কেভম্যান ডায়েটে পাতে থাকবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ। ছবি: শাটারস্টক।
আসল নাম প্যালিওলিথিক বা প্যালিও ডায়েট৷ প্রস্তর যুগে, গুহাবাসী মানুষ যে ধরনের খাবার খেতেন, তার আদলে তৈরি বলে কেভম্যান ডায়েটও বলে৷ এই খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে ফিটনেস বাড়ে, ওজন কমে, বশে থাকে প্রেশার–সুগার৷ তবে হঠাৎ শুরু করা যাবে না৷ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ তিনি সবুজ সংকেত দিলে তবে শুরু হবে ডায়েট৷
এই ডায়েটের প্রথমেই আছে মাংস, মাছ, ডিম৷ তাও আবার তৃণভোজী পশুর মাংস৷ কাজেই চিকেন নয়, রেড মিট। তবে তা থেকে দৃশ্যমান চর্বি ছেঁটে ফেলে দিতে হবে, যাকে বলে লিন মিট৷ পুকুর, নদী ও সমুদ্রের মাছ খাওয়া যাবে৷ তবে ভেড়িতে চাষ করা মাছ নয়৷ এ সবই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস, অতএব স্বাস্থ্যকর৷
খিদের কম–বেশির উপর নির্ভর করে দিনের প্রতিটি খাবারে ৪–৮ আউন্স প্রোটিন থাকতে হবে, অর্থাৎ হাতের তালুর মাপে এক বা দু পিস মাছ–মাংস, ডিম৷
আরও পড়ুন: শরীরে মেদ জমছে? ওজন কমাতে ডায়েটে আজই যোগ করুন এই সব খাবার
পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল পেতে সারা দিনে টাটকা ফল–শাক–সব্জি মিলিয়ে চার–সাড়ে চার কাপের মতো খেতে হবে৷ সুগারের বিধিনিষেধ থাকলে খেতে হবে কম মিষ্টি ফল৷ মাঝেমধ্যে টুকটাক, এটা সেটা না খাওয়াই ভাল৷ নিতান্ত খেতে হলে নুন ছাড়া কাজু, আমন্ড, আখরোট, কুমড়ো বা সূর্যমুখীর বীজ খাবেন অল্প৷ চিনেবাদাম এমনিতে খাওয়া ভাল, তবে এই ডায়েটে খেতে নেই৷
রান্নায় ৩–৪ চামচ অলিভ–তিসি–নারকেল বা সর্ষের তেল ব্যবহার করা যাবে৷ তবে দুধ–দই–ছানা–মাখন নিয়ে দ্বিমত আছে৷ কারণ এতে আছে প্রচুর ল্যাকটোজ, যা আদতে কার্বোহাইড্রেট৷ এই ডায়েটে বেশি কার্বোহাইড্রেট খাওয়া বারণ৷ তা ছাড়া আজকের দিনে গরু–মোষ ঘাস যত না খায়, তার চেয়ে বেশি খায় কৃত্রিম খাবার, যাতে শষ্যদানা ও হরমোন মেশানো থাকে৷ তার উপর দুধ জীবাণুমুক্ত করার সময় বাদ হয়ে যায় ফ্যাটের প্রায় সবটাই৷ কাজেই যদি খেতে হয়, শুধু ঘাস খায় এমন গরু–মোষের দুধ খান৷ পরিপূর্ণ ফ্যাট-সমেত৷
রেড মিট খান, তবে চর্বি বাদ দিয়ে।
ডায়েটের ভাল-মন্দ
বর্তমানে যা খাচ্ছেন তার বদলে লিন মিট, শাক–সব্জি, ফল, বাদাম খেয়ে আপনি কতটা ভাল থাকবেন তা যাচাই করে চিকিৎসক পরামর্শ দিলে তবে ডায়েট শুরু করুন৷ ডায়েট চলাকালীনও তাঁর পরামর্শ নেবেন৷ ওজন–সুগার–প্রেশার কমতে শুরু করলে, সেই অনুযায়ী ওষুধপত্রের কিছু পরিবর্তন দরকার কি না তা তিনি দেখবেন৷ ডায়েটে ভাত–রুটি–ডাল–দুধ– ইত্যাদি থাকে না বলে প্রচলিত সুষম খাবারের তালিকায় তাকে ফেলা যায় না৷ বেশি দিন ধরে খেলে ক্যালশিয়াম ও আরও কিছু ভিটামিন–মিনারেলের ঘাটতি হতে পারে৷ ডায়েটিংয়ের সময় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার৷ প্রোটিন বেশি খাওয়া হয় বলে পর্যাপ্ত জল না খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে৷ জলের বদলে মাঝেমধ্যে এক–আধ কাপ ঘরে বানানো ভেষজ চা বা টাটকা ফলের রস খেতে পারেন৷ গুহামানবদের খাওয়ার রুটিন বলতে, খাবার পেলে খাওয়া, নয়তো উপোশ৷ এই ডায়েটের ক্ষেত্রেও তাই৷ খিদে পেলে তবে খাবেন৷ সময় হয়েছে বলেই খেতে হবে এমন নয়৷ অনেকে আবার আরও বেশি করে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার জন্য দুটি খাবারের মাঝে বেশ কয়েক ঘণ্টা উপোশ করে থাকেন৷ একবারে অতটা করার দরকার নেই৷ খাবার কী ভাবে রান্না করবেন তা নিয়ে একটু মাথা ঘামাতে হবে৷ স্যালাড ও রোস্ট খেতে পারেন৷ কিন্তু নুন বা কোনও প্রসেসড মশলাপাতি মেশানোর নিয়ম নেই৷
আরও পড়ুন: স্ট্রেচ মার্কের সমস্যা? ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন সমস্যা
ব্যায়াম নয়, এই ডায়েট মেনে চললে শারীরিক কাজে ব্যস্ত রাখুন নিজেকে।
প্রতিদিন এই ডায়েট খেতে পারবেন না৷ কারণ দিনের পর দিন চাল–ডাল–গম, সব রকম প্রসেসড ফুড বাদ দিয়ে চলা আজকের দিনে খুবই কঠিন৷ কাজেই মাঝেমধ্যে এক মুঠো ভাত, একটা রুটি বা টোষ্ট খেলে যদি ডায়েটে লেগে থাকা সহজ হয়, করতে পারেন৷ অনেকে সারা সপ্তাহ এই ডায়েট খেয়ে উইকএন্ডে মনের মতো খাবার খান৷ সেটাও করা যেতে পারে। ডায়েট থেকে ভিটামিন–মিনারেল পাওয়া গেলেও সাপ্লিমেন্ট কিছু খেতে হতে পারে৷ ভাল করে মাছ না খেলে ও গায়ে রোদ লাগানোর অভ্যাস না থাকলে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া জরুরি৷ মাঝেমধ্যে ডায়েটের নিয়ম ভাঙলে দিনে ১–২ গ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছের তেল খেতে হবে৷ শাকাহারি হলে বা পশ্চিমী খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা কমে যায়৷ সেক্ষেত্রে ডায়েট শুরু করার আগে ল্যাকটোব্যাসিলাস ও বাইফিডোব্যাকটেরিয়াম সাপলিমেন্ট খেতে হবে৷ ব্যায়াম করতে হবে৷ তবে তার ধরন একটু আলাদা৷ গুহামানবরা তো ব্যায়াম করবেন বলে খাটাখাটনি করতেন না৷ পরিশ্রম তাঁদের জীবনযাপনের অঙ্গ ছিল৷ প্যালিও ডায়েট যাঁরা করবেন, তাঁদের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে৷ কাজেই জিম নয়, তাঁদের হাটাহাটি ও কাজকর্ম করতে হবে প্রচুর৷ নৌকো বাইচ, বাগান করা, খেলাধুলা করা ইত্যাদি৷ তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ওজন নিয়ে ব্যায়াম, বিশেষ করে কিছু ঠেলা, ভারী কিছু তোলা বা টানা ইত্যাদি৷ খুব বেশি কার্ডিও ওয়ার্কআউট যেমন, দৌড়াদৌড়ি, সাঁতার বা বাড়াবাড়ি রকম খেলাধুলা করবেন না৷ কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা বেড়ে যাবে৷ সে চাহিদা পূরণ না করলে ক্লান্তি, বিরক্তি, দুর্বলতা তো হবেই, ভেতর থেকেও ভেঙে যাবে শরীর৷
আরও পড়ুন: শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে এই তথ্যগুলি জানতেন?
আমন্ড থাকুক দরকারি ফ্যাটের জোগান দিতে।
ভাল–মন্দ ও নিষেধাজ্ঞা
হৃদরোগ, কিডনি–লিভার বা প্যানক্রিয়াসের অসুখ থাকলে এই ডায়েট বারণ৷ ডায়েট শুরু করার পর ১২ সপ্তাহ ধরে স্টাডি করে দেখা গিয়েছে এতে ওজন, সুগার, প্রেশার বেশ ভাল কমে৷ তবে তার চেয়ে বেশি দিন খেলে লাভ হয় না ক্ষতি, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিঃসন্দেহ নন৷ যদিও দেখা গিয়েছে বেশি দিন ডায়েট করলে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি, ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে হাড় ভঙ্গুর হওয়া ও কার্বোহাইড্রেটের অভাবে কিটোসিস নামে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা আছে৷ কাজেই ১২ সপ্তাহের বেশি টানা এই ডায়েট না করাই ভাল৷
প্যালিও ডায়েট যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ৷ জৈব সারে পুষ্ট শাক–সব্জি, ফল খেতে হবে, মাংস খেতে হবে তৃণভোজী পশুর, আমন্ড–আখরোটের দামও নেহাৎ কম নয়৷ কাজেই কাজে নামার আগে টাকা–পয়সার প্রস্তুতি নিয়ে নামুন৷
যাঁরা নিরামিষাশী, বিশেষ করে যাঁরা ভেগান ডায়েট খান, (যে ডায়েটে কোনও রকম প্রাণীজ উপাদান থাকে না, দুধ বা মধুও না), তাঁদের পক্ষে এই ডায়েট মেনে চলা সম্ভব নয়৷ কারণ ভেগান ডায়েটে প্রোটিনের উৎস হল সয়াবিন, ডাল ইত্যাদি, যা প্যালিও ডায়েটে খাওয়া বারণ৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy