প্রতিযোগী ফাস্টফুড প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বার্গার ও পিৎজা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকেই ‘প্রোমোট’ করছেন ‘বার্গার কিং ম্যাকডোনাল্ড’ ।
ধরা যাক, আপনি অসম্ভব বিরিয়ানি-ভক্ত। শহরের সেরা রেস্তোরাঁগুলো আপনার নখদর্পণে। তেমনই এক জায়গায় সপরিবার বা বন্ধুবান্ধব মিলে খেতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত এবং অদ্ভুত অনুরোধের সম্মুখীন হলেন। বিল দেওয়ার সময় রেস্তোরাঁর কর্মীরা পরিচিত সৌজন্য না দেখিয়ে অন্যান্য কিছু মোগলাই খাবারের রেস্তোরাঁতেও যাবার অনুরোধ করলেন।
এ ঘটনা কাল্পনিক। আবার কাল্পনিক নয়ও বটে।
যেখানে একটি পাড়ায় দু’টি স্টেশনারি দোকান। দু’টি মাংসের দোকান বা দু’টি পার্লারের মধ্যেও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলে, সেখানে একটি রেস্তোরাঁর সঙ্গে অন্য রেস্তোরাঁর প্রতিযোগিতাটা আরও কঠিন। খাবারের স্বাদ, পরিমাণ, দাম, পরিচ্ছন্নতা— সবকিছুই মাইক্রোস্কোপের তলায় তুলনায় চলে আসে। তাই সুনামের লড়াইও চলে অবিরাম। কিন্তু কোভিড অতিমারি পরিস্থিতি সেই প্রতিযোগিতাকেও ভুলিয়ে দিয়েছে। বিখ্যাত বার্গার ও পিৎজা প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘বার্গার কিং ম্যাকডোনাল্ড’ ইংল্যান্ডের খাদ্যরসিকদের জন্য এক অভিনব এবং অভূতপূর্ব আবেদন প্রকাশ করেছেন তাঁদের ফেসবুক এবং টুইটারে। যেখানে তাঁরা গ্রাহকদের কাছে আবেদন করেছেন অন্যান্য বার্গার ও পিৎজা প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছ থেকেও খাবার কিনতে। তাঁরা গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে চাইছেন হোম ডেলিভারির বরাত দিতে। অভিনব হল— সেটা শুধু তাঁদের ম্যাকডোনাল্ডের থেকেই নিতে হবে এমন নয়। উল্টে তাঁরা বলছেন, গ্রাহকরা যেন কেএফসি, সাবওয়ে, ডোমিনোজ, পিৎজা হাট, ফাইভ গাইজ, ট্যাকো বেল, গ্রেগস, পাপা জনস্-সহ অন্যান্য খাবার প্রস্তুতকারী সংস্থার নামও। অর্থাৎ, তাঁরা নিজেদের প্রতিযোগী ফাস্টফুড প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বার্গার ও পিৎজা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকেই ‘প্রোমোট’ করছেন। যা দৃষ্টান্তমূলক। কারণ, এ ঘটনা অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।
আরও পড়ুন: বিশ্ব জুড়ে ওবেসিটিতে ফি বছর প্রাণ যায় ২৮ লাখের!
ইংল্যান্ডে নতুন করে শুরু হয়েছে লকডাউন, চলবে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত
করোনাভাইরাসের প্রকোপে ইতিমধ্যেই নতুন করে লকডাউনের মুখোমুখি বেশ কিছু দেশ। ইংল্যান্ডেও শুরু হয়েছে লকডাউন। চলবে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা খাবারের আউটলেটে কর্মরত লোকজনের পক্ষে দুঃসংবাদ। সেই পরিস্থিতির কথা ভেবেই বার্গার কিং ম্যাকডোনাল্ডের এই আবেদন। তাঁদের আর্জি— সমস্যাটির স্পর্শকাতরতার দিকটি অনুভব করে জনতা সাহায্য করতে আগ্রহী হলে তারা যেন হোম ডেলিভারি, টেক অ্যাওয়ের মাধ্যমে ম্যাকডোনাল্ড-সহ অন্যান্য সংস্থার খাবারও কেনেন। এতে চাকরি রক্ষা হবে হাজার হাজার কর্মীর। বক্তব্যের শুরুতেই বার্গার কিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোনওদিন যে এমন অনুরোধ করতে হবে, তা তাঁরা নিজেরাও ভাবেননি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ম্যাকডোনাল্ডের পোস্টটি সাড়া ফেলেছে। ফেসবুকে শেয়ারের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৪০ হাজার। টুইটারে ১ লক্ষেরও বেশি। প্রায় প্রত্যেকেই লিখেছেন, এই উদ্যোগ এক প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত। তবে পাশাপাশিই শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় শেয়ার বাজারে বার্গার কিংয়ের শেয়ার ছাড়ার কথা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে। যা থেকে অনেকে বলছেন, এই উদ্যোগ কি তাহলে নিছক নিজেদের সুনাম এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে?
কলকাতা শহরের কোনও প্রতিষ্ঠিত ফুড চেন কি এমন ‘সৌভ্রাতৃত্ব’ দেখানোর কথা ভাববে?
বিষয়টি ‘মেনল্যান্ড চায়না’র প্রতিষ্ঠাতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নজরে এসেছে। ওই উদ্যোগকে সাদরে অভিবাদন জানিয়েছেন তিনি। তবে পাশাপাশিই জানিয়েছেন, ম্যাকডোনাল্ডের বিশ্বজোড়া পরিকাঠামোই তাদের এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে সাহস দিয়েছে। যেটা চাইলেই সকলের পক্ষে করা সম্ভব নয়। মোগলাই খাবারের রেস্তোরাঁ ‘অওধ’এর প্রতিষ্ঠাতা শিলাদিত্য চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘ম্যাকডোনাল্ডসের ওই উদ্যোগ তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। তবে স্বপ্ন দেখলে এ ভাবেই দেখা উচিত। তার লক্ষ্য হওয়া উচিত বৃহৎ এবং সুদূরপ্রসারী।’’ শিলাদিত্য জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতি কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের অন্নসংস্থানের মাধ্যম। চাকরি নেই। থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে বেতন পাওয়া নিয়ে নানা শর্ত ও সমস্যা! তবে যে কর্মীদের নিয়ে তাঁর রেস্তোরাঁর সুনামের ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তাঁদের সুরক্ষা সকলের আগে। লকডাউনের সময় দু’মাস অর্ধেক বেতন পেলেও বাকি সময়ে তাঁর কর্মীরা পুরো বেতন পেয়েছেন। এমনকি, পুজোর বোনাসও। শিলাদিত্যের দাবি, তাঁর সংস্থার ৭০০ কর্মচারীর কারওরই চাকরি যায়নি। বরং আরও ৭২ জনের নিয়োগ হয়েছে।
ম্যাকডোনাল্ডের বিশ্বজোড়া পরিকাঠামোই তাদের এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে সাহস দিয়েছে
আরও পড়ুন: করোনা থেকে সেরে উঠছেন? ভাল থাকতে কী কী খেতেই হবে
ভারতীয় মানসিকতা তথা বাঙালির খাদ্যাভাসের দিকটির কথা ভাবলে বার্গার কিংয়ের আবেদনের প্রতি আলাদা আকর্ষণ বোধ করেন না বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ ‘ভজহরি মান্না’র বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের সদস্য সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এটা বিদেশের পরিকাঠামোয় মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও আমাদের ভাত–রুটি, ডাল-তরকারি, ভাজা, মাছ-মাংসের যাপনে মোটেই তেমন উল্লসিত হওয়ার মতো কিছু না। ভারতীয় পরিকাঠামো ও পরিবার প্রথায় বাড়িতে রান্নার লোক থাকা বা বাড়িতে রান্নার সুবন্দোবস্ত রাখাটাই স্বাভাবিক। সেখানে বাড়ির বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খাওয়াটা প্রাত্যহিক রুটিন হতে পারে না।’’ একই মত ‘কন্টিনেন্টাল ক্যাটারার’এর মালিক রঙ্গন নিয়োগীরও। তাঁর মতে, ‘‘বার্গার কিং যেটা বলতে চেয়েছে, সেটা ওদের পরিকাঠামোয় বলা এবং সফল করা দুটোই হয়ত সম্ভব। আমাদের এখানে নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy