Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Anuttama Banerjee

Parenting: ‘ভাল মা না হলে লোকে কী বলবে’ আলোচনায় মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’-র ত্রয়োদশ পর্বে অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় শুনলেন মাতৃত্ব ও তার সংশয়ের কিছু আখ্যান।

লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা

লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২২ ২১:২০
Share: Save:

‘আদর্শ’ মায়ের সংজ্ঞা ঠিক কী, নিশ্চিত করে উত্তর দিতে পারেন না কেউই। অথচ নিজের দৃষ্টিতে মাতৃত্বের ভূমিকায় কাউকে মানানসই না মনে হলেই তাঁকে ‘মা হওয়ার অযোগ্য’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব নেই দুনিয়ায়। সমাজের এই প্রচলিত ধারণার জালে কখনও কখনও জড়িয়ে যান নারীরা নিজেরাও। নিজেকে নিয়েই তৈরি হয় সংশয়— ‘‘ভাল মা না হলে লোকে কী বলবে’’। তেমনই কিছু অনুভূতির কথা রবিবার উঠে এল আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব এবং ফেসবুকের অনুষ্ঠান ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’-র ত্রয়োদশ পর্বে।

অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়

অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজস্ব চিত্র

কলেজ শিক্ষিকা লিপিকা দত্ত বলেছেন, ‘‘মা হওয়ার পরীক্ষা শুরু হয়েছিল সেই নার্সিংহোম থেকে।’’ শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রাথমিক ভাবে স্তন্য দানে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল তাঁর। আর তাতেই তির্যক মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। কর্মরত নারী হিসেবে বারবার তাঁর নিজেরই মনে তৈরি হয় এক ধরনের অপরাধবোধ। সর্বক্ষণ সন্তানের কাছে না থাকার ফলে সন্তানের বেড়ে ওঠায় কোনও রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি না, বারবার মনে আসছে সে কথাও। একই কথা উঠে এসেছে একাধিক চিঠিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মা জানিয়েছেন, কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে দিনের একটি বড় অংশ কাটাতে হয় বলে শ্বশুরবাড়ির তরফে তাঁকে দাগিয়ে দেওয়া ‘অযোগ্য মা’ বলে। চাপ দেওয়া হয় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্যেও। শুধু যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে যান তাঁরাই নন, গৃহবধূরাও এই ধরনের কথার সম্মুখীন হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জানিয়েছেন, বাড়ির সমস্ত কাজ সামলে সাত মাসের সন্তানের দেখাশুনা করার সময় যদি তিনি ক্লান্তি বোধ করেন তখনও তাকে কথা শুনতে হয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে। তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ‘বাচ্চার সব দিক সামলে বাড়ির কাজ করার মধ্যেই কিন্তু মা হওয়ার সার্থকতা।’

চিঠিগুলি পড়ে মনোবিদ অনুত্তমা জানান, এই মানসিকতা ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, মা হওয়া মানেই একজন নারীকে বাকি সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রাধান্য দিতে হবে সন্তানকে। তিনি বলেন, ‘‘এই ধারণার ভিত্তিতে ছিল নারীকে কেবল স্ত্রী, কন্যা কিংবা মা হিসেবে দেখার প্রবণতা। এর বাইরে যেন আর কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না নারীর।’’ কিন্তু এখন নারীর পূর্ণতার সংজ্ঞা কেবল মাতৃত্বে সীমাবদ্ধ নেই বলেই মনে করেন তিনি। মনোবিদ জানান, নারীরা চাইলে নিশ্চয়ই মা হবেন, কিন্তু মা হওয়ার পাশাপাশি তিনি আরও অনেক কিছু হচ্ছেন। পরিবারে তাঁর নানান দায়িত্ব থাকতে পারে, পরিবারের বাইরেও তাঁর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব থাকতে পারে। কাউকে ভালবাসা মানেই সর্বক্ষণ তার দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকতে হবে এমন কোনও কথা নেই বলেও মত তাঁর। বরং সন্তানের বড় হয়ে ওঠায় এই সান্নিধ্য পাওয়া না পাওয়ায় যে ভারসাম্য, তার বোঝাপড়াটুকু থাকাও জরুরি বলেই মত অনুত্তমার। ভাল মা না হতে পারার অপরাধবোধ নিয়ে অনুত্তমার অভিমত, ‘‘সময় দেওয়া মানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সন্তানের সঙ্গে থাকা নয়, বরং সময় দেওয়া মানে, যেটুকু সময় মা ও সন্তান একসঙ্গে থাকছেন সেই সময়টিকে আরও একটু যত্ন দেওয়া। আরও একটু পূর্ণতা দেওয়া।’’ পাশাপাশি সদ্যোজাত সন্তানের পরিচর্যায় শুধু মা নন, বাবাদেরও যে সমান দায়িত্ব তাও মনে করিয়ে দেন মনোবিদ।

সভ্যতার ইতিহাস কী অদ্ভুত! প্রণয় আর বিচ্ছেদের অবিরাম বৃত্তাকার চলনের মাঝে গড়ে ওঠা সংসারের নিত্যতার দায়ভার কেবলমাত্র একটি প্রজাতির কাছে। আসলে আমরা ভুলে যাই, নারী সভ্যতার অর্ধেক চালিকা শক্তির কথক! আধুনিক সমাজের সামাজিক যত চুক্তি তার কোনওটিই নারীর একার নয়, পুরুষদেরও বুঝতে হবে সে কথা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE