সকালে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি বা চায়ের কাপে চুমুক দিলে তবেই কাজ করার ইচ্ছে জাগে। কর্মরত মহিলারা অফিসের টেবিলে আর যাঁরা ঘর সামলান, তাঁরা বাড়ির পছন্দের চেয়ারটিতে বসে বা কাজ সারতে সারতে ওই দৈনিক কর্মোদ্যমের অনুঘটক পান করেন। কিন্তু ওই একই অভ্যাস কি ঋতুস্রাব হওয়ার সময়ে বা কিছু দিন আগেও বজায় রাখেন? চিকিৎসকেরা বলছেন, সে ক্ষেত্রে মহিলারা অজান্তেই নিজেদের অস্বস্তির কারণ তৈরি করছেন। বিশেষ করে তাঁরা, যাঁরা ঋতু চলাকালীন তলপেটে ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে তার জন্য কাজও করতে পারেন না দু’-এক দিন।
ঋতু চলাকালীন অন্যান্য অস্বস্তির পাশাপাশি পেটের ব্যথার সমস্যাকেও মেনেই নেন অধিকাংশ মহিলা। কিন্তু পেটের যন্ত্রণা কেন হয়? কিছু অভ্যাস বদলালে কি সেই সমস্যা কমতে পারে? চিকিৎসক বলছেন ঋতু চলাকালীন এবং ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার দিন কয়েক আগে থেকে চা-কফি, মশালাদার খাবার এবং দুগ্ধজাত খাবার নিয়ন্ত্রণ করলে পার্থক্য চোখে পড়তে পারে।

ক্যাফিন রক্তবাহী নালিকাকে সঙ্কুচিত করে দিতে পারে।
১। কফি কি ঋতুস্রাবের সময়ের ব্যথার জন্য দায়ী?
কফি এবং চা অথবা ক্যাফিন যুক্ত যে কোনও এনার্জি ড্রিঙ্ক ঋতুচলাকালীন পেটের ব্যথা্কে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক আবির সরকার এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ক্যাফিন রক্তবাহী নালিকাকে সঙ্কুচিত করে দেয়। যার প্রভাব পড়ে রক্ত সঞ্চালনেও। ফলে জরায়ুতেও রক্ত পৌঁছয় না। এতে ঋতুর সময়ের ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। এ ছাড়া ক্যাফিন শরীরের আর্দ্রতাও কমিয়ে দেয়। যা ঋতু চলাকালীন অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।’’ মুম্বইয়ের পুষ্টিবিদ সিমরত কাঠুরিয়া আবার এ ব্যাপারে একটি গবেষণার উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, সারা দিনে যদি ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন শরীরে যায় (যা মোটামুটি ২-৩ কাপ কফি থেকেই পাওয়া যায়), তা হলেই রক্তবাহী নালিকাকে সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে। কাঠুরিয়ার মতে, ‘‘ঋতু শুরু হওয়ার দিন কয়েক আগেও নিয়মিত ক্যাফিন শরীরে গেলে, তা ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।’’

অনেকেই ঋতুর সময়ে দুগ্ধজাত খাবার নিয়ন্ত্রণ করে পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। —ফাইল চিত্র।
২। দুগ্ধজাত খাবারেও কি ঋতুর ব্যথা বাড়তে পারে?
দুগ্ধজাত যে কোনও খাবারেই থাকে আরাকিডোনিক অ্যাসিড। যা শরীরে গেলে প্রস্টাগ্লান্ডিনের ক্ষরণ বাড়ে। চিকিৎসক সরকার বলছেন, ‘‘প্রস্টাগ্লান্ডিন হরমোনের মতোই একটি উপাদান, যা জরায়ুর ব্যথার জন্য দায়ী। দুগ্ধজাত খাবারে সেই উপাদানকে আরও বেশি সক্রিয় করে দিলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যথা বাড়তে পারে।’’ তবে একই সঙ্গে চিকিৎসক বলছেন, সবার ক্ষেত্রে বিষয়টি সমান না-ও হতে পারে। তবে যাঁদের ঋতু চলাকালীন পেটে ব্যথার সমস্যা হয়, তাঁদের অনেকেই ওই সময়ে দুগ্ধজাত খাবার নিয়ন্ত্রণ করে পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন।

জরায়ুর ব্যথার পাশাপাশি বদহজম এবং প্রদাহজনিত ব্যথা অস্বস্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
৩। মশলাদার খাবার বা ফাস্টফুডও কি খাওয়া উচিত নয়?
যে কোনও প্রক্রিয়াজাত খাবারেই অতিরিক্ত চিনি, নুন এবং অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে বেশি। চিকিৎসক বলছেন, সেই সবও প্রস্টাগ্ল্যান্ডিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত তেলমশলা দেওয়া খাবারের সঙ্গে সচরাচর জরায়ুর ব্যথার যোগ না থাকলেও ওই ধরনের খাবার খেলে প্রদাহের সমস্যা বাড়তে পারে, দেখা দিতে পারে অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যাও। প্রদাহ শরীরে ব্যথা-বেদনার কারণ। জরায়ুর ব্যথার পাশাপাশি বদহজম এবং প্রদাহজনিত ব্যথা অস্বস্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
তবে কী করা উচিত?
চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদ— দু’জনেই জানাচ্ছেন, ঋতু চলাকালীন ব্যথার আরও অনেক রকমের কারণ থাকতে পারে। তাই ব্যথা সহ্যের বাইরে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। তার পাশাপাশি সাবধানতা হিসাবে উপরোক্ত খাবারে রাশ টানলে উপকার হতে পারে।