প্রতীকী ছবি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক প্রসূতির করোনা পজ়িটিভ হওয়ার খবর সামনে এসেছিল প্রথম। এর দিন কয়েক পরেই এন আর এস হাসপাতালে সদ্য মা হওয়া এক তরুণীর শরীরে করোনা পজ়িটিভ মেলে। দু’ক্ষেত্রেই আলাদা রেখে চিকিৎসা চলছে মা ও সদ্যোজাতের। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ওই বিভাগের রোগীদের কোয়রান্টিনে রেখে নজরদারি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কিত সব মহল। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, ভয় না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ও তাঁর পরিবারকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
গবেষকদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত, কোভিড ১৯-এর সরাসরি প্রভাব শেষ ট্রাইমেস্টারে থাকা গর্ভস্থ শিশুর উপরে পড়ে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিনের উহান প্রদেশের তংজি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সমীক্ষা হয়। সাধারণ করোনা সংক্রমিতদের মতো উপসর্গ নিয়ে সেখানে ভর্তি সাত জন কোভিড-১৯ পজ়িটিভ অন্তঃসত্ত্বার উপরে চিন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যৌথ ভাবে সমীক্ষাটি করে। সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে জন্মের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, শুধু এক সদ্যোজাতের শরীরে ওই ভাইরাস রয়েছে। একাধিক জীবনদায়ী ব্যবস্থার সাহায্যে সংক্রমণ কাটিয়ে এখন সুস্থ সেই মায়েরা ও শিশু। সমীক্ষায় প্রকাশ, শেষ ট্রাইমেস্টারে সংক্রমিত হয়েছিলেন ওই সাত জন।
তবে প্লাসেন্টার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত মায়ের থেকে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে প্রথম বা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে অন্তঃসত্ত্বা সংক্রমিত হলে ভ্রূণে কী প্রভাব পড়বে, গবেষণাসাপেক্ষ সেটি। তাই ওষুধ, আইভিএফ-সহ অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতির সাহায্যে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া বিশ্ব জুড়ে বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করেছে ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি’ এবং ‘আমেরিকান সোসাইটি অব রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন’। শহরের চিকিৎসকদেরও মত, যেহেতু প্রথম এবং দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রসূতি করোনা আক্রান্ত হলে ভ্রূণে কী প্রভাব পড়বে তা অজানা, তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও এখন গর্ভধারণ না করাই বাঞ্ছনীয়। তবে যাঁরা ইতিমধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা, তাঁদের সংক্রমণ এড়াতে হু এবং আইসিএমআর-এর দেওয়া সাধারণ নির্দেশগুলি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ‘ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’।
সংক্রমণ এড়াতে
• ওষুধ ও বিকল্প পদ্ধতির সাহায্যে গর্ভধারণের যাবতীয় প্রক্রিয়া বিশ্ব জুড়ে আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ। এমনকি, স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও এ সময়ে অন্তঃসত্ত্বা না হওয়ার পরামর্শ।
অন্তঃসত্ত্বাদের পরামর্শ
• বাড়িতে থাকুন এবং দূরত্ব বজায় রাখুন।
• বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। মুখে-চোখে হাত দেবেন না। অসুস্থ ব্যক্তির থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে ঘরেও মাস্ক পরুন।
• তোয়ালে, সাবান, বাসন-সহ নিজের ব্যবহৃত জিনিস আলাদা রাখুন।
• ঘরের দরজা-জানলা খুলে রাখুন।
• জ্বর, সর্দি, কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সেই নির্দেশিকা মেনে অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ জরুরি সুষম খাবার খাওয়া। চিকিৎসকের সঙ্গে ফোন-হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখা। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা যাবে।’’
স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক কুশাগ্রধি ঘোষ আবার বলছেন, ‘‘জ্বর-সর্দি-কাশি হলে তা গোপন না করে চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন। উপসর্গ থাকলে অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পদক্ষেপ করবেন ডাক্তার। না-হলে যদি একের পর এক চিকিৎসক এবং নার্স সংক্রমিত হন, তা হলে স্বাস্থ্য পরিষেবাই ভেঙে পড়বে।’’
মা যদি করোনা পজ়িটিভ হন, সে ক্ষেত্রে কি সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করানো বন্ধ রাখা উচিত? স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত বলছেন, “এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, আক্রান্ত মায়ের থেকে কোলস্ট্রামের মাধ্যমে সদ্যোজাতের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া সদ্যোজাতের মায়ের দুধ জরুরি। অতএব মা কোভিড-১৯
সংক্রমিত হলেও দুধ খাওয়াবেন। তবে সরাসরি না। হাত এবং স্তন সাবান দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে মাস্ক, গ্লাভস এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে পাম্প করে দুধ বার করে নিয়ে তবেই খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া যাবতীয় নির্দেশিকা মেনে অন্তঃসত্ত্বাকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy