Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

গ্যাস-অম্বল হলেই মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ খান? বাড়ছে করোনার শঙ্কা

যাঁরা প্রত্যেক দিন প্যান্টোপ্রাজোল জাতীয় ওষুধ খান, তাঁদের জন্য আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খেতে হবে। ফাইল ছবি।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খেতে হবে। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ১৩:৫৪
Share: Save:

পি আর কিউ-এর মতোই সম্পর্ক বাঙালির সঙ্গে অ্যাসিডিটির। কোনও সমস্যা হোক বা না হোক তাঁরা দায়ী করেন অ্যাসিডিটিকে। তাই সঙ্গের সাথী অ্যান্টাসিড। ইদানীং অনেক মানুষ কয়েক ধাপ এগিয়ে মোবাইলের মত সর্বক্ষণের সঙ্গী করে নিয়েছেন প্যান্টোপ্রাজোল জাতীয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) জাতীয় ওষুধকে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করার মতো নিয়ম করে খেয়ে নেন, ব্যাস সারা দিনের জন্যে নিশ্চিন্ত। অ্যাসিডিটির হাত থেকে মুক্তি পেতে যাঁরা প্রত্যেক দিন প্যান্টোপ্রাজোল জাতীয় ওষুধ খান, তাঁদের জন্য আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। এদের সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় আড়াই থেকে ৩.৭ গুণ বেশি।

আমেরিকান 'জার্নাল অফ গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি'-তে সম্প্রতি এই বিষয়ে এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকার সিডার্স সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ব্রেনান স্পিগেল ৮৬,০০০ জন মানুষের উপর এক সার্ভে করার পর এই গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৮৬,০০০ জনের মধ্যে ৫৩,০০০ জনেরও বেশি মানুষ পেটে অস্বস্তি, ব্যথা, অ্যাসিডিটি, গলা বুক জ্বালা ও হার্ট বার্নের সমস্যার কারণে নিয়মিত প্যান্টোপ্রাজোল জাতীয় ওষুধ খান। এদের মধ্যে প্রায় ৩,৩০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ব্রেম্যান স্পিগেল এই গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, অনেকে নিজেদের ইচ্ছায় অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দিনে দু'বার পর্যন্ত পিপিআই জাতীয় ওষুধ খান। এর ফলে পেটের অ্যাসিড প্রশমিত হয় ঠিকই, কিন্তু বেড়ে যায় অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি। করোনার এই অতিমারির সময়ে পিপিআই গ্রহণকারীদের সার্স কোভ-২ ভাইরাস সংক্রমণ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি হচ্ছে বলে সমীক্ষায় জানা গেছে।

আরও পড়ুন: জ্বর হলেই করোনার ভয়? বাড়িতে রাখতেই হবে এই সব মেডিক্যাল কিট​

পাকস্থলী ও অন্ত্র আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। অন্ত্রে অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে অন্ত্রের সুরক্ষা কবচ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের পথ সুগম হয়। গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট সুনীলবরণ দাসচক্রবর্তী জানালেন, আমাদের পাকস্থলীতে নানা ধরনের গ্যাসট্রিক অ্যাসিড থাকে। এদের মধ্যে অন্যতম হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। এছাড়াও আছে পটাসিয়াম ক্লোরাইড এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড। এই সব অ্যাসিড মিলিত ভাবে খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। মুলত খাবার খাওয়ার পর হজমের জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষরণ বেড়ে যায়। মুলত গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির পেরিয়েটাল কোষ থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়।

আরও পড়ুন: ধূমপানে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি, আশঙ্কা ক্লাস্টার সংক্রমণের, এড়াতে কী করবেন?​

সুনীলবরণবাবু জানালেন, বিভিন্ন কারণে (মূলত ত্রুটিপূর্ণ খাবারের অভ্যাস ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ) অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে। পাকস্থলীতে একটি নির্দিষ্ট পিএইচ ভারসাম্য থাকে। এটি হল ১.৫ থেকে ৩.৫। খাবার হজম করা ছাড়াও এই পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকলে নানা ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া এই অ্যাসিডিক পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না। ফলে আমরা সুরক্ষিত থাকি। যাঁরা কারণে-অকারণে এ জাতীয় ওষুধ কিনে অ্যাসিডিটি মুক্তির জন্য নিয়ম করে খান, তাঁদের পাকস্থলীর স্বাভাবিক সুরক্ষাকবচ পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে এঁদের পেটের নানা সংক্রমণের ঝুঁকি এক লাফে বেড়ে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষদের মধ্যেই প্যান্টোপ্রাজোল জাতীয় ওষুধ একটানা খেয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। তাঁদের মধ্যে কোভিড ১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি বলে জানালেন সুনীলবরণ দাসচক্রবর্তী।

প্যান্টোপ্রাজোল জাতীয় ওষুধ একটানা খেলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে। ফাইল ছবি।

২০০২-২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের মহামারির সময় সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, যাঁরা নাগাড়ে পিপিই খান তাঁদের মধ্যে সার্স কোভ-এর সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। একই ভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের হারও বেশি দেখা যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু সমস্যার সম্ভাবনার কথা বললেন সুনীলবরণবাবু।

আরও পড়ুন: মানসিক চাপ কমাতে মদ্যপান? বাড়ছে কোভিডের ঝুঁকি

নাগাড়ে প্যান্টোপ্রাজোল খেয়ে গেলে কিডনির সমস্যা, ডিমেনশিয়া অর্থাৎ ভুলে যাওয়া, অস্টিওপোরোসিস ও তার কারণে অল্প চোট আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়া এবং পেটের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: রেমডেসি‌ভির থেকে ফ্যাভিপিরাভির…করোনা চিকিৎসায় দিশা দেখাচ্ছে এ সব ওষুধ

এই প্রসঙ্গে ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ অর্পণ চৌধুরী জানালেন, কোনও অবস্থাতেই এক মাসের বেশি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খাওয়া ঠিক নয়। কোভিড ১৯ অতিমারির সময় এই ওষুধটি দেওয়া বন্ধ রাখাই ভাল বলে মনে করেন অর্পণবাবু। যাঁদের নিতান্তই অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন, তাঁদের

ফ্যামোটিডিন জাতীয় ওষুধ খেতে বে। কোভিড ১৯ সন্দেহ হলেই যাঁরা এই ওষুধটি খান, তাঁদের দ্রুত ওষুধ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, বললেন অর্পণ চৌধুরী। একটি মাত্র পিপিই খেলে পিএইচ-এর মাত্রা একদম ওলটপালট হয়ে যায়। ২ থেকে বেড়ে ৬ হয়ে যেতে পারে।

এই প্রসঙ্গে সুনীলবরণ দাসচক্রবর্তী জানালেন, ঘাড়ে ব্যথা বা মাথার যন্ত্রণার জন্যেও অনেকে পিপিই খান। অনেকেই মনে করেন। সব রোগের মূলে গ্যাস আর অ্যাসিডিটি, তাই পিপিই খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধই খাওয়া যে ঠিক নয়, তা ভুললে চলবে না। আর কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ রুখতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মুখে, নাকে, চোখে হাত দেওয়া যাবে না, ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে বলে উল্লেখ করেন দুই চিকিৎসকই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy