২০১৫ সালে অস্থিমজ্জার ক্যানসারে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। ছবি: সংগৃহীত।
২০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও শেষরক্ষা হল না ‘ফাইটার’-এর। চলে গেলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। ১ নভেম্বর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন অভিনেত্রী।
‘ফাইটার’ ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন সেই ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মদিনের দিনই অভিনেত্রী প্রথম জানতে পেরেছিলেন, কর্কট রোগ বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরে। তখন তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আচমকাই জানতে পারেন অস্থিমজ্জায় ক্যানসার হয়েছে তাঁর। সে দিন থেকেই শুরু হয় মারণরোগের সঙ্গে লড়াই। চিকিৎসার জন্য দিল্লির এমসে নিয়ে যাওয়া হয় অভিনেত্রীকে। কেমোর পর কেমো, একের পর এক ইঞ্জেকশন, নানাবিধ ওষুধ।
চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, আর বেশি দিন সময় নেই ঐন্দ্রিলার হাতে। অদম্য বাঁচার তাগিদ আর পরিবার-প্রিয়জনদের ভালবাসার জেরে টানা দেড় বছর চিকিৎসা চলার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন অভিনেত্রী।
২০১৭ সালে ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিক দিয়ে ছোট পর্দায় অভিনেত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ২০২১ সাল পর্যন্ত ভাল ভাবেই কাজ করেন টেলিপর্দায়। ছন্দপতন হয় ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডান দিকের কাঁধে আচমকাই যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। হাসপাতালে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর ডান দিকে ফুসফুসে একটি ১৯ সেন্টিমিটারের টিউমার আছে। আবারও কেমো, আবারও নরকযন্ত্রণার মুখোমুখি হন অভিনেত্রী! অস্ত্রোপচার করলে আদৌ অভিনেত্রী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়েও চিকিৎসকদের মধ্যে ছিল সংশয়। ঐন্দ্রিলা সিদ্ধান্ত নেন তিনি অস্ত্রোপচার করাবেন। চলে জটিল অস্ত্রোপচার! ফের প্রাণসংশয়। আবারও যুদ্ধে জয়ী হলেন তিনি।
খানিকটা সুস্থ হয়েছিলেন বটে কিন্তু ১ নভেম্বর স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। প্রথম থেকেই অভিনেত্রীর অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর আসে, কোমায় চলে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। কোমায় থাকাকালীন ‘গ্লাসগো কোমা স্কেল’-এ ঐন্দ্রিলার চেতনার মাত্রা ছিল ৫-এর নীচে। জানা যায়, ঐন্দ্রিলার মাথায় ছড়িয়ে গিয়েছিল ক্যানসার। সিটিস্ক্যানে দেখা যায় মাথার বাঁ দিকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়েছে অভিনেত্রীর। করতে হয় অস্ত্রোপচার। বায়োপ্সিতে দেখা যায়, ‘মেটাস্ট্যাটিক ইউয়িংস সারকোমা’-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এই মারণরোগে রোগীর প্রাণরক্ষা করা খুবই কঠিন। তবু স্নায়ু চিকিৎসক, ক্যানসারের চিকিৎসক, রেডিয়োলজিস্ট-সহ চিকিৎসকদের একটি গোটা দল চেষ্টা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার। বাইরের হাসপাতালের চিকিৎসকেরও পরামর্শ নেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে।
কোমার মধ্যেই দফায় দফায় হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। ৭ নভেম্বর ভেন্টিলেশনের মাত্রা খানিকটা কমানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর আসে খানিকটা অবস্থার উন্নতি হয়েছে অভিনেত্রীর। আশার আলো জাগে ভক্তদের মনে। তবে আবার অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ১০ দিনের মাথায় ফের মাথার বাঁ দিকে স্ট্রোক হয় তাঁর। চিকিৎসকদের ধারণা ক্যানসারের কারণেই ঘটে এই ঘটনা। ভেন্টিলেশনের মাত্রা বাড়িয়েও লাভ হয়নি। রাতে ফের দফায় দফায় হার্ট অ্যাটাক হয় ঐন্দ্রিলার। বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা ছিল ঐন্দ্রিলার মনে, তাই হয়তো বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসছিলেন অভিনেত্রী। ২০ তারিখ দুপুর ১২টা ৫৯ নাগাদ ফের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। আর শেষরক্ষা হল না।
হাজার হাজার অনুরাগীকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন বছর ২৪-এর অভিনেত্রী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মারণরোগের সঙ্গে লড়াই করে গিয়ে লক্ষ লক্ষ ক্যানসাররোগীকে বার্তা দিয়ে গেলেন ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy