Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Work Culture

বিয়ের বাজার থেকে ছাঁদনাতলা, ফুলশয্যা থেকে মধুচন্দ্রিমা, সবেতেই কোলে থাকে অফিস!

টানা অফিস ছুটি নিয়ে বিয়ে করতে যাবেন? কিন্তু সেই ছুটি আপনাকে দিচ্ছে কে?

এই প্রজন্মের কর্মসংস্কৃতি কেমন তা দেখতেও চোখ রাখতে হবে অনলাইনে।

এই প্রজন্মের কর্মসংস্কৃতি কেমন তা দেখতেও চোখ রাখতে হবে অনলাইনে। ছবি- সংগৃহীত

অঙ্কিতা দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৪
Share: Save:

সে এক সময় ছিল, যখন বাড়িতে বিয়ে ঠিক হওয়া মানে মাস ছয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত হইহুল্লোড়। বাড়ি জুড়ে সে যেন এক যজ্ঞ। বিয়ের দিন ঠিক করা, কেনাকাটা, মেনু, সাজগোজ, সব মিলিয়ে প্রায় গোটা বছর ধরেই চলত পরিকল্পনা। কিন্তু এই প্রজন্ম সে সবের ধার ধারে না। তাঁরা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বুঝে বিধাতাকে ডেকে নিয়ে আসেন। না হলে হয়তো তাঁদের প্রেম, বিয়ে, পরিবার সব কিছু থেকেই বঞ্চিত থাকতে হবে। এ প্রজন্মের কর্মসংস্কৃতি তেমনই।

‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ অভ্যস্ত এ সময়ে দিনভর চলে অফিসের দায়িত্ব সামলানোর পালা। এই নতুন অভ্যাস মানুষের জীবনে নিজের বেশ পাকাপোক্ত একটি জায়গা তৈরি করে ফেলেছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করার যে সুবিধা পেয়েছেন, তা অন্যদের ক্ষেত্রে বেশ ঈর্ষণীয়ই বটে। কিন্তু এই পরিবর্তনে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তার চিত্রটি ঠিক কেমন?

বিয়ের অনুষ্ঠানের মাঝেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং।

বিয়ের অনুষ্ঠানের মাঝেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং। ছবি- সংগৃহীত

কিছু দিন আগে পর্যন্ত ১০টা-৫টার অফিস, রবিবারের ছুটির যে গুরুত্ব ছিল, তা এখন প্রায় অতীত। গতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে জীবন এখন সব সময়েই ‘অন দ্য হুইলস’।

কলকাতার এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৈকতের কথাই ধরা যাক। কিছু দিন আগে তাঁর বিয়ের ছবি ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। আর পাঁচটা সাধারণ বিয়ের মতোই চলছিল রীতি-রেওয়াজ। কিন্তু ছবিটি লক্ষ লক্ষ মানুষের নজর কেড়েছিল একটিই কারণে। ওই যুবক ল্যাপটপ কোলে নিয়ে অফিসের কাজ করতে করতেই বিয়ের রীতি পালন করছিলেন। যদিও সৈকত জানান, বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হতেই অফিসে ছুটির আবেদন জানিয়ে মেল করে রেখেছিলেন। তবে ছুটি তো ছিল বিয়ের দিন থেকে। আর তার আগের দিন হয়েছে নান্দীমুখ। সেই অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎই একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে যোগ দিতে হয় তাঁকে। সৈকত বলেন, “আমরা যাঁরা এই ধরনের কাজ করি, তাঁরা সকলেই নতুন এই কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত। তাই হয়তো আমার বিয়ের ছবিটির সঙ্গে সকলেই একাত্ম হতে পেরেছেন।”

একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বহুজাতিক একটি সংস্থায় কর্মরতা সায়নী। বেঙ্গালুরুর সংস্থা হলেও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর দৌলতে কলকাতা থেকেই কাজ করছিলেন তিনি। সায়নীর স্বামীও একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে হয়েছে তাঁদের। সায়নী জানান, সকাল ৯টা থেকে ৬টার শিফটে কাজ করতেন তিনি। বিয়ের জন্য অনেক পরিকল্পনা করে ছুটির আবেদন করতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি বলেন, “এই সব সংস্থায় কর্মীদের কাজের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য বিশেষ একটি ট্র্যাকারের ব্যবস্থা থাকে। যেখানে লগ ইন করা থাকলে সংস্থা বুঝতে পারে যে, কর্মীদের শিফট চলছে। অর্থাৎ, তাঁরা অফিসে আছেন। যে হেতু কলকাতায় বসে কাজ করছিলাম, তাই কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাও ছিল। ফোন থেকে ট্র্যাকারে লগ ইন করে বিয়ের জন্য কেনাকাটাও করতে গিয়েছি।”

তবে শুধু তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেই যে এমন হয়, তা নয়। বিভিন্ন জায়গায় কাজের ধরন বদলে গিয়েছে। রীতিমতো ঘটা করে বিয়ে করছেন মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী মিমি রায়। অফিসে কাজ করার মাঝেই তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে ঝালিয়ে নিচ্ছেন বিয়ের সাজের পরিকল্পনা। মিমি বলেন, “কাজের মাঝে খাওয়ার জন্য যেটুকু সময় পাই, তখন চলে যাই ক্যামাক স্ট্রিটে কেনাকাটা করতে। অনেক দিন ধরে একটু একটু করে বিয়ের বাজার করছি। সহকর্মীরাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন কী কিনতে হবে, আর কোনটা না কিনলেও চলবে।”

ছাঁদনাতলাতেও সঙ্গী ল্যাপটপ।

ছাঁদনাতলাতেও সঙ্গী ল্যাপটপ। ছবি- সংগৃহীত

ছুটি নিয়ে কেনাকাটা করার সময় কোথায়? আগে যেমন অনেকে মিলে বিয়ের বাজার করতে যেতেন, সে সব এখন কমই দেখা যায়। তার চেয়েও বড় কথা, এখন আর দোকানে গিয়ে গিয়ে সমীক্ষা করে দেখারও বড় একটা প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, বিভিন্ন দাম এবং মানের একই রকম জিনিস একসঙ্গে অনেক পরিমাণে দেখা যায় শুধু মাত্র একটি ক্লিকেই।

কলকাতার বাসিন্দা অরুণিমা পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। এই মুহূর্তে শহরে বসে কাজ করলেও বিয়ের ঠিক আগের মাস ছয়েক ছিলেন বেঙ্গালুরুতে। সেখান থেকে বিয়ের বাজার করার অসুবিধা তো ছিলই। তাই তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনলাইনে শাড়ি-গয়না পছন্দ করে বুক করে রাখতেন। তার পর ছবি তুলে কলকাতায় মা-বাবাকে পাঠাতেন এবং তাঁরা দোকানে গিয়ে সেই জিনিসগুলি কিনে নিয়ে আসতেন। তিনি বলেন, “বিয়ের জন্য আমাদের অফিসে আলাদা করে ‘ম্যারেজ লিভ’ দেওয়া হয়। তাই ছুটি পেতে আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য আলাদা করে ছুটি দেওয়া হয় না।”

অরুণিমা জানালেন, তাঁরই এক সহকর্মীর কথা। তিনি সময় থাকতে অফিসে বিয়ের জন্য ছুটির আবেদন করতে পারেননি বলে মাত্র দিন তিনেকের ছুটি পেয়েছিলেন। তাই ওই ক’টা দিনের মধ্যে সইসাবুদ করেই প্রাথমিক বিয়ে সেরে নিতে হয়েছিল তাঁদের।

সে কালের লোকেরা এ সব শুনলে অবাকই হবেন বটে। তবে সময়ের সঙ্গে জীবনের সংজ্ঞা যেমন বদলাচ্ছে, তার সঙ্গে এ ভাবেই পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে অভ্যাস। আনন্দ-অনুষ্ঠান, ভোল বদলাচ্ছে সব কিছুরই।

অন্য বিষয়গুলি:

Work Culture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy