যত তরিবত সহকারে রাঁধবেন, রসুইখানাটি ততই কালিঝুলি মাখবে। মুরগিতে জম্পেশ করে দই হলুদ মাখালে ক’ফোঁটা মশলা বাটা স্ল্যাবে গড়াবেই। কড়ায় ইলিশ ছাড়লে তেল ছিটকে টাইলসে পড়বে। তার জন্য ‘রান্নাঘর নোংরা চিটচিটে হল’ বলে দুঃখ করতে নেই। তবে এ-ও ঠিক যে, পাকশালাটি তকতকে না রাখলে রান্না করতে মন চায় না। তাই রান্নার শেষে কিচেনের বেসিন, দেওয়াল থেকে তেল মুছে ফেলে রান্নাঘর সাফসুতরো করে ফেলুন।
• নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ধোঁয়া, তরকারির ঝোল, ভাতের মাড় সব কিচেনে জমতে থাকবে। ওই দাগ জমে শক্ত হয়ে গেলে তা ওঠানো মুশকিল। রান্নার গ্যাস ও তার আশপাশের অংশ রান্নাশেষে অবশ্যই মুছবেন। অল্প গরম জলে বাসন মাজার তরলটি গুলে নিয়ে মপ দিয়ে আভেন ও রান্নার জায়গাটি যত্ন করে পরিষ্কার করুন। রান্নার সময়ে পাশে পরিষ্কার কাপড় রাখুন। কিছু ছিটকে দেওয়ালে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে নিন। তখন ফ্রিজ বা মশলাদানি খোলার দরকারেও ওই কাপড় ব্যবহার করবেন। এতে দাগ লাগবে না। ওয়াইপ-স্পঞ্জে এক ফোঁটা ডিশওয়াশার মিশিয়ে ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ আভেন, ব্লেন্ডারের বাইরের অংশ, সিঙ্ক রোজ পরিষ্কার করতে পারলে ভাল। সময়ের অভাবে সপ্তাহে অন্তত দু’-তিন বার সাফ করুন। এ কাজে বেশি দিন ফাঁকি দিলে ওই কালচে বাষ্প মেশানো তেলতেলে আঠালো ভাবটা স্থায়ী হয়ে যাবে। তখন সাধের অ্যাপ্লায়েন্সগুলোর মূর্তি ফেরাতে আপনারই হাড়মাস কালি হবে।
• আভেন পরিষ্কার করতে একটি বাটিতে জলের মধ্যে ভিনিগার বা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে তা আভেনে গরম করুন। দু’মিনিট পরে বার করে নিন। সেই বাষ্পই আভেনের চারপাশে লেগে যাবে। পরে কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
• ব্লেন্ডারের তরল রাখার পাত্রটি খুলে পাতিলেবু, জল ও এক ফোঁটা ডিশওয়াশ দিয়ে আবার চালান। সবশেষে পরিষ্কার জল ভরে চালিয়ে, জল ফেলে মুছে নিন।
• রান্নাঘর খোলামেলা হলে, ভিতরে জিনিসপত্র কম রাখলে চিটে কম হয়। ফ্রিজ, আভেন, মশলার তাক সুদৃশ্য ঢাকনায় মুড়ে রাখাই ভাল। ছোট ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ হয়তো মেলে না। সে ক্ষেত্রে মশলার কৌটো বা অন্য তৈজসপত্র আভেনের থেকে নিচুতে ক্যাবিনেটে ভরে রাখবেন। কাবার্ডের পাল্লাও বন্ধ রাখুন। এতে ওগুলি রান্নার তাপ ও ঝুল থেকে রেহাই পাবে। কারণ রান্না করার সময়ে ধোঁয়া উপরের দিকে ওঠে। ওই ধোঁয়াই দেওয়াল, তাক আর মেঝেও নোংরা চিটচিটে করে দেয়। এ সব সাফাইয়ের জন্য বাজারে প্রচুর লিকুইড ক্লিনার মেলে। এতে স্ক্রাবার ভিজিয়ে সপ্তাহে অন্তত দু’বার (রোজ না পারলে) পুরো জায়গাটা ধুয়েমুছে শুকিয়ে নিলে পাকশালা জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন থাকবে। মাসে এক বার ঝুল ঝেড়ে নিন। মশলার কৌটো নিয়মিত পরিষ্কার করবেন।
• ক্লিনিং প্রডাক্টের ব্যবহারবিধি পড়ে নিন। যে ক্লিনার দিয়ে সেরামিক স্ল্যাব বা দেওয়ালের টাইলস পরিষ্কার করবেন, কাঠের তাক তা দিয়ে মোছা চলবে না। সামান্য আয়াসে বাড়িতেই কিচেন ডি-গ্রিজ়ার তৈরি করে নিতে পারেন। হালকা দাগের জন্য গরম জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে পরিষ্কার করবেন। কড়া তেলচিটে ছোপ হলে একটু ঘন ক্লিনার লাগবে। যেমন লেমন বেসড ক্রিম ক্লিনার। এক কাপ জলে ১/৪ ভাগ ভিনিগার মিশিয়ে ময়লা অংশে দ্রবণটি দশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। পরে জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই কড়া দাগ উধাও। কাঠের আসবাব হোয়াইট স্পিরিটে মুছবেন। সাবধানতার জন্য এক ফোঁটা ক্লিনার দিয়ে অল্প দেওয়াল বা ক্যাবিনেট মুছে আগে পরখ করে নিন এতে পেন্ট বা পালিশের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না।
• রান্নাঘরে কিচেন চিমনি, হুড, এগজ়স্ট ফ্যান থাকলে ধোঁয়া, তেল বাষ্প হয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে। এতে রান্নাঘর ধোপদুরস্ত থাকবে। তবে এই প্রডাক্টগুলোরও নিয়মিত সাফাই জরুরি। পেশাদারকে ডেকে বছরে দু’বার চিমনি সার্ভিসিং করান। অটোক্লিন চিমনি হলেও, সপ্তাহে এক দিন তেলের পাইপটি খুলে ধুয়ে নিন। চিমনির চারপাশ রোজ ভিজে কাপড়ে মুছে দেবেন। জানালার তাক, গ্রিল, এগজ়স্ট ফ্যানের খাঁজে খুব ময়লা জমে। প্রশিক্ষিত লোক ডেকে তা সাফ করাতে পারলে ভাল। নিজে করতে হলে একটা ছুরি দিয়ে গ্রিলের কোণ, ফ্যান ব্লেডের ফাঁকে আঁকড়ে থাকা ময়লা প্রথমে চেঁছে নিন। পরে বাসন মাজার সাবান কাপড়ে নিয়ে তা দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেও চলবে।
এত ঝাড়পোঁছের পরে নিজের হাত দু’টিকেও ধুয়েমুছে মোলায়েম করে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন! গৃহিণী ও তাঁর হেঁশেল— দুইই থাকুক শ্রীময়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy