পিতা-পুত্র: কৌশিক ও হিমঘ্ন। নিজস্ব চিত্র
বাবা লেখেন কবিতা। ছেলে ছোটগল্প। বাবা মধ্য চল্লিশে। ছেলে সবে দশ পেরিয়েছে। বাবা ইতিমধ্যেই ছেলেকে নিয়ে লিখে ফেলেছেন গোটা একটা কবিতার বই। ছেলের ছোটগল্পের নায়ক কি বাবা?
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা কৌশিক বাজারী। ছেলে হিমঘ্ন। স্বেচ্ছায় একলা বাবা বা একলা মা হতে চান অনেকেই। কৌশিকও ‘একলা বাবা’, মানে ‘সিংগল ফাদার’। কিন্তু স্বেচ্ছায় নয়। বাধ্য হয়ে। প্রায় ৬ বছর ধরে। ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। সেই থেকেই ছেলে হিমঘ্ন, ডাকনামে বুবু-র সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কৌশিক।
‘একলা বাবা’র দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন কখনও? কৌশিক বলছেন, ‘‘স্বেচ্ছায় তো অনেকেই একা পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের দায়িত্ব সামলাতে চান। কিন্তু আমার তা নয়।’’ বলতে বলতে এক সন্ধ্যার ঘটনার কথায় ফিরে যান তিনি। ‘‘সে দিন বাড়িতে বুবু আর সঙ্গে আরও কয়েক জন সমবয়সি শিশু। সকলকেই দু’টি করে লজেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বুবুর বায়না, আরও দিতে হবে তাকে। কেন? জিজ্ঞাসা করায় উত্তর, সকলের তো বাবা-মা— দু’জনই আছে। ওর নেই। ওর শুধু বাবা। তাই!’’
সন্তানের দায়িত্ব সামলানো, কাজ ভাগ করে নেওয়ার মানুষ না থাকায় কী ধরনের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়? কোশিক বলছেন, এখন আর টের পান না তিনি। রোজকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে সব কাজ। ‘‘বরং ভাগ করার মানুষ যাঁদের থাকে, তাঁদের হয়তো আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। কার ভাগে কোনটা পড়বে, তা নিয়ে ঝামেলা হয়। আমার সে সব নেই,’’ হেসে জবাব তাঁর।
মা না থাকাটা হিমঘ্নর জন্য কতটা সমস্যার? ‘‘অনেক ছোট বয়সে মা’কে হারিয়েছে। ফলে অভাববোধটা হয়তো তৈরি হয়নি। কিন্তু আর পাঁচটা শিশুর মতো বাবার বকুনি খেয়ে ওর তো মায়ের কাছে ছুটে যাওয়ার জায়গা নেই, তাই আমি বকুনি দিলে আবার আমাকেই জড়িয়ে ধরতে হয়। একই সঙ্গে বাবা-মা এবং বন্ধুও। পরস্পরকে ‘তুই’ করেই ডাকি আমরা,’’ বলছেন কৌশিক।
লেখালিখি করেই জীবন চলে কৌশিকের। তার সঙ্গে সামলান ছেলের দায়িত্ব। সামলান বাড়ির তৃতীয় সদস্যকেও। তাঁর মা। বেশ কয়েক বছর ধরে যিনি শয্যাশায়ী।
হিমঘ্ন এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বেড়ে ওঠার পথটা এক রকম নয় বলে কি সহপাঠীদের থেকে মানুষ হিসেবে হিমঘ্ন কোথাও আলাদা? একটু ভাবেন কৌশিক। বলেন, ‘‘কী জানি! ও পড়াশোনায় ‘মোটামুটি’। ভিডিয়ো গেম খেলে অন্যদের মতো। ছবি আঁকে। আর ছোটগল্প লিখছে কয়েক বছর ধরে। অনেক ক’টা হয়েছে। আরও কয়েকটা একসঙ্গে হলে একটা পুরস্কার দেব বলে কথা দিয়েছি।’’
ক্লাস সেভেনের ছেলে বাবার মতোই লেখালিখি করতে ভালবাসে। বাবা ছেলেকে নিয়ে কবিতার বই লিখেছিলেন। তার জবাবেই কি ছেলের ছোটগল্প। সে গল্পে তার বাবাও কি আছেন? বাবা কি ছেলের সাহিত্যচর্চায় অনুপ্রেরণা দেন? কৌশিক আবার হাসেন। বলেন, ‘‘কী জানি! আমি আমার সাধ্য মতো ‘একলা বাবা’র দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি। বুবুও সাধ্য মতো লেখে। এটুকুই। এর বেশি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy