বড় রাজ্যগুলির মধ্যে গত দু’বছরে সবচেয়ে বেশি সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হয়েছে তেলঙ্গানায়। প্রতীকী ছবি।
দেশে যথেচ্ছ ভাবে বাড়ছে সি-সেকশন বা সিজারিয়ান প্রসব। ঝুঁকি এড়াতে গিয়ে এ ধাঁচের প্রসব উল্টে মা-সন্তানের বিপদ বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গত বছর গোটা দেশে যেখানে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সি-সেকশনের কারণে শিশু জন্মের গড় ২৩.২৯ শতাংশ ছিল, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি একশোর মধ্যে ৮৪ জন শিশুর জন্ম হচ্ছে সি-সেকশনের মাধ্যমে। তুলনায় গো-বলয়ের রাজ্যগুলিতে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে জন্মের হার দশ শতাংশের কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনও দেশের মোট প্রসবের মধ্যে সি-সেকশন প্রসব ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হেল্থ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে গোটা দেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল ২১.৩ শতাংশ শিশুর। আর গত বছর (২০২১-২২) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.২৯ শতাংশে। যার অর্থ দেশের চার ভাগের এক ভাগ শিশুর জন্ম হচ্ছে সিজারিয়ান প্রসবের কারণে। যা চিন্তার।
বড় রাজ্যগুলির মধ্যে গত দু’বছরে সবচেয়ে বেশি সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হয়েছে তেলঙ্গানায়। ওই রাজ্যে গত বছরে ৫৪.০৯ শতাংশ ও তার আগের বছরে ৫৫.৩৩ শতাংশ বাচ্চা জন্মেছে সি-সেকশন প্রসবে। যার মধ্যে গত বছর তেলঙ্গানার কেবল সরকারি হাসপাতালে ৪৭.১৩ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান প্রসবের কারণে। গত বছরে অন্য বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সিজারিয়ান প্রসবের প্রশ্নে তালিকার উপর দিকে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর (৪৮.৯৭%) তামিলনাড়ু (৪৬.৯৪%), কেরল (৪২.৪১%), অন্ধপ্রদেশ (৪২.১৫%)। তুলনায় গো-বলয়ের রাজ্য বিহার (৫.৬৬%), উত্তরপ্রদেশ (৯.৫১%), ঝাড়খণ্ড (৯.১৩%), রাজস্থানে (১৩.৪৩%) সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেকটাই কম। ঠিক তেমনই বাড়িতে প্রসবের প্রশ্নে জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেকটাই পরিসংখ্যানে এগিয়ে রয়েছে গো-বলয়ের ওই রাজ্যগুলি।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে চিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। জাতীয় গড় যেখানে ২৪ শতাংশের কাছাকাছি সেখানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সিজারিয়ান প্রসব হচ্ছে ৪২.১৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। সরকারি হাসপাতালেই প্রতি একশো শিশুর মধ্যে ২৬ জন জন্মাচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতির মাধ্যমে। সেখানে বেসরকারি ক্ষেত্রে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩.৮৮ শতাংশে।
কেন্দ্রীয় এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, ‘‘এর পিছনে আর্থ-সামাজিক একাধিক কারণ রয়েছে। অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব হলে শিশু বুদ্ধিমান হবে। তেমনি অধিকাংশই মা-ই প্রসববেদনা সহ্য করতে চান না। তাই তাঁরা সিজারিয়ান প্রসব করানোর জন্য চিকিৎসকের উপর চাপ দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সময় বাঁচাতে ওই পদ্ধতির সাহায্য নেন। কারণ এক জন রোগীর প্রসববেদনা ওঠা থেকে প্রসব হওয়া পর্যন্ত ছয়-আট ঘণ্টা সময় লাগে। স্বভাবতই চিকিৎসকেরা সেই সময় দিতে চান না। এ ছাড়া রয়েছে আর্থিক দিকটি। অপারেশন হলে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লাভ বেশি হয়।’’
উত্তরপ্রদেশের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অজিত রাণার মতে, সিজারিয়ান চিকিৎসার অনেক খারাপ দিকও আছে। মূলত মা-কে যার জন্য পরবর্তী সময়ে ভুগতে হয়। সাধারণ প্রসবের থেকে এ ক্ষেত্রে জন্মের পরে শিশুর মৃত্যুহার অনেক বেশি। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে মায়েদের ক্ষেত্রে জরায়ুর স্থান পরিবর্তন হয়ে নেমে আসা, অঙ্গের ক্ষতি হওয়া, ভিতরে রক্তপাত, ‘একটোপিক প্রেগন্যান্সি’, মৃত শিশু বা সময়ের আগে শিশু জন্মানোর মতো ঘটনা অনেক বেড়ে যায়।
তাই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের প্রবণতা কমাতে ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’-এর উপরে জোর দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের মতে, রাজ্যের উচিত আচমকা হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করে কত সংখ্যক রোগীকে কেন সিজারিয়ান প্রসবের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা। তবেই একমাত্র ওই প্রবণতা কমতে পারে। স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, সিজারিয়ান প্রসব কমলে মায়েদের স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে, প্রসবকালীন খরচও কম হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy