সর্দি-জ্বরে ভুগছেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই দোকানে গিয়ে নিজের মতো অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নিলেন। দু’দিনেই অসুখ কমে গেল। ফলে বাকি ওষুধগুলি আর খাওয়া হল না। এমনটা আমরা হামেশাই করে থাকি। কিন্তু এর ফলে কী কী বিপত্তি হয়, সেটা ভেবে দেখি না। প্রথমত, যে অ্যান্টিবায়োটিকটি খেয়েছেন, সেটি আপনার রোগের জন্য যথাযথ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আপনার শরীরে যে জীবাণুগুলি ছিল, সেগুলি পুরোপুরি মরল না। উল্টে আরও শক্তিশালী হল। তৃতীয়ত, এই অ্যান্টিবায়োটিকটি ভবিষ্যতে আপনার শরীরে কাজ না-ও করতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেলে এ ধরনের বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। আলেকজ়ান্ডার ফ্লেমিং অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পরে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তাঁর মতে, এটি এমন একটি ওষুধ, যা সাবধানে ব্যবহার না করলে, মানবজাতির সঙ্কট ডেকে আনবে। ঘটনাচক্রে পেনিসিলিন বাজারে আসার কয়েক বছরে মধ্যেই দেখা যায়, বহু রোগীর মধ্যে পেনিসিলিনের রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হয়েছে। কারণ একটাই, যথেচ্ছ ব্যবহার। সমীক্ষা বলছে, আমাদের দেশেই অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। ফলে রেজ়িস্ট্যান্সও বেশি।
অ্যান্টিবায়োটিকের খুঁটিনাটি
ব্যাকটিরিয়া দমনের হাতিয়ার হল অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু ভুল ব্যবহারে এই হাতিয়ার বুমেরাংয়ের কাজ করে। অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন রোগের জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিক এবং তার পরিমাণ কতটা হওয়া উচিত, তা কিন্তু একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারেন। মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. সুবীর মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমাদের শরীরে ভাল ব্যাকটিরিয়াও আছে। ভুল ওষুধের ফলে সেগুলো মারা যেতে পারে। চিকিৎসক ছাড়া আর কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়, কোন অসুখে কোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন। শরীর একটু ঠিক হয়ে গেলেই অনেকে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু ডোজ় শেষ না হলে ব্যাকটিরিয়া মারা যাবে না। উল্টে অ্যান্টিবায়োটিক পেয়ে তারা নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।’’ এর ফলে কিন্তু একই অসুখ ঘুরে-ফিরে আসে।
অল্প অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ভুল প্রায় সকলেই করে থাকি। তা ছাড়া একই অ্যান্টিবায়োটিক বারবার খেলে সেই ওষুধের রেজ়িট্যান্স তৈরি হয় শরীরের মধ্যে। আমাদের শরীরে যে ভাল ব্যাকটিরিয়া আছে, সেগুলি ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধ গড়ে তোলে, বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এমন ঘটনাও দেখা গিয়েছে যে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার ফলে রোগীর শরীরে প্রায় কোনও অ্যান্টিবায়োটিকই আর কাজ করছে না। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যবহার করতে না পারলে ভাল-মন্দ সব ব্যাকটিরিয়ার মধ্যেই প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হবে।
বয়স্ক ও শিশুদের জন্য
অ্যান্টিবায়োটিক জোরালো ওষুধ। সুতরাং বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বয়স্কদের ইমিউনিটি ক্ষমতা কম। ‘‘বয়স্ক কাউকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার সময়ে তাঁর কী কী রোগ আছে, সেগুলো জেনে নেওয়া আবশ্যিক। কিডনি, হার্টে বা অন্য কোনও সমস্যা থাকলে চিকিৎসক সেই মতো ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন,’’ বলছিলেন ডা. মণ্ডল।
ইমিউনিটি ক্ষমতা শিশুদের মধ্যেও কম। একদম ছোট্ট শিশুকে খুব প্রয়োজন না হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত নয়। অনেক সময়ে অল্প সর্দি-জ্বরে অভিভাবকেরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে চিকিৎসককে অনুরোধ করেন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে। এটি অনুচিত। যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে চিকিৎসক নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন। শিশু চিকিৎসক ডা. অপূর্ব ঘোষ জোর দিলেন ফোনে ওষুধ চাওয়ার প্রবণতা বন্ধের উপরে। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুকে না দেখে কোনও চিকিৎসকই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন না। আর শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধের ডোজ় খুব জরুরি। ডাক্তারের নির্দেশের হেরফের যেন না হয়।’’
অনেক চিকিৎসক আছেন, যাঁরা অ্যান্টিবায়োটিকের বিরোধিতা করেন। তাঁদের মতে, অন্য ওষুধেই রোগ নিরাময় সম্ভব। অনেক উন্নত দেশ অসুখের গোড়াতেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার বিরোধী। ‘‘দেখুন, রোগীর শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে উন্নত দেশে তা সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের পক্ষে সব সময়ে তা সম্ভব হয় না। তাই অনেক সময়ে হয়তো আমরা ঝুঁকি না নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিই,’’ বক্তব্য ডা. ঘোষের।
এটা স্পষ্ট, অসুখ নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহারে সতর্ক হওয়া জরুরি।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
মডেল: স্নেহা বসু; ছবি: শুভজিৎ শীল; মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
লোকেশন ও ফুড পার্টনার: হোটেল স্যাফায়ার, নিউ মার্কেট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy