লেহ শহর। ছবি: সংগৃহীত
প্রায় দেড় বছর কোথাও লম্বা বেড়াতে যাননি। করোনা-লকডাউন-ট্রেন, অনিয়মিত-প্লেনের ঠিকঠিকানা নেইয়ের চক্করে হাত-পা-মাথা যখন প্রায় থম মেরে গিয়েছে, তখনই যদি মনে হয়, লাদাখ যাবেন, তা হলে ইচ্ছা হলেই যেতে পারবেন? পারবেন। শুধু মনে রাখুন কিছু টোটকা।
এক: কী ভাবে যাবেন? সহজ উত্তর, বিমানে। প্রথমে দিল্লি, সেখান থেকে লেহ। কারণ, ট্রেনে দিল্লি, সেখান থেকে বাসে মানালি বা শ্রীনগর হয়ে আবার বাসে বা গাড়িতে লাদাখের সদর শহর লেহ পৌঁছনো এই পরিস্থিতিতে ঝামেলার। তাই বিমানে লেহ পৌঁছনোই ভাল। তবে বিমানভাড়া হিসেব করার সময়ে কয়েকটি কথা মাথা রাখা দরকার। যে কোনও সময়ে বিমান বাতিল হতে পারে। তখন আবার অন্য বিমানের টিকিট কাটতে হবে। তাতে অতিরিক্ত কিছুটা টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
দুই: কোভিড নিয়ে কতটা কড়াকড়ি? লেহ শহরে প্রবেশের জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট সঙ্গে থাকা বাধ্যতামূলক। পরীক্ষায় কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়লে যাওয়ার অর্থ নেই। নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে পারলে তবেই বিমানবন্দর থেকে ঢোকা যাবে শহরে। পরীক্ষা করাতে ভুলে গেলে বিমানবন্দরেই পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে গোটা দিন সেখানে আটকে থাকতে হবে।
তিন: উঠবেন কোথায়? লেহ শহরের অধিকাংশ হোটেলই খোলা। সেখানে ঘর পেতে বিশেষ কষ্ট হবে না। আগে থেকে অনলাইনে বুকিং সেরে রাখতে পারেন। ওখানে গিয়েও ঘর খুঁজে নিতে পারেন। দৈনিক ৮০০-৯০০ টাকাতেও ঘর পাওয়া সম্ভব। শহরের বাইরে প্রকৃতির মাঝে হোটেল পেতে দৈনিক হাজার দেড়েক টাকা বাজেট যথেষ্ট। তবে খুব আরামে থাকতে চাইলে সাধ্যমতো বাজেট বাড়িয়ে গেলেই হল। এ সব হোটেলে থাকার জন্য কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট দেখানোর প্রয়োজন নেই।
চার: খাবেন কোথায়? অধিকাংশ থাকার জায়গাতেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। না হলে শহরে গাদা গাদা রেস্তরাঁ তো রয়েছেই। তবে আমিষ খাবার খেতে পছন্দ করলে কয়েকটি কথা মনে রাখা দরকার। হঠাৎ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পারেন, সে দিন ‘ড্রাই ডে’। এর অর্থ অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা নয়। সে দিন আমিষ পাওয়া যাবে না। কবে ‘ড্রাই ডে’ হবে, তা আগে থেকে ঠিক থাকে না। হঠাৎ সিদ্ধান্ত হয়।
পাঁচ: ঘুরবেন কী ভাবে? লাদাখে এখনও পরিবহন ব্যবস্থা তত উন্নত নয়। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়ার জন্য নিজের গাড়ি বা বাইকই ভরসা। গাড়িভাড়া যাতে মাত্রাছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য সরকারি ভাবেই ভাড়ার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া আছে। তার উপরে ভাড়া কেউ চাইতে পারে না। যদিও অধিকাংশ চালক তার চেয়ে কম ভাড়াতেই রাজি হয়ে যান। দীর্ঘ লকডাউনে আয় কমেছে সকলেরই। তাই সকলেই চান বেশি কাজ পেতে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অন্যের চেয়ে কম ভাড়া।
ছয়: কী কী পোশাক নেবেন? পোশাক নির্বাচনের জন্য পরিবেশ কেমন, তা মনে রাখা দরকার। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে লাদাখে ব্যাপক ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। তার আগে গেলে ধরে নিতে পারেন, রাতে পাঁচ-ছয় ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা নামবে না। আর দিনের বেলা ২০ ডিগ্রি। সেই হিসেবে জামাকাপড় নেওয়াই ভাল। তবে দুপুরে বেশ গরম। সেই সময়ের জন্য হালকা জামাকাপড় পরে থাকাই ভাল।
সাত: ভিড় কেমন? করোনার ভয় একটু কাটতেই লাদাখে ভিড়। লেহ শহরের বাজারে হাঁটতে হাঁটতেই প্রতি ৫০ মিটার অন্তর কানে আসতে পারে বাঙালি পর্যটকদের কথোপকথন। দেশের অন্য প্রদেশের পর্যটকদের ভিড় তো আছেই। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। মাস্ক খুললে এমনিতেই পুলিশকর্মীর ধমক শুনতে হতে পারে। তা ছাড়াও ভিড় এড়িয়ে চলাই ভাল।
আট: ঘুরবেন কোথায় কোথায়? লাদাখে সেপ্টেম্বর থেকে ঠান্ডা বাড়তে শুরু করে। তার আগে পর্যটকদের পছন্দের জায়গা নুব্রা উপত্যকা এবং প্যাংগং হ্রদ। যেতে পারেন আশপাশের আলচি মঠ, লিকির মঠ। কিছুটা দূরের সোমোরিরি নামের হ্রদও দেখে আসা যেতে পারে। বেশি ঠান্ডায় সে সব জায়গায় যাওয়া ঝামেলার। বরফ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে গাড়ি আটকে যেতে পারে। তবে তার আগে এ সব জায়গা ঘুরে আসা যায়। লেহ শহর থেকে যাত্রার অনুমতিপত্র নিতে হয়। সেটি বর্তমানে অনলাইনে। সেই অনুমতিপত্র পেতে গিয়ে বার দশেক বিফল হতে পারেন। তবে হাল ছাড়লে চলবে না। এক বার না এক বার পেয়ে যাবেনই।
নয়: শরীরের যত্ন নেবেন কী ভাবে? লেহ শহর সমুদ্রতল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মিটার উচ্চতায়। হঠাৎ সেখানে হাজির হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দিনে চার লিটার জল খাওয়া দরকার। তাতে কষ্ট কিছুটা কমবে। প্যাংগং, নুব্রা তো বটেই, এ সব জায়গায় যাওয়ার পথে খারদুংলা বা চাংলার মতো উঁচু পাস পড়তে পারে। সেখানেও একই সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও একই দাওয়াই— বেশি করে জল খাওয়া। এমনকি, অনেককে এক-দু’দিন হাসপাতালেও অক্সিজেন নিয়ে কাটাতে হয়।
দশ: ফেরার পথে কী কী করণীয়? যাওয়ার সময়ে ফেরার কথাও মাথায় রাখতে হবে। কেউ যদি লাদাখ থেকে কলকাতায় ফেরেন, মনে রাখবেন আবার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলেই দিল্লি থেকে বিমানে উঠতে পারবেন। অবশ্য কোভিডের দু’টি টিকা নেওয়া হয়ে গিয়ে থাকলে চিন্তা নেই। সে ক্ষেত্রে টিকার শংসাপত্র দেখালেই হবে।
করোনাকালে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ মানুষই চাইছেন, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ুক। লাদাখের ক্ষেত্রেও সে কথা সত্যি। তবু তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যখন মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন কিছুটা সাবধান হওয়া ভাল। পাশাপাশি দরকার নির্ঝঞ্ঝাটে বেড়িয়ে আসা। তাই আপনার পরের গন্তব্য লাদাখ হলে হাতে রাখুন আনন্দবাজার অনলাইনের দশ টোটকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy