সূচনা হল এবিপি প্রাইভেট লিমিটেড আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের সম্মেলন ‘ইনফোকম ২০২৩’-এর। —নিজস্ব চিত্র।
বদলাচ্ছে সময়। বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। তারই মাঝে বিশ্বজুড়ে অভিষেক ঘটেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে খোলনলচে বদলে যাচ্ছে অর্থনীতির আঙ্গিক এবং কাজের ধরনের। এই কৃত্রিম মেধা নিয়ে হইচই চারদিকে। চ্যাটজিপিটি ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে জন্ম নিচ্ছে নানা প্রযুক্তি। সমীক্ষা বলছে, আগামী ৬ বছর শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুল ব্যবহারে কয়েক কোটি মানুষ কাজ হারাবেন। গোটা বিশ্ব নানা উদ্ভাবনী প্রযুক্তি আপন করে নিলেও, এই কৃত্রিম মেধা চক্ষুশূল হয়ে উঠছে অনেকের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জমছে অভিযোগের পাহাড়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কর্মীসঙ্কোচন কৃত্রিম মেধার একটি নেতিবাচক দিক। দোষ-গুণ নিয়েই তো মানুষ, যন্ত্র, প্রযুক্তিও। কৃত্রিম মেধা কি কখনও স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী হয়ে উঠবে না? কৃত্রিমতায় মোড়া এই প্রযুক্তি কি শুধুই ‘দানব’ না কি ভরসা রাখলে, অপেক্ষা করলে সবুরে মেওয়া ফলবে? উত্তর পাওয়া গেল এবিপি গোষ্ঠী আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের সম্মেলন, ২২তম ‘ইনফোকম’-এর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে আইটিসি সোনার হোটেলে সূচনা হল তিন দিন ব্যাপী ইনফোকম রাজসূয় যজ্ঞ। এই যজ্ঞের সূচনা পর্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডক্টর সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ( ডিরেক্টর, আইএসআই), ডক্টর আর এ মাশেলকর (প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল, সিএসআইআর), পুনীত গুপ্ত (এমডি, নেটঅ্যাপ), অনিল ভালুরি (এমডি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট, পালো অল্টো নেটওয়ার্কস), ভাস্কর ঘোষ (চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার, অ্যাকসেন্টার)। এ ছাড়াও এই সম্মেলনের অংশ হবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন ক্রিক্রেটার ব্রায়ান চার্লস লারা। এই সম্মেলনে সব মিলিয়ে ১২০জন বক্তা এবং ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
এ বছরের ইনফোকমের বিষয় ‘লিডিং উইথ পারপস’। অভীষ্ট লক্ষপূরণে দক্ষ নেতৃত্বের পাঠ দেবে এই মঞ্চ। প্রেম হোক বা প্রযুক্তি, সব ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য থাকা জরুরি। লক্ষ্যহীন পথে হাঁটলে আর যাই হোক, দশ, দেশের কল্যাণ হবে না। হাঁটাই সার হবে। বিফলে যাবে পরিশ্রম, পরিকল্পনা। সাফল্য ক্রমশ পিছু হটবে। তাই শুধু পিলে চমকে দেওয়া প্রযুক্তির জন্ম দিলেই চলবে না, সেই প্রযুক্তির আলোয় যাতে আলোকিত হয় বিশ্ব, উপকার হয় মানুষের, মাথায় রাখতে হবে সেই বিষয়টিও। কারণ ওটাই আসল। তার জন্য দরকার দক্ষ নেতৃত্বের। অনুষ্ঠানের শুরুতে আলোচনার বিষয় ধরিয়ে দিলেন এবিপি প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও ধ্রুব মুখোপাধ্যায়। যন্ত্র যন্ত্রণা না হয়ে ওঠে, বরং সমাজের যন্ত্রণা লাঘবের কাজে আসে। তা বলতে গিয়েই উহাহরণ হিসাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা তুলে আনলেন ‘আইএসআই’-এর প্রেসিডেন্ট সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আদৌ কতটা ভয় পাওয়া উচিত, তা এখন থেকেই বলা সম্ভব নয়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো প্রযুক্তিও বেঁচে থাকার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে এই প্রযুক্তি অস্বীকার করা বোকামি হবে’’। বলছেন সঙ্ঘমিত্রা। বিশ্বের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের অগ্রগতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ নির্ণয় থেকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পরিকল্পনায় সহায়তা করা— কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরেই তো হচ্ছে। মত সঙ্ঘমিত্রার। তা ছা়ড়া শিক্ষাক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিবর্তন এনেছে। এআই পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটও পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমনই কিছু ইতিবাচক দিকের কথা মনে করাল ইনফোকম-এর মঞ্চ।
প্রযুক্তি দোসর হোক সৎ উদ্দেশ্যের। নানা উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি তৈরিও হোক বিশ্বের কল্যাণে। প্রযুক্তির বিনিসুতোয় গাঁথা হোক বিশ্বের কল্যাণ। এই সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্ত যেন সেই সুরেই বাঁধা। সেই সুরের অনুরণন পাওয়া গেল কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ-এর (সিএসআইআর)এর প্রাক্তন জেনারেল ডিরেক্টর ডক্টর, আর এ মাশালকারের ভাবনাতেও। তিনি বলেন, ‘‘চটজলদি সাফল্যের প্রত্যাশা না রাখাই শ্রেয়। প্রযুক্তি আগেই ছিল, এখনও আছে। কিন্তু তার সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে। প্রযুক্তি আগে যতটা উপকারে আসত মানুষের, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে। আর এটাই ধরে রাখতে হবে। প্রযুক্তির সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সহজ নয়। কিন্তু বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সেই কাজটাই করে যেতে হবে নেতৃত্বদের। নিঃশব্দে পরিশ্রম করলে আর প্রযুক্তির উপর ভরসা রাখলে সাফল্য আসবেই। কিন্তু অধৈর্য হয়ে পড়লে চলবে না। কারণ যে রয়, সে সয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy