গতকালের পর…
যখন আমরা নিজেদের জীবন, সম্পর্ক, সমস্যা নিয়ে চিন্তিত, বৈচিত্র নিয়ে ভাবতেই মানুষ আগ্রহী নয় তখন কি আপনার মনে হয় মানুষ সত্যিই ওয়ার্ল্ড কালচার ফেস্টিভ্যাল নিয়ে মানুষের উত্সাহ রয়েছে?
এই ধারণাটাই আমরা বদলাতে চাই। আমরা বোঝাতে চাই যে বৈচিত্র নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং বৈচিত্রকে উদযাপন করতে জানতে হবে। প্রাচ্য পাশ্চাত্যকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে, পাশ্চাত্য প্রাচ্যকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে। আমরা সবাই এক সঙ্গে রয়েছি। শুধু একে অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা নয়, একে অপরকে প্রশংসা করতে হবে। আমরা বিশ্বায়নের কথা বলি। সকলের আগে মূল্যবোধের বিশ্বায়ন প্রয়োজন। জীবনে ব্যবসা রয়েছে, রাজনীতি রয়েছে, বিনোদন রয়েছে, সমাজ সেবা রয়েছে, আধ্যাত্মিকতা রয়েছে। সব ধরনের মানুষকে এক সঙ্গে আসতে হবে। না হলে আমরা একে অপরকে দূরে সরিয়ে রাখবো। নিজেদের মধ্যেই ব্যবধান তৈরি করব।
আপনি বিশ্ব শান্তি, বিশ্ব একাত্মতার কথা বলছেন। কিন্তু আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে রয়েছি যখন পরিবার, সম্পর্কের মধ্যেই দূরত্ব বাড়ছে। এখন কি বিশ্বশান্তি নিয়ে মানুষের পক্ষে এত কিছু ভাবা সম্ভব?
ঠিকই। সেই জন্য আর্ট অফ লিভিং আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। সমাজে পরিবর্তন আনতে গেলে আগে ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। নিজেকে পরিবর্তন না করে কাউকে বদলানো যাবে না। নিজেকে বদলালে, নিজেকে স্ট্রেসমুক্ত রাখতে পারলে তবেই অন্যের মধ্যে বদল আনা সম্ভব। নিজেই সমস্যার মধ্যে থাকলে, স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত না হলে, দ্বিধা থাকলে কখনই জীবনে কোনও পরিবর্তন সম্ভব নয়।
কিন্তু এটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। সারা বিশ্বই এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে…
মানুষ সত্যিই চিন্তিত। যুদ্ধ, হামলা, সন্ত্রাস মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে। মানুষ শান্তি খুঁজছে। দীর্ঘ দিন ধরে হিংসা-হানাহানি চলতে থাকলে মানুষ সেটাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখনই মানুষ সংবেদনশিলতা হারিয়ে ফেলে। এই সব কিছুর জন্যই জীবনে আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন। জীবনে মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রয়োজন। সেটাই আর্ট অফ লিভিং-এর উদ্দেশ্য। সেই জন্যই এই ধরনের অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে। এই উদযাপন আসলে জীবনের উদযাপন। এই সময় পৃথিবীর যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ওয়ার্ল্ড কালচার ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা আসছেন। তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু এর থেকে কি সত্যিই সাধারণ মানুষ কোনও ভাবে উপকৃত হবেন?
সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রনেতাদের থেকে কী ভাবে উপকৃত হবে সেটা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু যত বেশি মানুষ ভারতে আসবে আমাদের পর্যটনে উন্নয়ন হবে, অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। আমরা চাই আরও বেশি মানুষ ভারতে আসুন। এই প্রথম কোনও ভারতীয় অনুষ্ঠানে ৩৫ হাজার ৯৭৩ জন শিল্পী এক সঙ্গে জড়ো হবেন। আরও বেশি অনুরোধ এসেছিল আমাদের কাছে। এই ধরনের অনুষ্ঠান ভাল কাজের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াবে। যখন মানুষ ভাল কাজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে তখনই নীতি, আদর্শ নষ্ট হয়ে যায়। সমাজের যার প্রভাব সাঙ্ঘাতিক। এই সব অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সমাজের নীতি, আদর্শের প্রয়োজনীয়তা মানুষের কাছে তুলে ধরা। যেটা সত্যিই প্রয়োজন।
শিল্পকলা, সংস্কৃতির সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক ঠিক কোথায়?
শুধু শিল্প নয়। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সব কিছুরই নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। শিল্পকলা, সংস্কৃতির কাজ মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। আধ্যাত্মিকতাও ঠিক সেটাই করে। একাত্মতা গড়ে তোলাই এর মূল উদ্দেশ্য।
আধ্যাত্মিকতা নিয়ে কি মানুষের মনে স্বচ্ছ ধারণার অভাব রয়েছে বলে মনে হয় আপনার?
হ্যাঁ, ঠিকই। আধ্যাত্মিকতার ধারণা মানুষের কাছে সত্যিই স্পষ্ট নয়। বেশ কিছু সময় ধরে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে মানুষের কাছে অনেক ভুল বার্তা পৌঁছেছে, ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, ভুল বুঝেছে মানুষ। আর্ট অফ লিভিং-এর কাজ আধ্যাত্মিকতার মূল উদ্দেশ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
পড়ুন: মুখোমুখি শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর, প্রথম ভাগ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy