Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
নিয়মিত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে চাপ পড়ে পায়ের নার্ভ এবং মাসলে
Health

যাঁদের দাঁড়িয়ে কাজ, তাঁরা আগাম সতর্ক হন

পায়ে ব্যথা শুনতে হয়তো গুরুতর রোগ মনে হচ্ছে না, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ অনেক জটিল রোগের জন্ম দেয়।

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ অনেক জটিল রোগের জন্ম দেয়।

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ অনেক জটিল রোগের জন্ম দেয়। ফাইল চিত্র।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:১৬
Share: Save:

পেশাগত কারণে অনেককেই ক্রমাগত দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। এর থেকে পায়ে ব্যথা, কোমরে চাপ... ইত্যাদি সমস্যার সূত্রপাত হয়। পায়ে ব্যথা শুনতে হয়তো গুরুতর রোগ মনে হচ্ছে না, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ অনেক জটিল রোগের জন্ম দেয়। যেহেতু পেশার কারণেই দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়, তাই সমস্যার উৎপত্তিগত উৎস থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মানলে সমস্যা জটিলতর হওয়া থেকে রুখে দেওয়া সম্ভব।

কী কী সমস্যা দেখা দেয়

ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক, চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, দোকানে বা মলে যাঁরা কর্মরত... প্রত্যেক দিন সাত-আট ঘণ্টা যাঁরা টানা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের পায়ে ব্যথা-সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক কী কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তা বিশদে বললেন নিউরোলজিস্ট জয়ন্ত রায়।

প্রথমত, এঁদের স্পাইনের উপরে খুব চাপ পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, লাম্বার স্পাইনে ক্রনিক পেন হচ্ছে। সেই ব্যথা ক্রমশ পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় সমস্যা হল, পায়ের তলার নার্ভে চাপ পড়ছে। খালি পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করা ক্ষতিকর। ভাল জুতো না পরলেও এই সমস্যা হয়। আমাদের পায়ের পাতায় যে কার্ভ আছে, তাকে বলা হয় আর্চ অব দ্য ফুট। দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটার সময়ে ওই আর্চ ব্রিজের কাজ করে। যাঁরা সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের ওই আর্চের উপরে অসম্ভব চাপ পড়ে। তার থেকে পায়ের তলার নার্ভে চাপ পড়ে ক্রনিক পেন তৈরি হয়। যাঁদের ফ্ল্যাট ফুট অর্থাৎ আর্চ নেই, তাঁদের সমস্যাটা আরও বেশি।

এ দু’টি ছাড়া আরও একটি সমস্যার কথা বললেন ডা. রায়, যার সঙ্গে নিউরোলজির সরাসরি যোগ নেই। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে ভ্যারিকোস ভেনের সমস্যা দেখা দেয়। ‘‘হাঁটার সময়ে আমাদের পায়ের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সেই ব্লাড ভেনের মাধ্যমে হার্টে পৌঁছয়, আবার পায়ে ফিরে আসে। যাওয়ার সময়ে রক্তকে অ্যান্টি গ্র্যাভিটি যেতে হচ্ছে। এই অ্যান্টি গ্র্যাভিটি যাওয়ার জন্য আমাদের মাসলগুলো রক্তকে পাম্প করে উপরে তোলে। এবং আমাদের ভেনের মধ্যে একটা ভাল্ভ থাকে, যাতে রক্তটা উল্টো দিকে নেমে না আসে। ক্রমাগত যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের পায়ের ওই ভাল্ভগুলো অকেজো হয়ে যায়। এতে ব্লাড পায়ের শিরায় এসে জমা হতে থাকে এবং শিরাগুলো দড়ির মতো ফুলে যায়। একেই ভ্যারিকোস ভেন বলা হয়,’’ বিস্তারে বললেন ডা. রায়। অনেক সময়ে শিরাগুলো এমন ভাবে জুড়ে যায় যে, পা ফুলতে শুরু করে, ব্যথা হয়। ভ্যারিকোস ভেন সারাতে সার্জারিই একমাত্র উপায়। একদম প্রথম দিকে ধরা পড়লে কমপ্রেশন স্টকিংস বা বিশেষ ধরনের মোজা পরানো হয়। এতে পায়ের রক্ত চলাচল খানিকটা স্বাভাবিক হয়। এই সমস্যায় ভুগলে রাতে শোয়ার সময়ে পায়ের তলায় দু’তিনটি বালিশ দিয়ে পা উঁচু করে শুতে হবে। ভ্যারিকোস ভেনের সমস্যা বাড়লে দাঁড়িয়ে কাজ করা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে, বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সোনালি সেনগুপ্ত আরও কয়েকটি সমস্যার উল্লেখ করলেন, যেগুলো দাঁড়িয়ে থাকার ফলে দেখা যায়। ‘‘সাইটিক নার্ভ আমাদের কোমর থেকে পা পর্যন্ত গিয়েছে। দাঁড়িয়ে কাজ করলে এই নার্ভের উপরে চাপ পড়ে। এই অংশের মাসলের পাম্পিং অ্যাকশন দরকার। মাসল টাইট হয়ে গেলেই ব্যথা হয়। মাসলকে রিল্যাক্স করার সময় দিতে হবে আমাদের। টাইট হয়ে যায় হ্যামস্ট্রিংও। তার থেকে লোয়ার কাফ মাসল নমনীয়তা হারায়। নিয়মিত স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ় করলে এই সমস্যাগুলো থেকে বেরোনো যায়,’’ বললেন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সেনগুপ্ত। যাঁরা দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁরা কিছু বিষয়ে অবহেলাও করেন। যেমন জল কম খাওয়া। ইউরিন চেপে যাওয়া। সোনালির মতে, ‘‘এগুলোর মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। জল যথেষ্ট পরিমাণে না খেলে মাসল শুকিয়ে যায়। আবার ইউরিন চেপে রাখার ফলে কুঁচকির মাসল শুকিয়ে যায়। এতে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজের ক্ষেত্রে পায়ে যন্ত্রণা হয়।’’

সমস্যার সমাধান

ডা. রায় এবং ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সেনগুপ্ত দু’জনেই ভাল জুতো পরার পরামর্শ দিচ্ছেন। নরম সোলের স্নিকার্স ধরনের জুতো পরতে হবে। সিলিকন সোল কিনতে পাওয়া যায়, সেটাও জুতোর ভিতরে ফিট করিয়ে নেওয়া যায়। যাঁদের দাঁড়িয়ে কাজ, তাঁরা আগাম সতর্কতা হিসেবে এটি করতে পারেন।

লাম্বার স্পাইনের সমস্যার জন্য এক্সারসাইজ় ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। স্পাইনের মাসল স্ট্রং রাখতে হবে ব্যায়ামের মাধ্যমে।

আসল কথা হল, পায়ের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে। এর জন্য স্ট্রেচিং, সাইক্লিংয়ের মতো এক্সারসাইজ় করতে হবে। টো-হিল রেজ়, পায়ের পাতা ক্লক ওয়াইজ-অ্যান্টি ক্লক ওয়াইজ় ঘোরানো। পায়ের তলায় একটা বল নিয়ে মাসাজ করা। যেমন, মেঝেতে বল রেখে পা দিয়ে গোড়ালি থেকে আঙুলের দিকে যাওয়া এবং তার পরে পিছিয়ে আসা।

কাজের মাঝে ছোট জায়গার মধ্যেই খানিক হাঁটাহাঁটি করে নেওয়া যায়। একটু বিরতি নিয়ে চেয়ারের উপরে একটা পা নব্বই ডিগ্রিতে তুলে দিয়ে শরীরটা সামনের দিকে ঝোঁকালে মাসল স্ট্রেচ হবে। এর পর আবার অন্য পা একই ভাবে স্ট্রেচ করুন।

রান্নাঘরে প্রত্যেক দিন যাঁরা দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁরাও পায়ের ব্যথায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে সঙ্গে একটা ছোট্ট পিঁড়ি বা নিচু টুল রাখুন। একটা পা টুলে আর একটা পা মাটিতে রেখে কাজ করুন। কিছুক্ষণ পরে অন্য পা টুলে রেখে দিন।

বাড়ি ফিরে হালকা গরম জলে পা ডুবিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। এতে ক্লান্তিও কেটে যাবে, পায়ের মাসল-নার্ভ রিল্যাক্সড হবে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে বলেই, তাঁরা আগাম সতর্ক হওয়ার কথাও ভাবেন না। পায়ে এই জাতীয় সমস্যা হলে কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, সেটাও অনেক সময়ে বুঝতে পারেন না অনেকে। গোড়া থেকেই যদি স্ট্রেচিং করা হয় এবং ভাল জুতো পরা যায়, তা হলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই মেলে।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Pain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy