Advertisement
১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Cauliflower

শীতে ভোজের পাতে ‘ব্রাত্য’ সস্তার ফুলকপি

শোনা যায়, সেই ১৮২২ সালে ভারতে প্রথম ফুলকপি এসেছিল ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ জেমসনের হাত ধরে। বিহারের সাহারানপুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক বাগানে প্রথম ফুলকপির চাষ হয়েছিল।

ফুলকপি তার যাবতীয় কৌলিন্য খুইয়ে খাদ্যতালিকা থেকে আপাতত মুখ লুকিয়েছে।

ফুলকপি তার যাবতীয় কৌলিন্য খুইয়ে খাদ্যতালিকা থেকে আপাতত মুখ লুকিয়েছে। —প্রতীকী চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:২০
Share: Save:

কেক, কফি, কমলা, কপি। শীতকালে রসনার চতুর্বর্গ মোক্ষলাভে এছাড়া বাঙালি কোনও বিকল্প ভাবতে পারত না। পরে অবশ্য এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নলেন। ভরা শীতে পিকনিকের জলখাবার থেকে চায়ের সান্ধ্য ঠেক। গৃহস্থ বাড়ির প্রতিদিন কিংবা ভোজবাড়ির চর্বচোষ্য ভোজবাড়ি—সবই কেমন কপিময়। লুচির সঙ্গে আলু-ফুলকপির ধোঁয়া ওঠা তরকারি, চায়ের সঙ্গে ফুলকপির সিঙ্গারা কিংবা পকোড়া। ভোজের পাতে ফুলকপি-ভেটকির কালিয়া অথবা বাড়িতে সাদামাটা আলু-কপির ঝোল। মোদ্দা কথা কপি বিনে শীত বৃথা।

আর হবেই বা কী করে। অভ্যাস তো অল্পদিনের নয়। শোনা যায়, সেই ১৮২২ সালে ভারতে প্রথম ফুলকপি এসেছিল ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ জেমসনের হাত ধরে। বিহারের সাহারানপুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক বাগানে প্রথম ফুলকপির চাষ হয়েছিল। তারপর থেকে দুশো বছর ধরে শীতের ফুলকপির জন্য হাপিত্যেশ করে বছরভর বসে থাকাই দস্তুর হয়ে উঠেছে। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, এবার ভোজের পাতে তাকেই বাতিল করে দিয়েছে ভোজনরসিক বাঙালি। যদিও দোষটা কপির নয়। শীতের ফুলকপি তার স্বাদ-গন্ধ-বর্ণ নিয়েই হাজির হয়েছে যথারীতি। কিন্তু বাদ সেধেছে তার অতিফলন। ব্যাপক ফলনে বাজারে নিজেকে সস্তা করে ফেলেই ফুলকপি তার যাবতীয় কৌলিন্য খুইয়ে খাদ্যতালিকা থেকে আপাতত মুখ লুকিয়েছে। অন্তত এমনটাই দাবি কেটারিং ও রেস্তোরাঁ মালিকদের। দু’টাকা দামের ‘গরু ছাগলের’ খাদ্য ফুলকপি ভোজের তালিকায় দেখলে হয়তো চটে যেতে পারেন মান্য অতিথিরা। তাই নিমন্ত্রণ কর্তারা কেটারিং ব্যবসায়ীকে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ভেজ ডালে ফুলকপির টুকরো নয়। দিতে হবে পনির, মটরশুঁটি বা কাজু। ভীষণ পছন্দের ফুলকপির রোস্ট বা মশালা ফুলকপির নাম উচ্চারণও নিষেধ। দু-পাঁচমাস মাস আগে হওয়া চুক্তির পদ এ ভাবে বদলে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন বহু কেটারিং ব্যবসায়ী।

কেটারিং ব্যবসায়ী শান্তনু ভৌমিক বলেন, “এবারই প্রথম দেখছি লোকে ফুলকপির যাবতীয় আইটেম বাদ দিতে বলছে। সামনেই মাঘ মাস। বিভিন্ন কাজের চুক্তি আগে থেকেই হয়ে আছে। তাতে ফুলকপি রোস্ট,. ফুলকপির পকোড়া বা ফুলকপি দিয়ে ভেজ ডাল করার কথা ছিল। কিন্তু এখন কেউ চাইছেন না কোনও কপির পদ থাকুক।”

কিন্ত ফুলকপিতে হঠাৎ আপত্তি কেন? ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দামে সস্তা হয়ে গিয়ে জাত খুইয়েছে ফুলকপি। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘অনেকে ভাবছেন দু’টাকা দামের কপি খাইয়ে কেটারার বিরাট লাভ করবে। তাঁর লোকসান হবে। তাই টাকা উসুল করতে হবে।” তাছাড়া সস্তার কপি খাওয়ালে নিমন্ত্রিতদের কাছে মানসম্মান থাকবে না। এমনও ভাবছেন কেউ কেউ। তাই যে কোনও মূল্যে কপির পদ বাদ। অফিসবন্ধুদের নিয়ে পারিবারিক পিকনিকে পূর্বস্থলীর পাখিরালয়ে গিয়েছিলেন স্মরজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মেনুতে প্রথমে ফুলকপির পকোড়া রাখা হয়েছিল স্ন্যাক্স হিসাবে। বাড়িতে সবাই এত কপি খাচ্ছে যে পিকনিকে আর কেউ খেতে চাইল না। তাই পাল্টে বেগুনি করা হয়।”

নবদ্বীপের কেটারিং ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম দে বলেন, “কী আমিষ কী নিরামিষ, ফুলকপি দিয়ে দুর্দান্ত সব পদের ভীষণ চাহিদা থাকে ভোজবাড়িতে। বিশেষ করে গরমে বা বর্ষায়। কেননা তখন কপি দুর্মুল্য। শীতে দাম কমলেও চাহিদা থেকেই যায়। আবার ভেটকি, চিংড়ি বা কাতলা সঙ্গে কালিয়ায় ফুলকপির বিকল্প নেই।” কিন্তু এবার ছবিটা আলাদা। এত কমদামের কপি বাড়িতে দুবেলাই পাতে পড়ছে। ফলে ভোজের পাতে নিজের আকর্ষণ হারিয়েছে ফুলকপি।

অন্য বিষয়গুলি:

cauliflower Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy