Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বাইরের বা বাড়ির খাবার থেকেও হতে পারে ফুড পয়জ়নিং। উপসর্গ দেখা দিলে মোকাবিলা করবেন কী ভাবে? জেনে নিন
Food Poisoning

Food Poisoning: খাবারে বিষক্রিয়া থেকে সাবধান

খাবারে ব্যাকটিরিয়া তৈরি হয়ে গেলে, সেই খাবার শরীরে ঢুকলে পাঁচ-ছ’ঘণ্টার মধ্যেই বমি ও উপরের পেটে ব্যথা শুরু হয়।

ছবি: জয়দীপ মণ্ডল

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৫০
Share: Save:

খাবারে বিষক্রিয়া থেকে বমি, লুজ় মোশন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না থামে, তা হলে প্রাণঘাতীও হতে পারে। গরমের সময়ে ফুড পয়জ়নিংয়ের আশঙ্কা বাড়ে। কিন্তু খাবারে কী ভাবে হয় এই বিষক্রিয়া? বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা করবেন কী ভাবে, জেনে নিন...

ফুড পয়জ়নিং হয় কী ভাবে?

মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘ফুড পয়জ়নিং দু’ভাবে হতে পারে। হয়তো যে খাবারটা খাচ্ছেন তার মধ্যে ইতিমধ্যেই ব্যাকটিরিয়া ফর্ম করে সেটা টক্সিক হয়ে গিয়েছে। সেই খাবার শরীরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বমি ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। আবার ইনফেক্টিভ অরগ্যানিজ়ম থেকেও ফুড পয়জ়নিং হয়। ধরুন, দোকান বা বিয়েবাড়িতে কোনও পদ খাওয়ার পরে মাস ডায়েরিয়া হল। তবে এই দু’ধরনের ফুড পয়জ়নিংয়ের উপসর্গও আলাদা।’’

খাবারে ব্যাকটিরিয়া তৈরি হয়ে গেলে, সেই খাবার শরীরে ঢুকলে পাঁচ-ছ’ঘণ্টার মধ্যেই বমি ও উপরের পেটে ব্যথা শুরু হয়। যেহেতু খাবারটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে আগেই। তাই প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। ‘‘অন্য দিকে সালমোনেলা, শিগেলার মতো ইনফেক্টিভ অরগ্যানিজ়ম খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার পরে বিষক্রিয়া ঘটায়। এ ক্ষেত্রে পেটের মাঝখানে বা নীচের দিকে ব্যথা হয় ও লুজ় মোশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। স্টুলের সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে। এ ক্ষেত্রে বমি হয় না। কিন্তু বমি-বমি ভাব থাকে। তাই প্রাথমিক ভাবে উপসর্গ দেখেও বোঝা যায় রোগীর কী ধরনের ফুড পয়জ়নিং হয়েছে,’’ বললেন ডা. তালুকদার।

বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা

বমি ও লুজ় মোশন শুরু হলেই ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খেতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা। বরং ভরসা রাখছেন ইলেকট্রল ওয়াটার বা ওআরএসে। কারণ বমি ও লুজ় মোশনের সঙ্গে শরীর থেকে অনেকটাই জল বেরিয়ে যায়। আর সেই জলের সঙ্গে শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজও বেরিয়ে যায়। তাই নুন, চিনির জল করে রোগীকে খাওয়াতে হবে। একসঙ্গে বেশি জল খাওয়াবেন না। কারণ বমি হওয়ার প্রবণতা থাকলে খালি পেটে বেশি জল খেলে সেটাও বমি হয়ে যাবে। কিছু বিষয়ে সচেতন করলেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু জল না খেয়ে সহজপাচ্য হালকা খাবারও খেতে হবে। না হলে শরীরে তৈরি এনজ়াইম বা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহৃত না হওয়ায় অ্যাসিডিটি তৈরি হয়। তাতে বমির প্রবণতা বাড়তে পারে। আর ঘন ঘন বমি হলে শরীরে অতিরিক্ত ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হয়। তা আরও ক্ষতিকর। তা ছাড়া সলিড খাবার না খেলে স্টুল ফর্মেশনও হবে না।’’ জল-মুড়ি বা নুন-চিনি-জল দিয়ে ভাত খেতে পারেন। মুড়ি ও ভাত থেকে রোগী শর্করা পাবে, ফলে শক্তি পাবে। অন্য দিকে নুনও পাবে। সোডিয়াম ইমব্যালান্স হবে না।

আর একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেটা হল, ওআরএস তৈরির ঠিক পদ্ধতি। প্যাকেটে যে অনুপাতে ওআরএস বানানোর নির্দেশ দেওয়া থাকবে, সে ভাবেই খাওয়াবেন। ‘‘জল এবং ওআরএসের অনুপাত ঠিক না থাকলে সমস্যা বাড়বে। যদি কেউ স্বাদ বাড়াতে কম জলে এক প্যাকেট ওআরএস গুলে দেয়, সে ক্ষেত্রে রোগীর ডায়েরিয়া বেড়ে যাবে। ফর্মুলার কনসেনট্রেশনটা গোলার জন্য যে জল দরকার সেটা দিতে হবে। কম জলে গুলে খেলে তা শরীরে ঢুকে এক্স-অসমোসিস পদ্ধতিতে বডি থেকে জল টেনে নেবে। এতে ডিহাইড্রেশনও বেড়ে যাবে। বাড়িতে ইলেকট্রল ওয়াটার তৈরির সময়ে যেন ফোটানো জল ব্যবহার করা না হয়। স্বাভাবিক পরিষ্কার যে জল নিয়মিত খান, তাতেই ইলেকট্রল জল তৈরি করতে হবে। ফোটানো জলে মিনারেল নষ্ট হয়ে যায়,’’ বললেন ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল।

কখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার?

ইলেকট্রল ওয়াটার খাইয়ে বা ঘরোয়া চিকিৎসার পরেও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে সচেতন হতে হবে। বমি ও লুজ় মোশনের সঙ্গে জ্বর এলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। “যদি দশ ঘণ্টা রোগী স্বাভাবিক ভাবে প্রস্রাব না করেন, রোগীর জিভ শুকিয়ে যায়, বুঝতে হবে রোগীর ডিহাইড্রেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তখন বাড়িতে ইলেকট্রল ওয়াটার খাইয়ে কোনও লাভ হবে না। হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন দিতে হবে,’’ বলে জানালেন ডা. তালুকদার। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তিন-চার চামচ করে ইলেকট্রল ওয়াটার দেবেন। বড়দের মতো ওরা একবারে অনেকটা জল খেতে পারে না। তাই অল্প করে বারবার দিন। ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করলেন ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল, “ফুড পয়‌জ়নিং মনে হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া লুজ় মোশন বা বমি বন্ধ করার ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। প্রতি বার মোশনের সময়ে যদি প্রস্রাব না হয়, তা হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন নেওয়ার কথা অবশ্যই ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডায়েরিয়া হলে বেশির ভাগ ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তাই গাট-স্পেসিফিক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। যেমন রিফ্যাক্সিমিন, যা শুধুমাত্র খাদ্যনালির মধ্যে থাকা ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে। তবে ক্লসট্রিডিয়াম ডেফিসিলির মতো ব্যাকটিরিয়া থেকে যদি ইনফেকশন হয়, তা হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। সেখানে আবার ইনজেকশন নয়। মনে রাখবেন, এটি খুব সংক্রামক।”

কী খাবেন না

গরমে রাস্তায় শরবত, আখের রস, কাটা ফল খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। অনেকক্ষণ কাটা ফলে কিন্তু ব্যাকটিরিয়া ফর্ম করে। তা ছাড়া শরবতে কী জল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা-ও বোঝা মুশকিল। রাস্তার লস্যিও একই বিপদ ডেকে আনতে পারে।

স্যান্ডউইচ ও স্যালাড খাওয়ার ব্যাপারেও সচেতন হন। কারণ সেটিও অনেকক্ষণ আগে কাটা হয়ে থাকতে পারে। তার চেয়ে টাটকা, গরম খাবার খান। ঠান্ডা পানীয় খেতে চাইলে সিলড প্যাকেটে ডেট দেখে খাওয়াই ভাল।

তবে ইতিবাচক দিক হল, সাবধানতা অবলম্বন করে চললে এ রোগ এড়ানো যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Food Poisoning Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy