পরিস্ফুট: ‘আর্ট ডেকেড’ দলের প্রদর্শনীর কাজ বিড়লা অ্যাকাডেমিতে
দশ জনের দল আর্ট ডেকেড। কলকাতা ছাড়াও ত্রিপুরা, অসম, হুগলি, বোলপুর, কোচবিহার, রায়গঞ্জের শিল্পীরা পেন্টিং, গ্রাফিকস, ড্রয়িং ও ফোটোগ্রাফির দ্বিতীয় প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। নিঃসন্দেহে একটি ছিমছাম প্রদর্শনী, শিল্পীদের অনেকেই বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিল্পশিক্ষক। অনুশীলন-অভ্যেসের মধ্যে থাকার ফলে তাঁদের কাজে কিছু গুণ তো পরিলক্ষিত হবেই। যদিও পাশাপাশি দুর্বলতা যে ছিল না, তা-ও নয়। মাধ্যমগত দিকটিকে প্রায় সকলেই বেশ আয়ত্তের মধ্যে এনে কাজ করেছেন। ডিসপ্লের ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পূর্ণ মার খেয়েছে ওই মাধ্যমগত দিকটিরই গুরুত্ব না বোঝায়। সদ্য শেষ হওয়া এই প্রদর্শনীর বার্তাও তেমনই।
শিবাশিস দাসের ‘ব্রোকেন ফর্ম অব ব্ল্যাক লাইট’ আটটি ভাগের ডিজিটাল প্রিন্ট। নীচের চারটি মূল কাজের জ্যামিতিকে বিপরীত রূপকে ভেঙে, উপরের সঙ্গে একটি সামঞ্জস্য বজায় রেখে, কম্পোজ়িশনটি ডিসপ্লে করেছেন। দুটি খোলা কালো দরজার নীচের দিকের পাল্লার ফাঁক দিয়ে দেখা দূর পর্যন্ত যেন গনগনে আগুন বিছানো প্রান্তর। এই লাল-কালোর বৈপরীত্যে যেন ডিজ়াইনসদৃশ এক জ্যামিতিক ফর্মেশনকে নানা দিক থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দৃশ্যকল্প তৈরি করেছেন। ফলে ওই জ্যামিতিক ফর্মটিকেই মিশ্র মাধ্যমে ড্রয়িং ও পেন্টিংয়ের মধ্যে ঊর্ধ্বমুখী-নিম্নমুখী রূপবন্ধগুলিকে সন্নিবেশিত করে, চমৎকার এক ডায়মেনশন তৈরি করেছেন। তাঁর ডিজিটাল প্রিন্টের অন্য কাজটি চারটি খড়খড়িওয়ালা বন্ধ জানালার একটি হরাইজ়ন্টাল জ্যামিতিকে প্রাধান্য দিয়ে তোলা আলোকচিত্র। আগের কাজের ব্ল্যাক অংশের সোর্স অব লাইট এখানে অন্য ভাবে দেখানো যেত।
মোনোপ্রিন্ট, লিনো, সেরিগ্রাফের ছোট রঙিন কাজগুলির মধ্যে বর্ণকে অত চাপা স্বরে বেঁধে রাখলেন কেন অঞ্জনা মুখোপাধ্যায়? অতি কম রূপবন্ধ ভাবনা। সুযোগ ছিল অনেক, হাতও মন্দ নয়। প্রিন্ট মেকিংয়ের সেই মজাকেই যেন এড়িয়ে গেলেন।
কাগজে কালো ফেব্রিক রঙে, তুলির লাইনে সচিত্রকরণের মতো কিছু ড্রয়িংয়ে বিশ্বদীপ নন্দী রূপকথার ইমেজের সঙ্গে যেন আলঙ্কারিক ডিজ়াইনকে মিশিয়েছেন। অজান্তেই সেখানে এসে গিয়েছে কিছু আধুনিক অসম্পূর্ণ প্যাটার্ন। ড্রয়িংয়ে আরও জোর দিতে হবে শিল্পীকে।
ড্রয়িংকে প্রাধান্য দিয়ে মৌমিতা সরকার দাসের ‘আই বিলং টু মাই সারাউন্ডিং ওয়ান’ কাজটি অন্যগুলির তুলনায় চমৎকার। উল্লম্ব তিনটি লাল সলিড ফর্মের দু’দিকে আপাত- অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে দু’টি মুখের ঊর্ধ্বাংশ, সম্মুখ ভাগ ও চতুর্দিকে সাজানো কিছু কাপ বা পাত্র। হঠাৎ ডান হাতে ধরা কাপের মতো অংশটি ছবির কৌতূহল ও সংবেদনশীলতাকে রচনার দিক থেকে সামান্য ব্যাহত করেছে। মিশ্র মাধ্যমের ক্যানভাস।
কৌটো, পাত্র, বয়াম, হাতা, খুন্তি, চামচ, প্লেট ইত্যাদি নিয়ে ভিন্ন রকম রচনায় চারকোল-অ্যাক্রিলিকে বেশ ড্রয়িং করেছেন তন্ময় বসাক। ওঁর কাজে কিছু গ্রাফিক কোয়ালিটি নজরে পড়ে।
পুরাণ-লোকশিল্পের আঙ্গিক এবং বিভিন্ন মুখ ও মুখোশ নিয়ে ড্রয়িং ও উডকাটের ক্যানভাস প্রিন্ট আর বিপরীতমুখী ব্লকটি ডিসপ্লে করেছেন শিলাদিত্য বসাক। রচনা ও ট্রিটমেন্ট প্রশংসার দাবি রাখে। সাদা-কালো এবং রঙিন।
অত্যন্ত কাব্যিক পরিবেশ তৈরি করে টেকনিক ও স্টাইলাইজ়েশনে চমৎকার এক অধিবাস্তববাদী রচনায় তাঁর পেন্টিংগুলিকে অন্যতর মাত্রা দিয়েছেন রঞ্জন সরকার। স্পেসের ব্যবহার, ঘোর কালো, লাল, সাদা, হলুদ পটভূমিতে মানুষ, পাখি, সরীসৃপ, মাছ, ফুলদানি ও উদ্ভিদকে আধুনিক রূপারোপের আশ্চর্য এক সংমিশ্রণে দেখিয়েছেন রচনার গভীরতা। পশুপাখিকেও যুক্ত করেছেন স্পেসের বাহুল্যকে ভাঙতে। নিজস্বতা আছে। একটা ইমেজ তৈরি করেছেন এই ড্রয়িংগুলির মাধ্যমে।
সৌগতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গ্রোথ অব নেচার’ ছবিতে অ্যাকোয়াটিন্টের বৈচিত্র ও ভিন্ন পর্যায়, সেই সঙ্গে ইঙ্কিংয়ের ভারসাম্যে রঙের বিন্যাস চমৎকার। খয়েরি রঙের আধাআধি আ লা পুপে পদ্ধতিও অসামান্য। মাতিসীয় ঘরানার ড্রয়িংয়ের সঙ্গে নিজস্বতাও মিশিয়েছেন। দু’টি এচিংই নজরকাড়া। অন্য কাজ হিসেবে তিনি উডকাটের মূল ব্লকটিকেই উপস্থাপিত করেছেন। কাঠের টেক্সচার-সদৃশ কুঁদে তোলা নানা সৌন্দর্য ও উপরিভাগের কালোর সমগ্রতার মধ্যে স্পেস, ড্রয়িং ও রচনার ভাবনাচিন্তাপ্রসূত নির্মাণটি মনে রাখার মতো।
মাধ্যমে গুরুত্ব না দিয়ে ডিসপ্লেতে চমক আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন শ্বেতা হালদার ও শুভ্রজিৎ দত্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy