‘হেলদি ইটিং’— কথাটা শুনলেই মনটা কেমন যেন হু হু করে ওঠে। খাবারকে স্বাস্থ্যসম্মত বানিয়ে তোলা মানেই তো রসনার প্যাম্পারিংয়ে ইতি। সারা দিনের কাজের চাপে একটু ফাঁক খুঁজে আয়েশ করে ফিশফ্রাইয়ে কামড় না বসানো কিংবা সিনেমা দেখার ফাঁকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই না চিবোনো যেন এক মহা অসুখী জীবনের চিহ্ন! তবে শরীরটাকেও তো রাখতে হবে। জাঙ্ক ফুডের ট্রান্স ফ্যাট যে শরীরের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। কিন্তু একটু ‘ক্রিয়েটিভিটি’ খরচ করলেই বোরিং খাবারও হয়ে উঠতে পারে চমৎকার মুখরোচক।
উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। গরমের দিনে আইসক্রিমের হাতছানি এড়ানো মুশকিল। কিন্তু ফ্রিজে রাখা টক দইয়ে তাজা ফলের কুচি বা বাদাম মিশিয়ে খেয়ে দেখেছেন কখনও? আইসক্রিমের চেয়ে স্বাদে কিছু কম যায় না। অভ্যেসের এ রকম ছোটখাটো বদলেই কিন্তু সাশ্রয় হতে পারে অনেকটা ক্যালরি। আবার ধরুন, অফিসে কাজের ফাঁকে মুখ চালাতে চাইলে সিদ্ধ বা ভেজানো ছোলা সঙ্গে রাখুন। সাধারণ বাদামের বদলে আমন্ড খাওয়া অনেক ভাল। আর যাঁদের এনার্জি লেভেল কম, তাঁদের জন্য খেজুর, কিশমিশ চলতে পারে। বাইরে বেরিয়ে খিদে পেলে সাধারণ টোস্টের সঙ্গে ডিমসিদ্ধ খাওয়া নিরাপদ বা ইডলি-দোসাতেও ভরসা রাখতে পারেন। তবে চাটনি নয়, সম্বর দিয়ে খান।
বাইরে বেরোলে গরমের দিনে নরম পানীয়ে গলা ভেজাতে মন চায়। কিন্তু শরীরের কথা ভেবে নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে লস্যি বা ফ্রুট জুস খান। ফ্রুট জুসে চিনির পরিমাণ বেশি আর ফাইবার কম থাকে বলে ডায়াটিশিয়ানরা গোটা ফল খেতে বলেন। কিন্তু উপায় না থাকলে ফলের রস খেতেই পারেন। তবে সবচেয়ে ভাল ডাবের জল। এ ভাবেই খাবারের অপশনের সামান্য অদলবদলে স্বাদ ও স্বাস্থ্য, দুই-ই কিন্তু বজায় থাকবে ষোলো আনা।
মহিলাদের জন্য
গড়পরতা বাঙালি বাড়িতে রাতের খাবারে থাকে আটার রুটি কিংবা ভাত। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী জানাচ্ছেন, ‘‘আটার সঙ্গে পাঁচ থেকে দশ গ্রাম ওটস গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেওয়া হলে রুটিতে ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে যায়। একই ভাবে আটার সঙ্গে ছাতুর গুঁড়োও মিশিয়ে নেওয়া যায় দু’চামচ। ছাতুতে থাকে প্রোটিন। এতে স্বাদের পরিবর্তন হয় না, কিন্তু পুষ্টি বাড়ে। মহিলাদের মধ্যে লো হিমোগ্লোবিনের সমস্যা খুব বেশি। তার জন্য পালংশাক দিয়ে তৈরি রুটি খুব উপকারী। পালংশাক সিদ্ধ করে তা মিক্সিতে পিষে নিতে হবে।
জলটা আলাদা রাখুন। স্বাদের জন্য শাকের সঙ্গে নুন, হিং, জিরে মেশানো যেতে পারে। এ বার সিদ্ধ করা জল দিয়ে শাকটা আটার সঙ্গে মেখে রুটি বানিয়ে খেলে প্রয়োজনীয় আয়রন তো মিলবেই, সঙ্গে পাওয়া
যাবে প্রচুর ভিটামিন ডি। সেই জন্য বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই রুটি ভীষণ উপকারী। রবিবারের সকালে পরোটা খেতে চাইলে, চেষ্টা করুন, না-ভেজে ননস্টিক তাওয়াতে অল্প তেল ব্রাশ করে সেঁকে নিতে।
ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে
ডায়াবিটিস রোগীদের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াই ভাল। যেমন— ডালিয়ার খিচুড়ি। তবে কিডনির অসুখ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খাবেন। ডায়াবিটিক রোগীরা সুজির উপমা না খেয়ে ওটস আর আনাজ দিয়ে তৈরি উপমা খেতে পারেন। তৈরির নিয়ম একই। ওটসও এ ধরনের রোগীদের জন্য ভাল। আনাজ দিয়ে চিঁড়ের পোলাও খাওয়া যায়। দুটো মিলের মাঝে মুখ চালাতে চাইলে, ছোলা বা মুগ সিদ্ধ খান। আর ভাত খাওয়ার আগে শসা আর টক দই খেয়ে নিয়ে খেতে বসুন। এতে ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমে।
খুদের টিফিন
বাড়িতে বানানো যে কোনও মুখরোচক খাবারই বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ভাল বলে মনে করেন ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী। যেমন, আইসক্রিমের বদলে বাড়িতে ফ্রুট কাস্টার্ড সুস্বাদু এবং উপাদেয়। কাচের বাটিতে একটি স্তর কাস্টার্ডের, তার উপরে রকমারি ফলের টুকরো, তার উপরে আবার কাস্টার্ডের একটি লেয়ার তৈরি করে ফ্রিজে ঠান্ডা করে নিন। বিশেষ করে, কম ওজনের বাচ্চাদের জন্য এই কাস্টার্ড খুব উপকারী। বাজারচলতি কোল্ড ড্রিংকসের আসক্তি কাটাতে বাড়িতে ম্যাঙ্গো শেক বা বানানা শেক বানিয়ে দিন।
বাচ্চাদের টিফিনে স্যান্ডউইচ তো চলেই। তবে স্যান্ডউইচের পুর বানানোর সময়ে, শুধু আলুসিদ্ধ না দিয়ে এর সঙ্গে ছানা মিশিয়ে নিন। তেলে পেঁয়াজ কুচি, আদা কুচি, টম্যাটো কুচি দিয়ে অল্প ভেজে আলুসিদ্ধ আর ছানার মিশ্রণ নেড়ে নিন। নুন, ধনেপাতা, চাট মশলা মিশিয়ে পুরটা বানিয়ে নিন। এতে কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রোটিনও থাকবে। তবে দই বা ছানা সব সময়েই ডাবল টোনড দুধে বানানো উচিত। মাছ-মাংস খেতে না চাইলে, তাদের জন্য বানিয়ে ফেলা যায় ফিশ বা চিকেন টিকিয়া। আলুর সঙ্গে মাছ বা চিকেন সিদ্ধ করে চ্যাপ্টা করে গড়ে, তাওয়ায় সেঁকে টিফিনে দেওয়া যায়। গ্রিলড চিকেনও বেশ স্বাস্থ্যকর। ভাত খেতে না চাইলে, পরোটার মধ্যে ছাতু বা ডালের পুর দিয়ে সেঁকে খাওয়ানো যায়, জানালেন সুবর্ণা।
এ রকম অল্পবিস্তর পরিবর্তনেই কিন্তু খাদ্যতালিকা সুষম হয়ে উঠবে।
মডেল: ঐশ্বর্য সেন; ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট; লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা ক্লাব, চকগড়িয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy