সিনেমার এমন বাবারাই কি এক কালে শাসন করেছে সমাজের মন? ফাইল চিত্র
কার হাতের রান্না ভাল লাগে? মা। তিনি কে? যিনি সকলকে যত্নে রাখেন। আর বাবা?
তিনি শাসনে রাখন।
সম্মতিতে ঘাড় দুলে উঠল কি? তবে আপনি চল্লিশ পার করেছেন। না হলেও অন্তত মধ্য তিরিশ তো বটেই। তাই বুঝি এখনও সে ধারণা নিয়ে বসে আছেন। ইতিমধ্যে ছবি বদলে বদলে বহু দূর গড়িয়েছে। বাবা এখন প্রিয় বন্ধুও বটে!
তেমন বাবা কি ছিলেন না সেকালে? এমন তো বলা চলে না। পছন্দের রান্না থেকে যৌনতা নিয়ে আলোচনা— স্কুলজীবনে এমনও কি হয়নি কোনও বাবার সঙ্গে? তখনও এমন বাবা কি ছিলেন না, যিনি মেয়ের পছন্দের পুতুল কিনতে নিজের হাতের ঘড়ি পর্যন্ত বন্ধক রেখে দিতেন? সকলেই ছিলেন। সমাজ দেখতেও পেত। কিন্তু দেখাতে হয়তো বা ভালবাসত না।
সময়ের সঙ্গে যেমন মহিলাদের রূপ বদলেছে, পুরুষদের প্রতিও সামান্য যেন নরম হচ্ছে সমাজ। ছেলেদের চোখে জল আনতে নেই। সন্তানের সঙ্গে মিষ্টি কণ্ঠে বাবার কথা বলতে নেই। মেয়ে প্রেমে পড়লে তাতে আনন্দ পেতে নেই। এ সব কি সকল বাবার পছন্দের ছিল? সকলেই কি বিকাশ রায় ছিলেন? তা তো নয়। নিজেদের ঘরেই অন্য বাবারা ছিলেন। ছবির পর্দায় বিকাশ রায়ের ছদ্ম রাগ দেখে তাঁদের মনে হয়তো চাপও পড়ত। তবে তাঁদের সিনেমায় কম দেখা যেত। উল্টে সিনেমার বাবাদের মতো গাম্ভীর্য ধরে রাখার সামাজিক চাপের শিকারও হতেন হয়তো!
মেয়েরা বদলাল। মায়েরা বদলালেন। এবার বাবাদের পালা। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র অমরিশ পুরীর মেয়েকে ‘জি লে অপনি জিন্দগি’ বলতে যত সময় লেগেছিল, এখন আর তা লাগে না। সাম্প্রতিক ছবি ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এর ইরফান খানের মতো বাবাদের দেখাতে ভয় পায় না এখন মূল ধারার ছবি। যিনি মেয়ের লেখাপড়ার জন্য সর্বস্ব দিয়ে দিতে রাজি। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-র ফারুক শেখের মতো চরিত্ররাও অনায়াসে জায়গা করে নেন এখন সমাজে। ছেলে পাহাড় চড়বে। আর পাঁচজনের মতো কাজ করবে না। তিনি পাশে দাঁড়াবেন। চোখ রাঙাবেন না। নিজের কষ্ট চেপে রেখে হাসিমুখে ছেলেকে স্বপ্নপূরণ করতে সাহায্য করেন। অমরিশ পুরীর মতো লন্ডন থেকে মেয়েকে পাঞ্জাবের গ্রামে এনে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয় না তাঁকে। কারণ এই সময় আর ১৯৯৫-এর মাঝে অনেক বদলে গিয়েছে চারপাশ। পুরুষেরা নরম হলে বাধা আসে না আর, এমন নয়। তবে তাঁদের কান্না পেলে, মন গলে গেলে পৌরুষ নিয়ে তুলনায় কম প্রশ্ন ওঠে যেন। ফলে বাবারাও স্বস্তি পান খানিক। পিতৃতান্ত্রিক সমাজবোধের রক্ষী হিসেবে সর্বক্ষণ চোয়াল শক্ত করে, তিনি দরজায় না দাঁড়িয়ে থাকলেও মাঝেমাঝে চলে আজকাল।
বাবাদের কথা বলতে গিয়ে এত সিনেমার কথা উঠছেই বা কেন? বাবারা তো আপন। তাঁদের কি নামী অভিনেতাদের সঙ্গে তুলনা করতে হয়? নাকি প্রয়োজন আছে? প্রয়োজন তো সমাজের। রুপোলি পর্দা তা তুলে ধরে মাত্র। বাস্তবও বদলেছে। নিজেদের সন্তানের ভাল চেয়ে কেমন মা কঙ্কনা সেনশর্মার পাড়ায় বাড়ি খুঁজে নিতে উদ্যোগী হন বাবা রণবীর শোরে? চোখ রাঙানি যে বাবা হওয়ার প্রাথমিক শর্ত নয়, দেখিয়ে দেন কর্ণ জওহরও। দিব্যি একা হাতে দুই সন্তানকে বড় করছেন তো তিনি। তাদের সঙ্গে আনন্দ করা, খেলার ছবিতে ভরিয়ে রাখেন নেটমাধ্যমের পাতা। এমন বাবারা আশপাশেও আছেন। সংবাদমাধ্যমে নাম ওঠে না তাঁদের। তবে নিজেদের নেটমাধ্যমের পাতায় ছেলে-মেয়ের অসুস্থার সময়ে রাত জাগার কথা লিখতে অস্বস্তি হয় না তাঁদের। তা যে একা মায়ের কাজ নয়, পাঁচজনের সামনে তা বলতে কম লজ্জা পান।
বদলাচ্ছেন বাবারা? সে কথা কি বলা ঠিক হবে? নাকি এমন বলাই ভাল, যে বদলাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি! বাবারাও আসলে সব সময়েই নানা ধরনের মানুষ। ঠিক যেমন ছেলে-মেয়ে-মা ঘরে ঘরে এক এক রকম। কেউ রাগ করেন বেশি। কেউ ভয় পান। কারও বা মন খারাপ হয়। কারও সন্তানকে নিয়ে ফুটবল খেলতে ইচ্ছা হয়। কেউ আবার রান্না করতে ভালবাসেন। কারও ভাল লাগে বই পড়তে। সকলেরই ধর্ম শাসন করা, এমন তো নয়। আগেও ছিল না।
মধ্য তিরিশের কি ইতিমধ্যে নিজের বাবার সেই সব গুণের কথা মনে পড়েছে? এমন কত দিন তো ছিল, যখন বাবা শুধুই শাসন করেননি। সে কথা ভুলতে বাধ্য না হওয়াই বদলের কথা বলে। বাবাদের নয়। চারপাশের!
পিতৃত্ব দিবস তাই তো ঘুরে ঘুরে আসে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy