দাগছোপহীন, নির্মল ত্বক কার না ভাল লাগে? ব্রণ, অ্যাকনে, র্যাশ কিংবা সংবেদনশীল ত্বকের নানা সমস্যা মোকাবিলা করার উপায় রয়েছে হাজারো। কিন্তু পিগমেন্টেশন? এই সমস্যা ছড়িয়ে রয়েছে অনেক গভীরে। পিগমেন্টেশন কী? চাইলেই কি রেহাই পাওয়া যায় এর থেকে?
বিশদে পিগমেন্টেশন
অনেক সময়েই ত্বকের রং বদলাতে শুরু করে। এই বদল যে মুখ বা শরীরের বিশেষ কোনও অংশ জুড়ে সমান ভাবে হয়, তা নয়। বরং বলা যায়, একটি বড় অংশের খানিকটা জায়গার রং বদলাতে থাকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই বদলে যাওয়া রঙের বিশেষ অংশটি আলাদা করে নজরে পড়ে। ছিটছিট দাগের মতো দেখা যায় ত্বকে। ত্বকের রং বদলে যাওয়ার পোশাকি নামই হল পিগমেন্টেশন। স্কিন টোন যখন গাঢ় হতে শুরু করে, তাকে বলে হাইপার-পিগমেন্টেশন। তা গোটা শরীরে ছড়াতে পারে কিংবা হতে পারে কোনও নির্দিষ্ট অংশে। অনেক সময়ে মুখে ফুটে ওঠা দাগ, যা এজ স্পট বা লিভার স্পট নামেই বেশি পরিচিত, তা কিন্তু আদতে হাইপার-পিগমেন্টেশনই।
কেন হয়?
পিগমেন্টেশন সাধারণত সূর্যালোকেরই ফল, এমনটাই মনে করেন অনেকে। শরীরের যে অংশ খোলা থাকে (যেমন মুখ, গলা, হাত, কাঁধ, ঘাড় ইত্যাদি), সেখানেই হতে পারে পিগমেন্টেশন। তবে সানট্যানের সঙ্গে কিন্তু পিগমেন্টেশনের পার্থক্য রয়েছে। অনেকক্ষণ সূর্যের প্রখর রোদে থেকে গোটা শরীরে কালচে ভাব দেখা দিলে, তাকে সানবার্ন বা সানট্যান বলে। আর পিগমেন্টেশনের ফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতিটি রোমকূপ।
তবে সূর্যের রোদ ছাড়াও নানা কারণে এই সমস্যা হতে পারে। কেমোথেরাপির বিশেষ কিছু ড্রাগ নিলে, প্রেগন্যান্সির সময়ে ক্ষরিত হরমোন থেকে, এন্ডোক্রিন ডিজ়িজ় বা ত্বকের সমস্যা মেলাসমা হলে কিংবা ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হলেও স্কিন টোনে ডিসকালারেশন হতে পারে।
ফরসা, পাকা গমের মতো, শ্যামলা কিংবা চাপা... ত্বকের রং কেমন হবে, তা নির্ভর করে মেলানিন নামে ত্বকের এক ধরনের পিগমেন্টের উপরে। বিশেষ কিছু কোষ এই মেলানিন তৈরি করে। কোনও কারণে যদি সেই কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার রেশ পড়ে মেলানিন তৈরিতেও। ফলে ত্বকে নানা প্যাচ দেখা যায়। তৈরি হয় পিগমেন্টেশন। আবার অতিরিক্ত মেলানিন তৈরি হলে ত্বকে কালচে ছোপ ধরতে শুরু করে। হাইপার পিগমেন্টেশন এরই ফল।
আবার উল্টো দিকে মেলানিন অত্যন্ত কম তৈরি হলে, স্কিন প্যাচ হয় হালকা। বিজ্ঞান যাকে চেনে ভিটিলিগো নামে।
ত্বক বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় ঘোষ বলছেন, ‘‘শুধু মাত্র সূর্যের রশ্মি নয়, তা থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে পিগমেন্টেশন হতে পারে। অনেকের প্রবণতা থাকে, মেঘলা দিনে ছাতা, টুপি বা সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার। কিন্তু শীতকালে এবং মেঘলা দিনেও এগুলি ব্যবহার করা জরুরি।’’ আকাশে বেশি মেঘ থাকলে অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যেতে পারে না। ফলে তার প্রভাব পড়ে ত্বকে।
কী ভাবে রোখা যায়?
• পিগমেন্টেশন থেকে রেহাই পাওয়ার প্রাথমিক উপায় হল সানস্ক্রিন ব্যবহার। শরীরের যে সব অংশ সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে, সেখানে সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি। সাধারণ নয়, এ ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন অন্তত এসপিএফ (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) ৫০ বা তার বেশি হতেই হবে। দুপুর বারোটা থেকে দুটোর মাঝে, যখন অতিবেগুনি রশ্মি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, তখন সাবধানতাও বেশি জরুরি। সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গেলে, সানস্ক্রিনের সঙ্গে হ্যাট ব্যবহার করতে পারেন। এতে সূর্যের আলো সরাসরি মুখে এসে পড়বে না। ডা. সঞ্জয় ঘোষ বলছেন, ‘‘পিগমেন্টেশন সারবে কি না, তা অবশ্য নির্ভর করে পিগমেন্টেশনের ধরনের উপরে। ত্বকের বাইরের স্তর বা এপিডার্মিসে পিগমেন্টেশন হলে তা সারানো যেতে পারে। কিন্তু তা আরও গভীরে পৌঁছলে, দাগ হালকা করা গেলেও সব সময়ে পুরোপুরি সারানো সম্ভব হয় না।’’
• মেলাসমা সাধারণত হয় প্রেগন্যান্সির সময়েই। হরমোনাল ওষুধপত্র খাওয়ার ফলে ত্বকে প্যাচ, ডিসকালারেশন হয়। এটিই পরিচিত মেলাসমা নামে। সে ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্ট এবং কসমেটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
• এমন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন, যাতে রয়েছে রেটিনল জাতীয় ভিটামিন এ, অ্যাজ়েলাইক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, লিকরিশ রুট ইত্যাদি। এই জাতীয় ক্রিম পিগমেন্টেশনের দাগ দূর করতে পারে না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা হালকা করে দেয়।
• পিগমেন্টেশনের সমস্যায় ভুগলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রফেশনাল কেমিক্যাল পিলস ব্যবহার করতে পারেন। লেজ়ার ট্রিটমেন্টের কথাও ভাবতে পারেন।
ঘরোয়া উপায়
পিগমেন্টেশন কি একেবারে মুছে ফেলা যায়? কী ভাবে আবার ফিরিয়ে আনা যায় ত্বকের নিজস্ব রং? এ বিষয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে পেশাদারি চিকিৎসার সাহায্য নিতে হয়। কখনও আবার মানুষ ভরসা রাখেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে। এতে পিগমেন্টেশন পুরোপুরি দূর হয় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাগ হালকা করতে সাহায্য করতে পারে এগুলি।
• অ্যাপল সিডার ভিনিগার: এই ভিনিগারে অ্যাসেটিক অ্যাসিড থাকার কারণে ত্বকের পিগমেন্টেশন হালকা করতে সাহায্য করে। সম পরিমাণে অ্যাপল সিডার ভিনিগার এবং জল মিশিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে তুলো দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। দু’-তিন মিনিট পরে ঈষদুষ্ণ জলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। দিনে দু’বার করে এই পদ্ধতি মেনে চলা প্রয়োজন।
• অ্যালো ভেরা: অ্যালো ভেরা বরাবরই ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতে বিকল্পহীন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অ্যালো ভেরার জেল (কৃত্রিম প্রসাধনী নয়, গাছের পাতা কেটে সরাসরি বার করে আনা শাঁস) পিগমেন্টেশনের উপরে লাগিয়ে রাখতে হবে। পরদিন তা ধুয়ে ফেলতে হবে ঈষদুষ্ণ জলে।
• লাল পেঁয়াজ: লাল পেঁয়াজের রসও ত্বকের পিগমেন্টেশনের ছোপ কমাতে সাহায্য করে।
পিগমেন্টেশনের সমস্যা অবশ্যই অনেকাংশে প্রকৃতির খেয়াল। কিন্তু চাইলেই এড়ানো যেতে পারে এই সমস্যা। তার জন্য প্রয়োজন সচেতনতার।
মডেল: নয়নিকা সরকার
ছবি: অমিত দাস
মেকআপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy