ক্লিওপেত্রা থেকে নেফেরতিতি, অথবা নেফেরতারি। সৌন্দর্যের ইতিহাস গড়েছিলেন মিশরের এই রানিরা। রূপ, বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব দিয়ে মুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা রাখতেন সেই দেশের রানিরা। তাঁদের সৌন্দর্য আজও ঈর্ষণীয়। কিংবদন্তি রানিদের রূপচর্চা কিন্তু ঘরোয়া সাধারণ উপকরণ দিয়েই করা হত।
আপনার লক্ষ্য যদি হয় সে যুগের মিশরীয় রানিদের মতো রূপচর্চা ও ত্বকচর্চা করা, তা অসম্ভব নয়। প্রাচীন পদ্ধতিতেই নিজেদের ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। মিশরের প্রাচীন সৌন্দর্য-ধারণার কিছু অংশ কিন্তু এখন পৃথিবীর অনেকাংশেই চালু রয়েছে। মিশরীয়দের রূপের রহস্যের দু’চার টুকরো দেওয়া হল নীচে।
আরও পড়ুন:
মেকআপ- ‘আর্টসি’র (এক শিল্প ইতিহাসবিদের পুত্র কার্টার ক্লিভল্যান্ড প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প সংক্রান্ত ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন) তথ্য অনুযায়ী, মিশরীয় সাম্রাজ্যের আদি যুগ থেকে, সকল সামাজিক শ্রেণির পুরুষ এবং মহিলা আইলাইনার, আইশ্যাডো, লিপস্টিক এবং রুজ় ব্যবহার করতেন। মরুভূমির সূর্যের তীব্র আলো থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য লিঙ্গ নির্বিশেষে কাজল পরতেন, যা তৈরি হত প্রাকৃতিক উপায়েই। ‘ওকর’ নামে এক প্রকার রঞ্জক মাটির সঙ্গে পশুর চর্বি বা উদ্ভিজ্জ তেল দিয়ে তৈরি হত লিপস্টিকের রং। সেই রং রুজ় হিসেবে গালেও মাখা হত। যদিও শোনা যায়, ক্লিওপেত্রার জন্য নাকি গুবরে পোকাকে মেরে লিপস্টিকের নিখুঁত লাল রং তৈরি হত।
কিন্তু কেবল মেকআপই তাঁদের সৌন্দর্যের রহস্য নয়। কোনও রকম মেকআপ করার আগে এবং পরে তাঁরা ত্বকের যত্ন নিতেন।

রানিদের সাজের সরঞ্জাম। ছবি: সংগৃহীত।
ত্বকের যত্ন- ডেড সি-র লবণ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতেন কেউ কেউ। কেউ আবার দুধ দিয়ে স্নান করে ত্বকের যত্ন নিতেন। দুধ ও মধুর মিশ্রণ খুবই জনপ্রিয় ছিল সে কালে। তা ছাড়া ফুল বা মশলা মিশ্রিত তেল লাগাতেন তাঁরা। রানি ক্লিওপেত্রা নাকি নিয়মিত দুধ দিয়েই স্নান করতেন। দুধের মধ্যে মেশানো হত ল্যাভেন্ডার, মধু এবং গোলাপের পাপড়ি। বিলাসবহুল এই স্নান অকালবার্ধক্য রোধ করার ক্ষমতা ধরে এবং ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা দেয়।
চুলের যত্ন- চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য অলিভ অয়েল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি ত্বককে নরম এবং চুলকে সজীব রাখে। তা ছাড়া ক্যাস্টর অয়েল, সজনে পাতা, তিলের বীজের মিশ্রণ দিয়েও বিশেষ তেল তৈরি করে চুলে মাখতেন মিশরীয় রাজ্ঞীরা। হেনা পাতা বেটে সেটি মেখেও কেশচর্চা করতেন তাঁরা। তা ছাড়া লিঙ্গ নির্বিশেষে পরচু্লা পরতেন বলেও জানা গিয়েছে।

(বাঁ দিকে) কাজল রাখার পাত্র। চিরুনি। (ডান দিকে) ছবি: সংগৃহীত।
ফেস মাস্ক- মুখের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে ফেস মাস্ক ব্যবহার ক্রতেন, যা তৈরি করা হত মূলত ডিম দিয়ে। এ ছাড়া অলিভ অয়েলও ছিল তাঁদের ত্বকচর্চার বিশেষ অঙ্গ।
গোলাপ জলের ব্যবহার- স্নানের সময় এবং স্নানের পরে গোলাপজলের ব্যবহার ক্লিওপেত্রার সময় থেকেই জনপ্রিয়। তা আজও সেই দেশের মেয়েদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন:
সুগন্ধি- শিল্প ও নন্দনতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ রেইনা গাত্তুসোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে সুগন্ধি এবং শরীরে মাখার তেল ছিল যৌন উদ্দীপক। মসৃণ, সুগন্ধযুক্ত ত্বক, সৌন্দর্য এবং যৌনতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। তাই প্রসাধন সামগ্রীর মধ্যে সুগন্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ওয়াক্সিং- গরম মোমের বদলে মিশরীয়রা মধু এবং চিনির মিশ্রণ দিয়ে ওয়াক্সিংয়ের (লোম অপসারণ) একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। এতে ব্যথাও কম হত।