প্রতীকী ছবি।
বছর সাতেকের ঈশান ক্লাস চলাকালীন অধিকাংশ সময় অমনোযোগী থাকে। কোনও প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে না। এমনকি শিক্ষিকা কোনও নির্দেশ দিলেও সে ঠিকমতো বুঝতেও পারে না। বেশ কয়েক সপ্তাহ তাকে পর্যবেক্ষণের পরে স্কুলের তরফে ঈশানের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, ঈশানের আচরণগত সমস্যা রয়েছে। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য জানতে পারেন ঈশানের বাবা-মা।
একই ভাবে বছর দশেকের রক্তিমের পরিবারকেও তার স্কুলের শিক্ষক জানিয়েছিলেন, সে ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার’-এর (এডিএইচএডি) শিকার। পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্র তার বন্ধু বা শিক্ষকদের কোনও কথাই ঠিকমতো বোঝাতে পারত না। সামান্য কারণেই রেগে যেত, বিরক্ত হত। পড়াশোনা-খেলাধুলো কিছুতেই বিশেষ আগ্রহ দেখাতো না। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তিমের অভিভাবকেরা জানতে পারেন সমস্যা আসলে অন্য।
কর্ণাটকের একটি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ ভাবে সমীক্ষা চালিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কলকাতা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লির মতো দেশের বিভিন্ন বড় শহরের কয়েক হাজার শিশুদের নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে, ৬-১১ বছর বয়সিদের মধ্যে ১৩ শতাংশ এবং ১২-১৮ বছর বয়সিদের ১৪ শতাংশ স্থূলতার সমস্যার শিকার। যাদের মধ্যে অধিকাংশ ঘুমের সমস্যায় ভোগে। যার জেরেই তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা ঠিকমতো নির্ণয় করা যায় না। ফলে, তাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এমনকি সঠিক সমস্যা নির্ণয় না হওয়ায় ঈশান, রক্তিমের মতো একাধিক শিশু এডিএইচএডি ভুক্তভোগীর তকমাও পেয়ে যায়।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্থূলতার সমস্যা থাকলে অনেক শিশুই টানা ঘুমের বদলে বারবার উঠে বসে, নাক দিয়ে আওয়াজ হয়। ভারি ঘাড়, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার জেরে ঘুমের সমস্যা তৈরি হয়। এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ জানান, স্থূলতা ও ঘুমের সমস্যার পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। দেহের ওজন বেশি হলে অক্সিজেনের প্রবেশে সমস্যা হয়। ফলে ঘুমে সমস্যা হয়। পাশাপাশি, ঘুমের সময় জিভ, নাক, শ্বাসনালীর ক্রিয়া পরিবর্তিত হয়। অতিরিক্ত ওজনে ওই অঙ্গগুলির ক্রিয়া ঠিক মতো হয় না, যাকে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বলে। এর জেরেই স্থূল ব্যক্তি বা শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
শহুরে শিশুদের একটা বড় অংশ এই সমস্যায় ভুগলেও, সেটা যথেষ্ট অবহেলিত বলেই মনে করছেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘স্থূলতা ও অনিদ্রার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। স্থূলতার জেরে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় শিশুদের নানা আচরণগত সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময় সেটা ঠিক মতো যাচাই করা হয় না। ফলে সমস্যা জটিল হয়।’’
স্লিপিং ডিসঅর্ডার নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক সৌরভ দাস বলেন, ‘‘দিনে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম খুবই জরুরি। বিশেষত শিশুদের বিকাশে পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্থূলতার সমস্যায় ভুগলে ঘুমের সমস্যা হয়। যার জেরে অনেক সময় কাজে মনোনিবেশ করা যায় না, দক্ষতা কমে যায়। ফলে সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে।’’
শিশুদের মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করা মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ জানান, দেহের ওজন বেশি হলেই যে কেউ কোনও কাজ করতে পারবে না, এই মানসিকতাই অনেক সময় স্থূলাকার শিশুর কাজের প্রতি \উৎসাহ কমিয়ে দেয়। তা ছাড়া অনেক সময় তাদের কাজে সময় বেশি লাগে, যে কারণে তাদের প্রতি অবহেলা দেখা যায়। এটাও খুব ক্ষতিকারক। তাঁর পরামর্শ, ‘‘কোনও শিশুর আচরণ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বাড়তি সতর্কতা জরুরি। অনেক সময় বড়দের তার প্রতি আচরণও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy