীর। হঠাৎই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে বিখ্যাত ‘চিজকেক ফ্যাক্টরি’র চিজকেক খাওয়ান। তার পর থেকে জীবনটাই বদলে যায় সমীরের! চিজকেকের প্রেমে পড়ে যান এমন ভাবেই যে, দেশে ফিরে গোটা একটা ব্যবসা শুরু করে ফেলেন এই কেক ঘিরেই। এখন তার নাম ‘চিজকেক_স্যাম’। রমরমিয়ে চলছে সেই ব্যবসা। কারণ শহরে বসে নিউ ইয়র্কের মতো খাঁটি চিজকেক খাওয়ার স্বাদ পেয়েছে কলকাতা।

প্রত্যেক সফল ব্যবসার পিছনেই একটি গল্প থাকে। ১০০ বছরের পুরনো বেকারি ‘নাহুমস’ বা সাহেবপাড়ার ‘ফ্লুরিজ’ ঘিরেও রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের সঙ্গে কেউ টেক্কা দিতে না পারলেও, শহরের এই অভিজাত বেকারিগুলির জৌলুস খানিকটা হলেও স্মান করে দিয়েছেন শহরের সমীররা।

সমীর আমিরের দাদু কলকাতার বিখ্যাত বিরিয়ানি বিক্রেতা ‘আমিনিয়া’র কর্ণধার। দাদুর দৌলতে নাতির ছেলেবেলাটা বেশির ভাগই কেটেছিল রান্নাঘরে। পারিবারিক ব্যবসার ভার এক দিন যে তাঁকে নিতে হবে, তা তিনি ভাল করেই জানতেন। কিন্তু একান্ত নিজের কিছু শুরু করতে চেয়েছিলেন। একটা চিজকেক সেই সুযোগটা করে দিল। এক বছরের চেষ্টায় তিনি নানা ধরনের চিজকেক তৈরি করে ইনস্টাগ্রামের সাহায্যে চিজকেকের ব্যবসা শুরু করে ফেললেন। বেকিংয়ে এতই তাঁর উৎসাহ তৈরি হয় যে লন্ডনের ‘লা কর্দন ব্লু’তে তিনি গত তিন মাস ধরে মন দিয়ে পড়াশোনা করছিলেন এই ফরাসি খানা এবং কেক-প্যাস্ট্রি বানানোর টুকিটাকি নিয়ে। এত দিন তাঁর ব্যবসা চলত ইনস্টাগ্রাম থেকেই। এখন শহরে ফিরে তিনি একটি ক্যাফে খুলতে চান।

ভাল কেক প্যাস্ট্রি কলকাতায় তৈরি করার সবচেয়ে বড় সমস্যা খাঁটি উপাদান জোগাড় করা।

ভাল কেক প্যাস্ট্রি কলকাতায় তৈরি করার সবচেয়ে বড় সমস্যা খাঁটি উপাদান জোগাড় করা। ছবি: সংগৃহীত

সমীরের মতো আরও অনেকে রয়েছেন এই শহরে। উচ্চ মানের কেক-প্যাস্ট্রি খেতে ইচ্ছে করলে শহরবাসী এখন তাঁদেরই শরণাপন্ন হন। বিদেশ থেকে আত্মীয়রা বাড়ি এলে এখন আর নাহুমসে কেক কিনতে ছোটেন না কেউ। বরং অনলাইনে অর্ডার করেন ‘গুরমে’ কেক। তেমনই এক ইনস্টাগ্রাম পেজ ‘ব্রাউন্‌স_ফুড উইথ লভ’। এক বছর কেটারিংয়ের ব্যবসা করার পর বনিতা টন্ডনের মনে হয়েছিল, তাঁর কোনও খাবারই ছকভাঙা নয়। তাই তিনি ফ্রান্স উড়ে গিয়েছিলেন বেকিংয়ের নিত্য নতুন কৌশল শিখতে। কী করে একটা কেকের উপরটা আয়নার মতো স্বচ্ছ করা যায়, কী করে নানা রকম স্তর দিয়েও নানা স্বাদের মুস তৈরি করা যায়, কী করে ভেলভেটের মতো দেখতে কেকর পরত বানানো যায়, সে সবই তিনি শিখেছিলেন কেক-প্যাস্ট্রির দেশ থেকেই। এখন তাঁর তৈরি ‘অনত্রমেজ’ কেক (ঠান্ডা নানা স্তরের কেক) শহরের প্রিয়। ইনস্টাগ্রামে তিনি নতুন খাবারের তালিকায় প্রকাশ করতে না করতেই সব অর্ডার করে ফেলেন শহরবাসী।

কলকাতা বসে খাঁটি ফরাসি কেক-প্যাস্ট্রি খাওয়ার মজা যতটা, যাঁরা তার জোগান দিচ্ছেন, তাঁদের সেগুলি তৈরি করার ঝক্কি তার চেয়ে অনেক বেশি। মুশকিল হয় খাঁটি উপাদান জোগাড় করায়। শহরের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলের বেকারিগুলি সেই চেষ্টা সফল ভাবে চালিয়ে গিয়েছে অনেক বছর ধরেই। কিন্তু এই প্রথম ছোট ছোট বেকারিও সেই লড়াইয়ে সামিল হতে পেরেছে। তার মধ্যে অন্যতম রাসেল স্ট্রিটের ‘প্যাটিসিয়ারি বাই ফ্রানসিসকা’। এই ফ্রেঞ্চ ক্যাফের কর্ণধার ফ্রানসিসকা জার্মানি থেকে ভারতে এসেছিলেন কয়েক বছর আগে। কলকাতার নানা বেকারির কেক-টার্ট-পাই খেয়ে তিনি বুঝেছিলেন, এখানে সচারচর টাটকা ফল বা খাঁটি উপাদান সে ভাবে কেউ ব্যবহার করেন না। তাই নিজেই ক্যাফে খুলে বসেন। উন্নত মানের চকোলেট এক্লেয়ার্স বা চকোলেট মুজ খাওয়ার জন্য এখন সেখানে সারা বছরই লোকের ভিড় উপচে পড়ে।

রাশেল স্ট্রিটে বেকারিতে ভিড় উপচে পড়ে খাঁটি চকোলেট একলেয়ার্স খাওয়ার জন্য।

রাশেল স্ট্রিটে বেকারিতে ভিড় উপচে পড়ে খাঁটি চকোলেট একলেয়ার্স খাওয়ার জন্য। ছবি: সংগৃহীত

উপাদান নিয়ে খুঁতখুঁতে সমীরও। তিনি বললেন, ‘‘অনেকেই নিরামিষ চিজকেকের খোঁজ করেন। খারাপ লাগলেও আমি তাঁদের ফিরিয়ে দিই। জিলাটিন (ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি) ছাড়া আমি চিজকেক তৈরি করতে নারাজ। আর যাঁরা ভাবেন বেক না করে চিজকেক তৈরি করা যায়, আমি কিছুতেই তাঁদের সঙ্গে একমত হতে পারি না।’’

কেউ নিজের বাছাই করা পথ থেকে সরতে নারাজ। আবার কেউ কেউ রয়েছেন যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভয় পান না। যেমন ‘জি’স কফি শপ’এর জরিন দেশাই। অনেক ছোট থেকেই রান্নায় মজেছিলেন জরিন। বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় আখতার আলির মেয়ে জরিন তাঁর অনেক পারিবারিক রেসিপি দিয়ে অনেক সযত্নে সাজিয়েছিলেন তাঁর কফি শপের মেনু। নানা ধরনের কেক এবং অন্য বেকারির টুকিটাকি এখনকার জনপ্রিয় খাবার। এক বার তাঁকে এক ক্রেতা জানিয়েছিলেন উল্টানো আনারসের কেক কাঁচা আনারস ব্যবহার না করে তিনি সেগুলি ‘ফ্লম্বে’ (কোনও অ্যালকোহলে ডুবিয়ে করে রাখা) করে নিতে পারেন। জরিন সেই পরামর্শ নিয়েছিলেন। এবং তার পর থেকে যে তাঁর ‘আপসাইড ডাউন পাইনঅ্যাপ্‌ল কেক’ আরও সুস্বাদু হয়ে গিয়েছে, তা হাসিমুখে মেনে নিলেন জরিন।

কলকাতা বরাবরই মিষ্টিপ্রিয়। রসগোল্লা-মিষ্টি দইয়ের পাশাপাশি কেক-প্যাস্ট্রি খাওয়ার জন্যেও সমান ভাবে মুখিয়ে থাকে। সেই কারণেই শহরের পুরনো বেকারিগুলি এখনও বড়দিনের আগে রমরমিয়ে চলছে। কিন্তু শহরের বুকে যখন তরুণ তুর্কিরা এক ফালি ইউরোপের স্বাদ এতে দিতে পারছেন, তখন কলকাতা তা চেখে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবে না একেবারেই। ঐতিহ্য না কি নতুনের স্বাদ, সেরা কোনটা— সেই তর্ক চলতেই থাকবে। পাশাপাশি কলকাতার বেকারির মানচিত্রে জ্বলজ্বল করবে নতুন কিছু তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Cakes Bakery Kolkata christmas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE