কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-এর ‘রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার’-এ দুই সদ্যোজাতের পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় একাধিক চিকিৎসক ও নার্সের দায় রয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে স্বাস্থ্য দফতরের তদন্ত রিপোর্টে। আজ শুক্রবার দোষীদের শাস্তি ঘোষণা হতে পারে বলে দফতর সূত্রের খবর।
গত শনিবার শিশু দু’টির মৃত্যু হয়েছিল। এর পর সোমবার অতি গোপনে অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র কাছে ওই রিপোর্ট জমা পড়েছে। রিপোর্ট নিয়ে স্বাস্থ্যভবনে দীর্ঘ আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বৈঠকের শেষে মলয়বাবু বলেন, ‘‘অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। রিপোর্ট জমা পড়েছে। অনেকেরই গাফিলতি পাওয়া গিয়েছে। কারও গাফিলতির পরিমাণ বেশি, কারও কম। সেই অনুযায়ী শাস্তি হবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কড়া। দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না। কঠোর শাস্তি হবে এবং শুক্রবারের মধ্যে শাস্তি ঘোষণা করার চেষ্টা চলছে।’’
কোন কোন চিকিৎসক ও নার্সের নাম উঠেছে? এই প্রশ্নে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে নাম এখনই জানানো সম্ভব নয়। তবে এই ধরনের ত্রুটি কখনও, কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী-ও এ দিন বলেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। এটুকু আশ্বাস দিতে পারি
যে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।’’
একই ভাবে রাজ্যে এসএনসিইউগুলির উপর নজরদারিতে গঠিত
কমিটির প্রধান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘হাসপাতালের পরিষেবা ক্ষেত্রে বেশ কিছু ত্রুটি মিলেছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার
কাজ চলছে।’’
মেডিক্যালে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন পেডিয়াট্রিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান তথা এসএনসিইউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাপসকুমার সাবুই। প্রশ্ন উঠছে, যাঁর বিভাগে এই ঘটনা ঘটেছে, তিনি নিজেও তো দায় পুরোপুরি এড়াতে পারেন না! তা হলে তিনি কী করে তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন? ত্রিদিববাবু জানান, এটা অধ্যক্ষের ব্যাপার। যদিও অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ী এর কোনও উত্তর দিতে চাননি।
তাপসবাবু এ দিন মেডিক্যাল কলেজে এসেছিলেন। কিন্তু বিভাগের বাইরে বার হননি। সাংবাদিকদের এড়িয়ে এক সময় পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান।
এ দিন মেডিক্যালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সদ্যোজাতদের পুড়ে যাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি দেয় সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার এবং মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআর। তারা ২৪
ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের শাস্তির দাবি জানায়। যে দুই শিশু মারা গিয়েছে, তাদের পরিবারের তরফেও এ দিন নবান্নতে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। অভিযোগকারীদের পক্ষে অষ্টম
বাগদি এবং আসরিমা খাতুন দু’জনেই বলেন, ‘‘আমরা ন্যায় চাই।
যাদের জন্য আমাদের বাচ্চাদের পৃথিবী থেকে চলে যেতে হল, তাঁদের কঠোর সাজা দিতে হবে।’’
মেডিক্যালের এসএনসিইউ-এ ২১ জন চিকিৎসক এবং ৩৬ জন নার্স রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেতন ছাড়াও এঁরা আলাদা করে কয়েক হাজার টাকা ‘পারফরমেন্স বেসড ইনসেনটিভ’ পান। বিশেষ ভাতা পাওয়া সত্ত্বেও অসুস্থ শিশুদের উপর লাগাতার নজরদারিতে কী ভাবে গাফিলতি ঘটল? কেনই বা নিয়মিত ‘ইভনিং রাউন্ড’-এ যাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা? কেন ‘রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার’-এ পুড়ে যাচ্ছে ছোট্ট দেহগুলো, অথচ কারও চোখে
পড়ছে না? পরিষেবার ফাঁকগুলি চিহ্নিত করে দ্রুততার সঙ্গে সেই সব খামতি পূরণ করা হবে, আশ্বাস দিয়েছেন ত্রিদিববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy