পুজোয় সোনার গয়না পরার চল এখন অনেক কমে এসেছে। নিজস্ব চিত্র।
বাঙালির বারো মাসে হাজার পার্বণ। সারা বছর উৎসব লেগেই থাকে। নানা উদ্যাপনের মাঝেই বাঙালি কিন্তু প্রহর গোনে শারোদোৎসবের। তাই পুজোর মাস কয়েক আগে থেকেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। পুজোর ক’টি দিন নিজেকে কী ভাবে সাজাবেন, তা মাথা খাটিয়ে বার করতে হচ্ছে। পুজোর সমাগমে নজরকাড়া তো মুখের কথা নয়। কেতাদুরস্ত সুন্দর পোশাক পরলেই তো হল না, তার সঙ্গে চাই মানানসই গয়না। পুজোর সাজ বলে কথা। সকলের চেয়ে আলাদা হওয়া চাই।
পুজোয় সোনার গয়না পরার চল এখন অনেক কমে এসেছে। আট থেকে আশি— অনেকেই ঝুঁকছেন জাঙ্ক গয়নার দিকে। শাড়ি তো বটেই, সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। নকশাতেও বৈচিত্র রয়েছে। দেখতেও মন্দ লাগে না। পুজোর ভিড়ে হারিয়ে ফেলারও ভয়। দামও সাধ্যের মধ্যে। সুবিধা সব দিকেই।
দুপুর দু’টোর নিউ মার্কেট চত্বর। থিকথিক করছে ভিড়। পা ফেলার এতটুকু জায়গা নেই। মাথার উপর চড়া রোদ। সে সব উপেক্ষা করেই চলছে কেনাকাটা, দোকানদারের হাঁকডাক, দর কষাকষি। নিজের জন্য সেরা জিনিসটি বেছে নেওয়ার পর, কারও মুখে তৃপ্তির হাসি। গোটা চিত্রটাই বলে দিচ্ছে পুজো আসছে। প্রতি বছরই নতুন কিছু গয়না ‘ট্রেন্ড’-এ থাকে। আগের বছর যেমন পমপম খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ছোট-বড় সকলের কানে-গলায় শোভা পাচ্ছিল রঙিন তুলোর বল। এ বছরের পুজোয় কী ধরনের গয়না বেশি বিক্রি হচ্ছে? জাঙ্ক গয়নার কেনার ঝোঁকই বা কতটা? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ধর্মতলার পুজোর ভিড়ে বেরিয়ে পড়ল আনন্দবাজার অনলাইন।
হগ মার্কেটের সামনে সার বেঁধে যে জাঙ্ক গয়নার অস্থায়ী দোকানগুলি রয়েছে, তারই একটি নওশাদ আলির। তাঁর দোকানের বাইরে অক্সিডাইজড হার ঝুলিয়ে রাখা আছে। মা দুর্গার আবক্ষ ছোট মূর্তি বসানো, গামছার কাজ করা চৌকো মাটির হারও রয়েছে সেই সারিতে। সে দিকে দেখিয়ে নওশাদ বললেন, ‘‘এই হারগুলি এ বার উঠেছে। অনেকেই এসে এই ধরনের হারের খোঁজ করছেন। মাটির হার তো এখন আর তেমন কেউ পরেন না। এই পুজোর সময় যা একটু লোকজন কেনে। বেশি দামও না। ২৫০ টাকার মধ্যে।’’
পর পর কয়েকটি দোকানেও একই ছবি। তবে অক্সিডাইজড আর ব্ল্যাক পলিশ গয়নার বেশ চাহিদা আছে। হালকা, ভারী, চিকন, মোটা— পছন্দ অনুযায়ী সব কিছুই পেয়ে যাবেন। জিন্স থেকে শাড়ি— সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেও মানিয়ে যায়। বিভিন্ন বয়সের মানুষও এই ধরনের গয়না কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলিতে। অক্সিডাইজড ধাতুর হারগুলির দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু। গয়নার মানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হবে দামও।
ভিড় মানেই যে প্রচুর বিক্রিবাটা হচ্ছে, এমন কিন্তু নয়। অন্তত তেমনটাই জানালেন অন্য একটি অস্থায়ী জাঙ্ক গয়নার দোকানের মালিক সামশেদ। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার এ বার তেমন ভাল নয়। করোনার পর থেকে অনলাইনে বেশি কেনাকাটা করেন মানুষ। ফলে দোকানে এসে কেনাকাটা করার চল তো কিছুটা কমেছে। করোনা আসার আগে পুজোর সময়ে যেমন বিক্রি হত, এখন তার অনেকটাই কমে গিয়েছে।’’
মিনাকারির কাজ করা নানা রঙের আফগানি কানের দুলেরও চাহিদা কম নেই। হার নয়তো কানের দুল—অনেকেই দু’টি জিনিস একসঙ্গে পরেন না। জমকাল শাড়ির সঙ্গে একটি আফগানি ঝোলা দুলই যথেষ্ট। ছিমছাম অথচ সুন্দর সাজ।
এত কিছুর মধ্যে দেদার বিকোচ্ছে সোনালি রঙের গয়না। পুজোর সময়ে সোনা না পরলেও, শাড়ির সাজের সঙ্গে এখনও যে অনেকেই পছন্দ করেন সোনালি গয়না পরতে। বিক্রেতার কথায়, ‘‘পাতলা পিতলের উপর সোনালি রং করা গয়না পছন্দ করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে অনেকে। অধিকাংশের দামই ১০০ টাকার আশপাশে।’’ ওই দোকানে পছন্দ করে নকল সোনার বালা কিনছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা রাইমা বসাক। এত কিছু থাকতে নকল সোনার দিকে মন গেল কেন? রাইমার উত্তর, ‘‘যা দিনকাল পড়েছে, তাতে সোনার গয়না পরে রাস্তায় বেরোনো ঝুঁকির। তার চেয়ে এ সবই ভাল। যত ভিড়েই যাই না কেন, আলাদা করে গয়না সামলানোর ঝক্কি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy