Advertisement
E-Paper

একাকিত্ব গ্রাস করছে প্রবীণদের

বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে প্রবীণ মানুষদের চিকিৎসা-সহ যাবতীয় অসুবিধা দূর করতে ‘দুয়ারে পুরসভা’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল।

মশগুল: চায়ের দোকানে প্রবীণ মানুষদের আড্ডা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

মশগুল: চায়ের দোকানে প্রবীণ মানুষদের আড্ডা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৩৯
Share
Save

এক দিকে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার লড়াই। অন্য দিকে নিঃসঙ্গবাসের দুর্ভোগ— এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না, এমন প্রবীণ মানুষের সংখ্যা নেহাতই হাতেগোনা। উত্তর ২৪ পরগনার কিছু পুর এলাকায় বৃদ্ধবৃদ্ধাদের দেখভালের কিছুটা উদ্যোগ আছে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সাহায্যের হাতটুকু পান না প্রবীণ নাগরিকেরা।

হাবড়ার প্রফুল্লনগর এলাকায় বাসিন্দা, ৮৭ বছরের বৃদ্ধা মৃণালিনী দাস বাড়িতে একাই থাকেন। ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধার কথায়, ‘‘দিনটা তবু কেটে যায়। রাতে খুবই অসহায় লাগে। সন্ধ্যার পরে বাড়ি থেকে বেরোই না। বিপদে পড়লে কী হবে জানি না।’’

মৃণালিনীর মতো বাড়িতে থাকা নিঃসহায় প্রবীণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে অবশ্য এগিয়ে এসেছে হাবড়া থানার পুলিশ। ‘শ্রদ্ধা’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছে তারা। মূলত হাবড়া পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডে বসবাস করা নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের পাশে থাকার এই প্রয়াস।

হাবড়া থানার আইসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রবীণ মানুষদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়ে, দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি আমরা। একাকিত্ব সরিয়ে পথ চলতে সাহায্য করা হচ্ছে।’’ ২৪ ঘণ্টার হেল্প লাইন নম্বর (৮৫১৪০৭৪৬৫৬) চালু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সমীক্ষা করে প্রবীণ অসহায় মানুষদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। হাবড়া শহরে এমন মানুষের সংখ্যা ১৮৮ জন।

হাবড়া শহরের প্রবীণ মানুষদের সময় কাটানোর জন্য হাবড়া খেলার মাঠের কাছে অবকাশ ভবন তৈরি হয়েছে। পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘অবকাশ ভবনে বয়স্ক মানুষেরা এসে সময় কাটান,গল্পগুজব করেন। এর ফলে তাঁরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকেন।’’

প্রবীণ মানুষদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার বিবেকানন্দ বিশ্বাসের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মানুষ কর্মজগৎ থেকে অবসর নেওয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগ কমে আসে। অনেকেই ডিপ্রেশনে ভোগেন। এই সময়ে পরিবারের সাহায্য খুবই জরুরি। সব ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা কাছে থাকেন না। তবে প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবেরাও বড় ভূমিকা নিতে পারেন। সব থেকে বড় কথা, নিজেকে কোনও কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারলে ভাল।’’ অনেকেরই মতে, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ায় বাড়ছে বার্ধক্যের সমস্যা। মানুষ আরও একাকী হয়ে পড়ছেন।

গোবরডাঙা পুরসভার প্রসন্নপার্ক এলাকার বাসিন্দা সত্তর বছরের পবিত্রকুমার মুখোপাধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ছেলে কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা অন্য কোনও প্রয়োজন হলে সাহায্য করার কেউ নেই। কোনও নির্দিষ্ট জায়গা বা ব্যবস্থা নেই, যে সেখানে যোগাযোগ করলে দ্রুত সাহায্য মিলবে।’’

গোবরডাঙার পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘প্রবীণ মানুষদের সাহায্য করতে একটি হেল্প লাইন নম্বর চালু করতে ভাবনা-চিন্তা চলছে। এলাকায় বাড়িতে থাকা নিঃসঙ্গ বয়স্ক মানুষের তালিকা তৈরি করে, তাঁদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’’

একই পরিস্থিতি অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায়। এখানেও প্রবীণ মানুষদের বিপদের সময়ে সাহায্য পেতে বিস্তর কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। অনেক প্রবীণ মানুষ মাসের প্রথমে ব্যাঙ্ক থেকে পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন বলে জানা গেল। টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে কেপমারদের খপ্পরেও পড়েছেন অনেকে। ব্যাঙ্কে গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে পারেন না অনেকে। পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘প্রবীণ মানুষদের আমরা আর্থিক ভাবে সাহায্য করি। প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করি। কিন্তু রাতে হঠাৎ বিপদে সাহায্য করার ব্যবস্থা চালু করা যায়নি।’’

‘হৃদয়ে অশোকনগর’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যেরা বেশ কিছুদিন ধরে অশোকনগরের বৃদ্ধবৃদ্ধা, যাঁরা বাড়িতে একা থাকেন, তাঁদের রাতে চিকিৎসা পরিষেবা পৌ্ঁছে দিতে ‘নিশি বন্ধু’ নামে একটি কর্মসূচি পালন করেছিলেন। বিভিন্ন এলাকায় একদিনের অস্থায়ী মিনি হাসপাতাল তৈরি করেও বয়স্ক মানুষদের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তপন ভৌমিক বলেন, ‘‘সংগঠনের সদস্যেরা অনেকেই কর্মসূত্রে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন। ফলে নিয়মিত ভাবে বয়স্ক মানুষদের পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না।’’

বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে প্রবীণ মানুষদের চিকিৎসা-সহ যাবতীয় অসুবিধা দূর করতে ‘দুয়ারে পুরসভা’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল। যদিও ওই কাজে গতি আসেনি। পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘শীঘ্রই চিকিৎসকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রবীণ মানুষদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করবেন। বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হবে। বয়স্ক মানুষদের নিয়ে নিয়মিত বিনোদনমূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ২৪ ঘণ্টার একটি হেল্প লাইন নম্বর চালু করা হচ্ছে।’’

বারাসতে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নানা পরিষেবা দেয় একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার দিব্যেন্দু রায় জানান, কলকাতা শহর-লাগোয়া বারাসতের বহু ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে দেশে-বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। সে সব পরিবারে বয়স্ক মানুষদের বাড়িতে চিকিৎসক নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি করানো, পেনশন তুলে দেওয়ার মতো আরও নানা কাজ করে তাঁদের সংস্থা। গত আট বছর ধরে এই কাজ করছেন তাঁরা। দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘প্রবীণ নাগরিকদের নিঃসঙ্গতা কাটানোর উপায় হিসাবে সংস্থার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডাও দেন কাকু-কাকিমাদের সঙ্গে।’’ তবে বহু নিঃসঙ্গ, অশক্ত মানুষ এখনও এই পরিষেবার বাইরে আছেন। অনেকেই শেষবয়সে অর্থাভাবে কষ্ট পান। তাঁদের জন্য সরকারি ভাবেও এ ধরনের পরিষেবা থাকা উচিত বলে তাঁর মত।

loneliness Senior Citizens

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।