ফোনের নেশা কাটবে কিসে, জানালেন মনোবিদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মোবাইল এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। ঘুম থেকেই উঠেই মোবাইলে খুটখাট, ফোন আঁকড়েই রাত জাগা। অফিসের কাজ থেকে আরম্ভ করে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ, রোজকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটি, ক্যামেরায় জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলি বন্দি করা, সামাজমাধ্যমের পাতায় নজর— সমস্ত কাজের জন্যই একমাত্র ভরসা মুঠোফোন। কিন্তু সব করতে গিয়ে আবার মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে না তো? এই আসক্তির কারণে প্রয়োজনীয় কাজ পড়ে থাকছে, কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতেও মন পড়ে থাকছে ফোনের পর্দাতেই, সারা ক্ষণ অজান্তেই ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে মনকে শান্ত করবেন কী ভাবে? ফোনের প্রতি এই যে আসক্তি, তার সঙ্গেই বা কী করে বোঝাপড়ায় আসবেন? সেই সব নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব পেজে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল, ‘ফোন আসক্তি’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে প্রশ্ন পাঠানো যায়। বহু চিঠি এসে জমা হয় তাঁর কাছে। বাংলাদেশের বাসিন্দা নাবিলা লিখেছেন, "গত এক বছরে আমি লক্ষ করেছি যে, আমার অতিরিক্ত ফোন আসক্তি রয়েছে। একটু ক্ষণ পর পর ফোনের দিকে চোখ চলে যায়, কোনও নোটিফিকেশন এল কি না। অফিসের কাজের মাঝে বার ফোনে ঘাঁটাঘাঁটি করা মোটেও ভাল দেখায় না কিন্তু তবুও করে ফেলছি। পছন্দের কাজগুলিও এখন ফোনের নেশায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সচেতন হয়ে লক্ষ করেছি, যে কাজগুলিতে আমার দক্ষতা কম, সেগুলি করার সময়ই আমি বেশি বার ফোন ঘাঁটি। যেন ওটুকু আরাম তখন আমার মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয়।’
ফোনের প্রতি আসক্তি বাড়ছে তরুণ প্রজন্মের। এ নিয়ে বার বার সতর্কও করছেন মনোবিদেরা। কোথাও যেন সবটা জেনেও এই আসক্তির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না মানুষ। মধুরিমা লিখেছেন, "বারংবার বিভিন্ন অ্যাপে ঘুরে বেড়াই, আর সেই কারণেই সমস্ত কাজ জমে যায়। তবে ফোন নিয়ে থাকলে যে পুরো মনোযোগ ফোনকেই দিচ্ছি, এমনটাও কিন্তু নয়। তখন আবার মাথার মধ্যে অন্য কিছু চলতে থাকে। তবুও ফোনে রিল দেখার অভ্যাস ছাড়তে পারছি না।’
একই সমস্যার কথা লিখেছেন আহেলিও। তিনি লেখেন, "জয়েন্টের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে অবসর সময় ফোন নিয়ে বসেই অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলছি। ফোন দেখার সময় বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে পড়াশোনার সময়। পড়া জমে যাচ্ছে পাহাড়়ের মতো।"
আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার পথ জানালেন অনুত্তমা। মনোবিদ বললেন, ‘‘মোবাইল আমাদের কাছে বিনোদনের এমন একটি মাধ্যম, যা সাময়িক ভাবে খারাপ লাগা ও খারাপ থাকা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে এই সাময়িক ভাল লাগা, আনন্দ কিন্তু আমাদের পরবর্তী কালে আরও ভাল থাকতে সাহায্য করবে, তা কিন্তু নয়। এমন অনেক কাজ আছে, যা করার প্রক্রিয়াটি আমাদের মোটেও ভাল লাগে না, তবে ঠিকঠাক করতে পারলে তার ফলাফল কিন্তু আমাদের খুশি করে। ঠিক যেমন পড়াশোনা। একটু খারাপ লাগলেই যদি আমরা মনের কথা শুনে ফোন তুলে নিই হাতে, তা হলে কিন্তু ক্ষতিটা কিন্তু শেষমেশ আমাদেরই হবে। আমাদের মনোযোগ এক জায়গায় বেশি ক্ষণ রাখার অভ্যাস চলে যাচ্ছে। কারণ, মনকে নানা উপাদান যোগানোর মতো বিকল্প পৃথিবী আমাদের সামনে তুলে ধরছে ফোন। খেয়াল করে দেখবেন, যখন আমরা এমন এক পরিসরে যাই যেখানে আমাদের চারপাশে তেমন চেনা লোকজন থাকে না, তখন কিন্তু আমরা সেই ফোনেরই আশ্রয় নিই। ভাল না লাগার প্রতি আমাদের আরও সহিষ্ণুতা থাকছে না। এর সমধান খুঁজতে হলে প্রথমেই বলব, আমাদের একটু খারাপ থাকার সঙ্গে সহাবস্থানে আসতে হবে। প্রত্যেককে বলব, যেটা করতে ভাল লাগছে না, তার সঙ্গে আরও একটু সংলাপে আসুন। এখন হয়তো কাজটা আপনার ভাল লাগছে না, তবে সে কাজের ফলাফল ভাল হলে কিন্তু আপনার ভাল লাগবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিল দেখার ফলাফল যখন হাতেনাতে পাবেন, তখন কিন্তু আর আপনার ভাল লাগবে না। এই কথাটা আমাদের গোড়াতেই মাথায় ঢুকিয়ে নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy