—প্রতীকী ছবি।
দিনের প্রবল দহনের রেশ চলছে রাতভর। গুমোট পরিবেশে পাখার হাওয়াও গরম ছড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় বুধবার রাতে ব্যারাকপুরের শিউলি এলাকায় ঘরে কুলার চালিয়ে ঘুমিয়েছিলেন অসুস্থ এক সত্তরোর্ধ্বা। শেষ রাতে ঘুম ভাঙে তীব্র পোড়া গন্ধে। বুঝতে পারেন, ধোঁয়া বার হচ্ছে। দম বন্ধ করা অবস্থা। অন্ধকার ঘরে কোনও মতে হাতড়ে কুলারের সুইচ বন্ধ করলেও আতঙ্কে আর ঘুম আসেনি। সকালেই তড়িঘড়ি শুরু হয় মিস্ত্রির খোঁজ। কুলার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে সারাই করার কর্মীর খোঁজ করায় সাফ জানানো হয়, এক সপ্তাহের আগে কাউকে পাঠানো সম্ভব নয়! তাড়া থাকলে অন্য মিস্ত্রিকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন ফোনের ও পারে থাকা ব্যক্তি। এ দিকে, কুলার কাজ না করায় ঘর যেন ফার্নেস! মাথায় হাত পড়ে বৃদ্ধার।
তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের সঙ্গেই যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে বাতানুকূল যন্ত্র খারাপ হওয়ার পরিস্থিতি। কিন্তু দেখা মিলছে না রক্ষণাবেক্ষণের কর্মীর। ফলে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাতানুকূল যন্ত্র সারানোর পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বর্তমানে ব্যস্ততা আকাশছোঁয়া! শহর কলকাতা থেকে শহরতলি, সর্বত্রই প্যাচপেচেে গরমে পাল্লা দিয়ে এসি, কুলার, এমনকি সিলিং পাখাও খারাপ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছে। আর তা সারাতে কালঘাম ছুটছে কর্মীদের। এসি বা কুলার সারাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় ফোন করলে কোথাও অন্তত দিন দশেক সময় চাওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার ‘ফোন করে নেওয়া হবে’ বলেই দায় সারছেন ফোনের ও পারে থাকা কর্মী। এমনকি, জরুরি ভিত্তিতে এলাকার মিস্ত্রির খোঁজ করলেও শুনতে হচ্ছে, ‘‘এখন অনেক চাপ! প্রতি দিন মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছি। দিন চারেকের আগে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’’ চাহিদা বুঝে বহু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দাবি করার অভিযোগও উঠছে।
এসি-কে সুস্থ রাখতে
• পাঁচতারা রেটিং দেখে এসি লাগান। তাতে যেমন বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়, তেমনই সিস্টেম লোড, অর্থাৎ এসি-তে ব্যবহৃত সামগ্রিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের উপরেও চাপ কম পড়ে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে।
• বাড়িতে মোট ক’টি এসি লাগানো হচ্ছে, বিদ্যুৎ দফতরের থেকে তার অনুমতি নিয়ে রাখুন। না-হলে হিসাব-বহির্ভূত এসি বা অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে এলাকায় ট্রান্সফর্মারের ফিউজ় উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• বাড়ির ওয়্যারিংয়ে ব্যবহৃত তারের মেয়াদ নির্ধারিত থাকে ১০-১২ বছর পর্যন্ত। সময় মতো সেই তার বদলানো না হলে এসি, ইন্ডাকশন, মাইক্রোওয়েভের মতো সরঞ্জাম চালালে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• এসি চলাকালীন ইন্ডাকশন, গিজ়ার, মাইক্রোওয়েভ চালাবেন না।
• এসি চলাকালীন বার বার ঘর থেকে ঢোকা-বেরোনো করবেন না। তাতে এসির উপরে চাপ পড়ে। উঁচু ছাদ বা ঘুলঘুলি খোলা থাকলে, তামার কয়েল না হলে ঘর ঠান্ডা করতে এসি-র বেশি সময় লাগে। গরম হাওয়া ছাড়তে থাকে।
যদিও এসি বা কুলার সারানোর কর্মী পেতে দেরি হওয়ার নেপথ্যে মাত্রাতিরিক্ত চাপই দায়ী বলে মনে করছেন শহরের মিস্ত্রিদের একটি বড় অংশ। প্রতি দিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না বলে তাঁদের দাবি। উত্তর কলকাতার বাগবাজার এলাকার মিস্ত্রি সঞ্জয় মোহান্তের কথায়, ‘‘প্রতি দিন গড়ে ২০টা করে ফোন আসছে। এত কাজ তো এক দিনে করা সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ভাবেই দেরি হচ্ছে।’’ বাতানুকূল যন্ত্রের বহুজাতিক সংস্থার সার্ভিস ম্যানেজার দীনেশ কুমারও বললেন, ‘‘এখন যা চাপ, গড়ে সাত দিন সময় চেয়ে নিচ্ছি আমরা। সেই সঙ্গে আপাতত শুধু সার্ভিসিং করানো বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল হলে ফের সার্ভিসিং পরিষেবা চালু হবে।’’
কেউ কেউ আবার এসি, কুলার বা পাখা খারাপ হওয়ার পিছনে দায়ী করছেন ভোল্টেজের ওঠা-নামাকে। গল্ফ গ্রিনের বাসিন্দা মোনালিসা পাত্রের কথায়, ‘‘দিনকয়েক ধরে বাড়ির দু’টি এসি থেকে গরম হাওয়া বেরোচ্ছিল। সপ্তাহখানেক বাদে যদিও বা মিস্ত্রির দেখা পাওয়া গেল, তিনি বলেই গিয়েছেন যে, এ ভাবে ভোল্টেজ ওঠা-নামা করলে এসি আবার বিগড়োতে পারে।’’ ভোল্টেজের সমস্যা নিয়ে একই অভিযোগ দমদমের এক বাসিন্দারও। শহরের কিছু এলাকায় ভোল্টেজের সমস্যার কারণেই এসি, কুলার বা পাখা খারাপ হচ্ছে বলে দাবি করছেন এই সব যন্ত্র সারাইয়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের একাংশ।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকে অবশ্য গরমে এসি চালানো নিয়ে সতর্ক করার কাজ শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এসি সংক্রান্ত অসংখ্য নিয়ম-বহির্ভূত সংযোগের কারণেই ভোল্টেজের সমস্যা ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বলে দফতরের আধিকারিকদের দাবি। বিদ্যুৎ বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অজ্ঞতা থেকেই আমাদের ভুল হয়। এসি চালালে অন্তত ছয় ঘন মিলিমিটারের ভাল তার ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে সস্তার এসি নয়, নিরাপত্তা চাইলে নিয়ম মেনে সংযোগ ও সব চেয়ে ভাল এসি লাগানোই উচিত। তাতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়, সহজে খারাপও হয় না।’’
সিইএসসি-র এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসেস) অভিজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘বাড়ির কোনও যন্ত্র খারাপ হচ্ছে বা ভোল্টেজ কমছে মানেই মাত্রাহীন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গ্রাহককেই সতর্ক হতে হবে। অনুমোদন না নিয়েই যাঁরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy