‘খগপতি চঞ্চূ জিনি নাশা সুললিত। ত্রিভূবন মোহন সহজে আতুলিত।।...
সুচারু শুরগ অতি রাতুল অধর। লাজে বিম্ব বান্ধুলি গমন বনান্তর।।’
সৈয়দ আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থে সিংহলি রাজকন্যা পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনায় চোখ-ভুরুর সঙ্গে অবশ্যম্ভাবী ভাবে উঠে এসেছে ঠোঁট ও নাকের কথা। আর হবে না-ই বা কেন, যুগ যুগান্ত ধরে চলে আসা রূপকথার গল্পে রাজকন্যার বাঁশির মতো নাক, তিলফুলের মতো ঠোঁট শুনেই তো বড় হয়েছে বাঙালি। সেই রূপ বাস্তবে ফুটিয়ে তুলতে গেলে কসমেটিক সার্জারির যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তার নাম রাইনোপ্লাস্টি ও লিপ অগমেন্টেশন।
রাইনোপ্লাস্টি কাকে বলে?
কসমেটিক সার্জন মনোজ খন্না জানালেন, মানুষের মুখের দিকে তাকালে প্রথম নজরে আসে নাক। মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই নাকের উপরে নির্ভরশীল। অনেক সময়েই এই নাক মুখের সঙ্গে মানানসই হয় না। সেই ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়ে ওঠে রাইনোপ্লাস্টি। এটি মূলত দুই প্রকার, সার্জিকাল ও নন-সার্জিকাল।
* সার্জিকাল রাইনোপ্লাস্টি: অপারেশনের মাধ্যমে পাকাপাকি ভাবে নাকের গঠন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতি। ডা. খন্না জানালেন, এর মধ্যে পূর্ব ভারতে সবচেয়ে বেশি যে পদ্ধতির প্রচলন তা হল বোঁচা নাক (ডিপ্রেসড নোজ়)-কে কার্টিলেজ ও সিলিকন ইমপ্লান্টের মাধ্যমে টিকালো বানানো। এ ছাড়া নাকের অন্যান্য যে খুঁত সার্জারির মাধ্যমে ঠিক করা যায়, তা হল,
* অতিরিক্ত কার্টিলেজ গঠনের ফলে নাকের ব্রিজের উপর অনেক সময়ই উঁচু অংশ বা হাম্প দেখা যায়। সার্জারির মাধ্যমে তা ঠিক করা সম্ভব।
* নাকের ডগা যদি মাত্রাতিরিক্ত বড় হয়, সেটি ঠিক করাও সম্ভব।
* অনেক সময় নাকের ডগার থেকে উপরের অংশ বেশি মোটা হয়। সার্জারির মাধ্যমে তা কিন্তু স্বাভাবিক করা সম্ভব।
* অনেকেরই নাকের ফুটো অতিরিক্ত বড় আকারের হয়। সার্জারির মাধ্যমে তা ঠিক করে ফেলা যায় সহজেই।
* ত্বক ও কার্টিলেজের মাঝের অংশে সার্জারির মাধ্যমেই নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। এ ছাড়া অনেক সময়েই নাকের ভিতরে বা কলামেলায় (নাকের ফুটো বা নোজ়স্ট্রিল যে পাতলা চামড়ার দ্বারা আলাদা থাকে ) সার্জারি করা হয়। ফলে রাইনোপ্লাস্টির পরে নাকের উপর কোনও দাগ থাকে না।
কী ভাবে হয় সার্জারি
সাধারণত এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে যে কোনও ধরনের নাকের সার্জারি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের পরে রোগী বাড়ি চলে যেতে পারেন। একটি সার্জারির মোট চারটি পদক্ষেপ থাকে।
* অ্যানাস্থেশিয়া: যে স্থানে অপারেশন হবে সেখানে প্রথমে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া বা আই ভি সিডেশন করা হয়।
* ওপেন টেকনিক: নাকের ফুটোর ভিতরে কলামেলার মধ্যে ইনসিশন বা ছেদ করে সার্জারি করা হয়।
* ক্লোজ়ড টেকনিক: এটিতেও নাকের ফুটোর ভিতরে ইনসিশন করা হয়, তার পরে হাড় ও কার্টিলেজের উপর থেকে আলতো করে সরিয়ে ফেলা হয় চামড়া। তার পরে সার্জারি। এ ছাড়া নাকের হাড় ও কার্টিলেজকে চিজ়েল বা ট্রিম করে অনেক সময় নাকের গঠন ঠিক করা হয়।
* স্টিচ: এর পর নাকে যে ইনসিশন করা হয়েছিল তা ঠিক উপায়ে স্টিচ করে দেওয়া হয়।
সার্জারির পরের যত্নআত্তি
সার্জারির পরে চিকিৎসকই বলে দেবেন ঠিক কী ভাবে যত্ন করবেন সদ্য পরিবর্তিত নাকটির। তবে সাধারণত সার্জারির এক সপ্তাহের মধ্যে ফের চেকআপের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, এক সপ্তাহ বেশি মাথা নিচু না করাই ভাল। নাক ঝাড়বেন না, রক্তক্ষরণ হলে সঙ্গে সঙ্গেই যোগাযোগ করবেন চিকিৎসকের সঙ্গে। প্রায় ছ’সপ্তাহের জন্য খেলাধুলো বা শারীরচর্চা না করাই বাঞ্ছনীয়।
নন-সার্জিকাল রাইনোপ্লাস্টি
সার্জিকাল রাইনোপ্লাস্টি মানে পাকাপাকি ভাবে নাকের গঠন ও গড়নের পরিবর্তন। কিন্তু ইদানীং অনেক ক্ষেত্রেই চটজলদি নাকের গঠন পাল্টাতে দ্বারস্থ হন নন-সার্জিকাল রাইনোপ্লাস্টির। ডা. খন্নার মতে, মূলত সময়ের অভাবেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে ফিলার দিয়ে নাকের উঁচু-নিচু অংশ ঠিক করে দেওয়া হয়।
লিপ অগমেন্টেশন কাকে বলে
নাকের মতো ঠোঁটও মুখের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই ঠোঁট যদি মুখের সঙ্গে মানানসই না হয়, তা হলে অনেকেরই মনে হতে পারে সৌন্দর্যে যেন খামতি থেকে গেল। সেই মনে না হওয়ার জন্যই কসমেটিক সার্জারির অন্যতম একটি পদ্ধতি হল লিপ অগমেন্টেশন। এটিরও সার্জিকাল ও নন-সার্জিকাল ভাগ রয়েছে।
* নন-সার্জিকাল লিপ অগমেন্টেশন বা লিপ ফিলারস: ঠোঁটে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সিন্থেটিক হায়ালুরনিক অ্যাসিড বা শরীরের ফ্যাট প্রবেশ করিয়ে ঠোঁটের গঠন পরিবর্তন করার পদ্ধতিই হল নন সার্জিকাল লিপ অগমেন্টেশন। এটির মাধ্যমে অস্থায়ী ভাবে পাতলা ঠোঁটকে চাহিদামতো পুরু, ঠোঁটের পছন্দসই আকার পরিবর্তন ইত্যাদি করা যায়। এ ছাড়া, অনেকে হাসলে ঠোঁটের পাশে ভাঁজ পড়ে। সেটিও ঠিক করা যায় লিপ ফিলারের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ করতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি লাগে না। তবে ডা. খন্না জানালেন, এই ধরনের লিপ অগমেন্টেশন ছ’ থেকে নয় মাসের বেশি টেকে না। খুব বেশি হলে বারো মাস টিকতে পারে। তার কারণ, আমাদের ঠোঁট সর্বদা সচল। ফলে অস্থায়ী অগমেন্টেশন বেশি দিন বজায় রাখা কঠিন। এ ছাড়া, অস্থায়ী অগমেন্টেশন কত দিন থাকবে, তা নির্ভর করে শরীরের মেটাবলিক রেটের উপরেও। যার মেটাবলিজ়ম যত বেশি, তার তত তাড়াতাড়ি লিপ ফিলার নষ্ট হয়ে যায়।
* সার্জিকাল লিপ অগমেন্টেশন: স্থায়ী ভাবে ঠোঁটের গড়ন পরিবর্তন করতে চাইলেই পাকাপাকি ভাবে সার্জারির দিকে যাওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে ত্বকের নীচে থাকা ডার্মিস ইনজেক্ট করে ঠোঁটের গড়ন পুরু করা হয়। আবার কেউ যদি ঠোঁট পাতলা করতে চান সেটিও সার্জারির মাধ্যমে সম্ভব।
সাধারণত পেটের নীচের অংশের চামড়া নিয়ে সেটির এপিডার্মিস অংশটি সরিয়ে ফেলে ডার্মিস অংশটি বার করা হয়। তার পর সেটিকে রোল করে ঠোঁটের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। মূলত অবশ বা অজ্ঞান করেই এই সার্জারি করা হয়। সময় লাগে এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। অনেক সময়ে এক দিন থাকতেও হতে পারে হাসপাতালে।
অগমেন্টেশনের পরের যত্নআত্তি
* সার্জারি বা লিপ ফিলারের পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কোনও রকম মেকআপ নয়।
* উঁচু বালিশে শুলে উপকার পাবেন।
* বেশি করে জল খেতে হবে, খেতে হবে শাক, আনাজ ও ফলমূল।
* ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কোনও রকম শারীরিক পরিশ্রম বা এক্সারসাইজ় করা চলবে না।
* ঠোঁটে অসুবিধে হলে বরফের টুকরো বা আইসপ্যাক বোলাতে পারেন আলতো করে।
* চিকিৎসকের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন।
* মদ্যপান একেবারে নিষেধ, কারণ অ্যালকোহল ব্লাড থিনার হিসেবে কাজ করে।
সৌন্দর্যায়নের খরচ?
ডা. মনোজ খন্না জানালেন, খরচ নির্ভর করে ঠিক কী ধরনের ফিলার নিচ্ছেন তার উপর। সাধারণত অস্থায়ী লিপ ফিলারের দাম শুরু হয় ২০ হাজার থেকে। নাকের ফিলার তার তুলনায় একটু বেশি ব্যয়বহুল, তার কারণ ঠোঁটের ফিলারের থেকে সেটি বেশি দিন থেকে যায়। নাকের এক একটি অস্থায়ী ফিলারের দাম শুরু হয় ৩০ হাজার টাকা থেকে। এ ছাড়া, ঠোঁটের স্থায়ী সার্জারি শুরু হয় ৩৫ হাজার টাকা থেকে। নাকের ক্ষেত্রে তা নির্ভর করে ঠিক কী ধরনের সার্জারি করানো হচ্ছে তার উপর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy