পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) আর্থিক তছরুপের মামলায় অভিযুক্ত মেহুল চোকসীকে বেলজিয়ামে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর গ্রেফতারির সংবাদে খুশি বেঙ্গালুরুর উদ্যোগপতি হরিপ্রসাদ এসভি। ন’বছর আগে তিনিই প্রকাশ্যে এনেছিলেন চোকসীর দুর্নীতি। পিএনবি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা যে তিনি সরিয়ে ফেলছেন, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন হরিপ্রসাদ। এমনকি, চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরেও। তাঁর উদ্যোগের ফলেই চোকসীর বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে পালান তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে হরিপ্রসাদ বলেছেন, ‘‘এটা দারুণ খবর। শুধু ভারতের জন্য নয়, যাঁরা ওঁর দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্য। যত দ্রুত সম্ভব ওঁকে ভারতে নিয়ে আসা এবং বিচারের সম্মুখীন করা প্রয়োজন।’’ চোকসীর থেকে সমস্ত প্রতারণার টাকা উদ্ধার করার কথাও বলেছেন হরিপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁকে ভারতে নিয়ে আসার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল টাকা উদ্ধার করা। যত টাকা চোকসী ভারত থেকে সরিয়েছেন, তা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই রাখুন না কেন, উদ্ধার করতে হবে। আশা করছি ভারত সরকার সফল হবে।’’
আরও পড়ুন:
যদিও চোকসীকে দেশে ফেরানো খুব সহজ হবে না বলেই মনে করছেন হরিপ্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘ভারতে চোকসীকে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। কারণ, ওঁর পকেট ভর্তি। প্রত্যর্পণ এড়াতে তিনি ইউরোপের সেরা আইনজীবীদের নিয়োগ করবেন। ঠিক যেমনটা করছেন বিজয় মাল্য। আমার মনে হয় না ভারত সরকারের কাজটা অত সহজ হবে।’’
চোকসীর কীর্তি ফাঁস করতে কী করেছিলেন হরিপ্রসাদ?
২০১৫ সালে প্রথম চোকসী এবং তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলি জেম্স দ্বারা প্রতারিত হন হরিপ্রসাদ নিজে। প্রথমে তিনি বেঙ্গালুরু পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এবং চোকসীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এর পর একে একে ইডি, সিবিআই এমনকি, সেবিকেও চিঠি লিখে প্রতারণার কথা জানিয়েছিলেন হরিপ্রসাদ। ২০১৬ সালে তিনি চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে (পিএমও)। একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকেও। চিঠিতে হরিপ্রসাদ জানান, তাঁর সঙ্গে ১০ কোটি টাকার প্রতারণা করা হয়েছে। সেই সংক্রান্ত খোঁজখবর করতে গিয়ে আরও দুর্নীতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর চোখের সামনে। গীতাঞ্জলি জেম্সের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার। অথচ, ব্যাঙ্ক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দেওয়া চিঠিতে সম্ভাব্য দুর্নীতির কথা লিখেছিলেন হরিপ্রসাদ। জানিয়েছিলেন, ব্যালান্স শিট ঘেঁটে বোঝা যাচ্ছে, হিসাবে বড়সড় গোলমাল রয়েছে। তাঁর চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছিল পিএমও। তার পরেই পিএনবি কর্তৃপক্ষ চোকসী ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগ, ভারতের অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি ভাবে বিদেশি অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠিয়ে দিয়েছেন চোকসী। ইডি এবং সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে মোট ১৩,৮৫০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা করেছে। পিএনবি তছরুপে তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাগ্নে নীরব মোদীরও ভূমিকা ছিল। তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ব্রিটেন থেকে তাঁর প্রত্যর্পণেরও চেষ্টা চলছে।