পুজোয় শরীরে খেয়াল রাখাটাও দরকার।
ডাক্তার–বদ্যি সবাই ধীরে ধীরে পুজোর মেজাজে প্রবেশ করছেন৷ কেউ কেউ ছুটিতেও যাচ্ছেন। সারা বছরের ব্যস্ততা ও পেশাগত চাপ কাটিয়ে এই সময় নিজেদের পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ পান তাঁরাও। কাজেই বিপদে পড়লে ফোনে যে পাবেন, সে ভরসা কম৷ পেলেও রাস্তাঘাটের এমন অবস্থা যে তাঁর কাছে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব৷
টিমটিম করছে হাসপাতালের এমারজেন্সি৷সেখানেই বা যাবেন কী করে? গাড়িঘোড়া উধাও৷ কাজেই বাড়িতে অসুস্থ, বৃদ্ধ, শিশু বা গর্ভবতী কেউ থাকলে চিন্তার শেষ নেই৷
আবার পুজোর অনিয়মে সুস্থ বা নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্রনিক অসুখের রোগীরাও যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন না, তারও নিশ্চয়তা নেই৷ সবে মিলে বেজায় সমস্যা৷ কী করে সে সব সমস্যার সমাধান করা যায় তার টিপস রইল।দেখে নিন সে সব পরামর্শ৷
আরও পড়ুন: পুজোয় সময় বাঁচিয়ে ঠাকুর দেখতে চান? তবে সঙ্গে থাকুক এ সব
আরও পড়ুন: পুজোর হাঁটাহাঁটিতে পায়ে ব্যথা? রইল সহজ সমাধান
ডায়াবিটিস থাকলে
ডায়াবিটিসের ভাই–বোন
হাইপ্রেশার, হাইকোলেস্টেরল, মেদবাহুল্য, ইস্কিমিয়া ইত্যাদির কথা বলছি৷ চিকিৎসকরা মজা করে বলেন, ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপ তো তুতো ভাই–বোন! একজন এলে আরেকজনের আগমন হয় যখন–তখন৷ বাকিরাও প্রায় একই গোত্রের৷ একটি থাকা মানে বাকি একটি-দু’টি কিংবা সবক’টি থাকার আশঙ্কা প্রবল৷ সামান্য ৪–৫ দিনের বেপরোয়া আচরণে তারা বিগড়ে এমন জায়গায় চলে যেতে পারে যে পুজোর মধ্যেই হাসপাতালে ঠাঁই হতে পারে আপনার৷ ধরুন, এর মধ্যে কয়েকটা একটু আধটু আছে। প্রচুর পান–ভোজনে নিজেকে হারিয়ে ফেললে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না, এমন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই৷ বিশেষ করে যদি মাঝ বয়স হয়, ভুঁড়িটুড়ি থাকে৷ এই সমস্যাটিকে বলে ‘হলিডে হার্ট সিনড্রোম’৷ রাত জেগে প্রচুর খাওয়া–দাওয়া ও মদে ভেসে যাওয়ার পর হয় বলে এ রকম নাম৷
মূল কথা হল, এ সব সমস্যা যদি থাকে,পুজোর মধ্যে বাড়াবাড়ি করবেন না৷ ওষুধ নিয়ম করে খাবেন৷ খানাপিনার আসর সাজিয়ে বসার আগে শরীরের কথাটা মাথায় রাখবেন৷ সবচেয়ে ভাল হয়, আজই যদি একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে একটা চেকআপ করিয়ে আসেন৷ তখন এও জেনে নেবেন যে আপনার যা শারীরিক অবস্থা, তাতে উপোশ করা, ভোগ খাওয়া বা পান–ভোজন করা কতটা নিরাপদ৷
আরও পড়ুন: ভোরের শিউলি, রাতের ছাতিম নিয়ে পুজো আসছে
উপোশের ক্ষতি
কম বয়স হলে, স্বাস্থ্য ভাল থাকলে কোনও ক্ষতি নেই৷ অল্পস্বল্প অসুখ–বিসুখ থাকলেও করা যেতে পারে৷ তবে খালিপেটে কোনও ওষুধ খাওয়ার থাকলে সেটা যেন বাদ দেবেন না৷ ওষুধ কিন্তু খাদ্য নয়৷ তার সঙ্গে যতটুকু জল পেটে যাবে, তাকেও ‘ক্ষমাঘেন্না’ করে দিতে হবে৷ নাহলে ঘোর বিপদ৷ ধরুন আলসার আছে, হাইপোথাইরয়েডের অসুখ আছে, ওষুধ না খেলে কী হতে পারে বুঝতে পারছেন? তারপর ধরুন, সকালের খাবার খাওয়ার পর রক্তচাপ, সুগার, হার্টের অসুখ, মৃগী, আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনও জটিল অসুখের ওষুধ খাওয়ার কথা।কিন্তু অঞ্জলী দিতে দিতে এত দেরি হয়ে গেল যে, সোজা গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসলেন। এমনকি,এক দিন নয়, পর পর তিন–চার দিনই। তা হলে আপনার অসুস্থ হওয়া কিন্তু কেউ ঠেকাতে পারবে না৷ তাছাড়া, বয়ষ্ক মানুষ, অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে মাথা ঘুরে পড়তে পারেন৷ সাধারণ অম্বল, আলসার থাকলেও সমস্যা বেড়ে যেতে পারে৷ অর্থাৎ যা করার, শরীর বুঝে রয়েসয়ে করুন৷
শরীর বুঝে, রয়েসয়ে
একেবারেই তাই৷ ক্রনিক অসুখ থাকলে কী করতে পারেন আর কী পারেন না তা ভুলে গেলে বিপদ৷ ধরুন, মৃগী আছে,অথচ পর পর দু’রাত জেগে ঠাকুর দেখার ইচ্ছে।কিংবা ধরা যাক, অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা সবে একটু কমেছে আর তাতেই এক হাত উঁচু হিল পরে হেঁটে ও লাইনে দাঁড়িয়ে ঠাকুর দেখবেন ভাবছেন।চাইনিজ খেলে মাইগ্রেন বাড়ে জানা আছে, তাও দলে পড়ে চাইনিজই খেতেই ছুটলেন।চিংড়ি–কাঁকড়া খেলে হাঁপানির টান ওঠে তাও ওগুলোই হয়ে গেল প্রিয়!এ সব করলে কিন্তু পস্তাতে হবে।
রোজ দু’বেলা বাইরে খাওয়ার আগে দুর্বল হজমশক্তির কথা ভুলে গেলে পেটের গোলমালেই যে সব মাটি হতে পারে তা মাথায় রাখা দরকার৷ টনসিলের ধাত থাকলে আইসক্রিম খাওয়ার আগে দু’বার ভাবুন৷ বৃষ্টিতে ভিজবেন না৷ ইদানীং বেশ ভাল রকম জ্বরজারি হচ্ছে৷ কাজেই সঙ্গে ছাতা বা বর্ষাতি রাখুন৷
ক্লস্টোফোভিয়া (ছোট জায়গায় আটকে পড়ে যাওয়ার ভয়) থাকলে ভিড়ের মধ্যে প্যানিক অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে৷ নিজের তো ভোগান্তিই, সঙ্গে যাঁরা থাকবেন তাঁদেরও নাকানি–চোবানি৷ এ রকম হলে শেষ রাতে বেরিয়ে ঠাকুর দেখুন৷ তখন ভিড় কমে যায়, আলোর সাজও ভাল দেখা যায়৷
হৃদরোগী, নার্ভের ওষুধ বা অসুখের কারণে ঘুমের ওষুধ খেতে হয় যাঁদের, তাঁদের জন্যও এক নিয়ম৷ রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে শেষ রাতে উঠে ঠাকুর দেখে নেওয়া৷ তার পাশাপাশি ছোটখাটো বিপদ হলে কী করবেন, তাও জেনে নিন৷
বিপদ বাড়লে
বাড়াবাড়ি সমস্যায় সেই চিকিৎসার সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ কাজেই আগে থেকে সেরকম হাসপাতালের ফোন নম্বর ও ভর্তির পদ্ধতি জেনে রাখুন৷ কিছু টাকা রাখুন ঘরে৷ একাধিক অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর নিয়ে রাখুন, যাতে একজন ব্যস্ত থাকলে অন্যজনকে পেতে পারেন৷
বাড়িতে কোনও ক্রনিক রোগী, বয়ষ্ক মানুষ, শিশু ও গর্ভবতী মহিলা থাকলে আজই সেই নির্দিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন সমস্যায় কী করবেন তা জেনে নিন৷ তাঁর অবর্তমানে প্রয়োজনে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তা জেনে তাঁর ফোন নম্বর নিয়ে রাখুন৷ কোনও কারণে নেওয়া সম্ভব না হলেও আতঙ্কিত হবেন না৷
আচমকা বিপদে কোনও মতে হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে জুনিয়র ডাক্তার অন্তত পাবেন৷ ‘অন কল’ সিনিয়র ডাক্তারও থাকবেন৷ কাজেই একগাদা আতঙ্ক বয়ে না বেড়িয়ে সমস্যার সমাধান হাতের কাছে মজুত রেখে উপভোগ করুন উৎসব।
ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy